নয়াদিল্লি, 18 সেপ্টেম্বর: এক দেশ এক ভোট প্রস্তাবে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৷ পাঁচ বছর অন্তরই সারা দেশে লোকসভা এবং রাজ্যের বিধানসভা ভোট হওয়া উচিত ৷ বুধবার ক্যাবিনেট বৈঠকের পর এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ৷ একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল সরকার ৷ সেই কমিটি একাধিক রাজনৈতিক দল এবং ভারতের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ৷ সেই রিপোর্ট দেখেই এদিন সর্বসম্মতিক্রমে এনডিএ সরকারের ক্যাবিনেটে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে বলেও জানান অশ্বিনী বৈষ্ণব ৷ মন্ত্রী আরও জানান, আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।
এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, "দুই পর্যায়ে প্রয়োগ হবে ৷ প্রথম দফায় লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট হবে ৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চায়েত, পুরসভা এবং লোকালবডির ভোট একসঙ্গে হবে ৷ সাধারণ নির্বাচেনর 100 দিনের মধ্যে হবে এই দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট ৷ এমনটাই কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে ৷ এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন উন্নতি হবে এবং অর্থনৈতিকভাবেও দেশ চাঙ্গা হবে ৷" প্রায় প্রতি বছরই দেশে কোনও না কোনও ভোট অনুষ্ঠিত হয় । এক দেশ এক ভোটের ফলে তা থেকে রেহাই পাবে আমজনতা এমনটাই মত ক্যাবিনেটের ৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এদিন 'এক দেশ, এক নির্বাচন' শীর্ষক কমিটির যে সুপারিশ অনুমোদন করেছে তা নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, "আমরা এর সঙ্গে সহমত নই। এক দেশ এক নির্বাচন গণতন্ত্রের পক্ষে ভালো হতে পারে না। আমরা যদি আমাদের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চাই তাহলে যখন প্রয়োজন তখন নির্বাচন হওয়া দরকার। এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব ৷" যার পাল্টা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, "বিরোধীরা অভ্যন্তরীণ চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে ৷ কারণ পরামর্শদানের প্রক্রিয়া চলাকালীন 80 শতাংশের বেশি মানুষ তাদের ইতিবাচক সমর্থন দিয়েছেন ৷ বিশেষ করে তরুণরা এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে।"
এক দেশ এক ভোট- প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক'ও ব্রায়েন । তাঁর দাবি বিজেপি আবারও রাজনৈতিক নাটক করছে । এক দেশ এক ভোট নীতি প্রণয়নের অভিপ্রায় থাকলে হরিয়ানা ও জম্মু কাশ্মীরের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন ঘোষণা করা হল না কেন ? এর সম্ভাব্য কারণও জানান রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ । তিনি জানান, মহারাষ্ট্র সরকার জুন মাসে মেয়েদের জন্য বিশেষ প্রকল্প শুরু করে । সেই সূত্র ধরে অগস্ট মাসে রাজ্যের মেয়েরা প্রথমবার টাকা পেয়েছেন । দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এসে পৌঁছবে অক্টোবর মাসে । নির্বাচনের আগে এভাবে সরকারি প্রকল্পের টাকা পাঠিয়ে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা হচ্ছে ।
অন্যদিকে, এই নীতিকে স্বাগত জানায় বঙ্গ বিজেপি। এমনটাই জানান রাজ্যসভা সাংসদ মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "আজ ক্যাবিনেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগতও জানায় বিজেপি।" শমিকের আশা সর্বব্যাপী এবং সর্বস্পর্শী এই সিদ্ধান্ত সারা দেশের মানুষ গ্রহণ করবেন। ভারতীয় জনতা পার্টির তৈরির অনেক আগে ভারতীয় জনসংঘের সময় থেকেই এই দাবিটি উঠেছিল। তাই দলীয় কর্মী হিসেবে এইটা তার কাছেও একটি আনন্দের দিন এবং ঐতিহাসিক দিন বলেই জানান তিনি।