কলকাতা, 12 ডিসেম্বর: সালটা 1966 ৷ 13 অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তপন সিনহার 'গল্প হলেও সত্যি'। রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তপন ভট্টাচার্য, যোগেশ চট্টোপাধ্যায়, ছায়া দেবী, ভারতী দেবী ও পার্থ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি মনে দাগ কাটে আরও এক চরিত্র, যাঁর নাম ছিল কৃষ্ণা ৷
বাড়ির ফাই ফরমাশ খাটতে খাটতে কৃষ্ণার শরীরের বাদামী রঙে কালচে ছাপ পড়েছিল ৷ যদি না ধনঞ্জয় থাকত তাহলে কি হত তাঁর! ছবিতে কৃষ্ণা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রী কৃষ্ণা বসু। তাঁর বিপরীতে পার্থ মুখোপাধ্যায়। এটিই ছিল কৃষ্ণা বসুর ফিল্মি কেরিয়ারের শেষ ছবি।
মুখোমুখি গল্প হলেও সত্যির কৃষ্ণা (ইটিভি ভারত) এরপরেই তিনি হয়ে গিয়েছিলেন মন্দিরা চৌধুরী। কৃষ্ণা বসু থেকে মন্দিরা চৌধুরী হয়ে ওঠার ইতিহাসটাও বেশ লম্বা। 'গল্প হলেও সত্যি' ছবিতে কৃষ্ণা নামটি বদলাতে চাননি পরিচালক তপন সিনহা। তাই সেই নামই ছিল চরিত্রের। এরপরেই অভিনেত্রীর বিয়ে ঠিক হয়। শ্বশুরবাড়ির বিয়ের কার্ডে দেখেন তাঁর নাম পাল্টে মন্দিরা করে দিয়েছে হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বিষয়টা হজম করতে বেশ সময় লেগেছিল। ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী কৃষ্ণা তুলে ধরেন অভিনয় ও ব্যক্তিজীবনের কথা ৷ তিনি বলেন, "আমি আট বছর বয়স থেকে অভিনয় করি। অভিনয় ছেড়ে দিতে কষ্ট হয়েছিল। অনেক কন্ট্র্যাক্ট বাতিল করতে হয়েছিল ৷"
তখন সময়টাও আজকের মতো ছিল না। মেয়েরা আজকের মতো জোরালো প্রতিবাদ তখন করতেন না বা করতে দেওয়া হত না। কণ্ঠরোধ করে দেওয়া হত মেয়ের। ফলে সিনেমার পরিচিত কৃষ্ণা হয়ে ওঠেন মন্দিরা । তাঁকে এখন এই নামেই চেনেন সকলে ৷ চলতি বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তপন সিনহার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় ৷ পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন শিল্পী কলাকুশলীদের সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মন্দিরা চৌধুরী (কৃষ্ণা) একজন। মঞ্চে তাঁকে মন্দিরা চৌধুরী নাম ধরেই ডাকা হয় এদিন। কৃষ্ণা নাম ধরে নয়।...
তিনি আরও বলেন, "বাবার ইচ্ছেতেই এসেছিলাম অভিনয়ে। বাবা, শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে কাজ করেছেন ৷ পরে আমার দাদুর অমতে অভিনয় চালিয়ে যেতে পারেননি। ভেবেছিলেন মেয়েকে দিয়ে স্বপ্নপূরণ করবেন।" বাবার ইচ্ছা খানিকটা পূর্ণ হলেও পরিপূর্ণ হয়নি। মেয়েকেও ছাড়তে হয় অভিনয়। তবে, এখন সিনেমা, সিরিয়াল বা ওটিটি থেকে অফার এলে করতে রাজি কৃষ্ণা দেবী।