হায়দরাবাদ :মার্কিন মুলুকে 60 শতাংশেরও বেশি মানুষ অন্তত একবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ৷ যদিও কোভিডে সংক্রমিতের সংখ্যা আরও বেশি বলেই মনে করা হয়। কারণ উপসর্গহীন সংক্রমণের গণনা করা মুশকিল ৷ যদিও বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত যে উপসর্গহীন সংক্রমণ খুবই সাধারণ বিষয় ৷
তবে এমন ব্যক্তি যাঁরা কোভিড সংক্রমিত হয়েছিলেন অথচ বুঝতে পারেননি তাঁদের ধরে নিলেও এমন বেশকিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা কখনওই কোভিড আক্রান্ত হননি ৷ কেন কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কোভিড কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি এই প্রশ্ন মহামারীর সময় থেকেই চলে আসছে ৷ তবে বিজ্ঞান আরও অনেক কিছুর মতো, এরও কোনও সহজ উত্তর (এখনও) দিতে পারেনি । আমরা সম্ভবত এক্ষেত্রে মার্ভেল-এস্ক সুপার পাওয়ার তত্ত্বকে খারিজ করতে পারি । তবে বিজ্ঞান এবং ভাগ্য উভয়েরই ভূমিকা রয়েছে। আসুন দেখা যাক :
সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যা হল এই ধরনের মানুষেরা কখনও ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেনি । এটি অবশ্যই এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে যাঁরা মহামারী চলাকালীন একেবারে নিয়ম মেনে নিজেদেরকে রক্ষা করে গিয়েছেন । গুরুতর রোগের ঝুঁকিতে থাকা মানুষ,(যেমন দীর্ঘস্থায়ী হার্ট বা ফুসফুসের সমস্যা) তাঁদের জন্য গত কয়েক বছর ভীষণ কঠিন ছিল। তাঁদের অনেকেই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বন করেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
যেভাবে মারাত্মক কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঘটেছে এবং বিশেষ করে অতি সংক্রমণযোগ্য ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে এটা অসম্ভব যে কেউ অফিস-আদালত বা স্কুল-কলেজে যাচ্ছেন, কেনা কাটা করছেন অথচ তিনি একবারও ভাইরাসের সম্মুখীন হচ্ছেন না ৷ তবুও এমন কিছু মানুষ আছেন যেমন অনেক হাসপাতালের কর্মী বা চিকিৎসা কর্মীরা যাঁরা নিয়মিত কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছে এসেছেন অথচ একবারও কোভিড আক্রান্ত হননি ৷
আমরা বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে জানি যে ভ্যাকসিনগুলি শুধুমাত্র গুরুতর রোগের ঝুঁকিই কমায় না একইসঙ্গে পরিবারের সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দিতে পারে । তাই অবশ্যই টিকা নেওয়া আপনার ঘনিষ্টদের সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে ।
কিছু মানুষ কেন আক্রান্ত হননি তা নিয়ে সামনে আসা কিছু তত্ত্ব(Why Some People do Not Have COVID):
কেন কিছু লোক সংক্রমণ থেকে বেঁচে যান তা নিয়ে যে যে তত্ত্ব সামনে এসেছে তার একটি হল, যদিও তাঁরা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন, এটি শ্বাসনালীতে প্রবেশ করার পরেও সংক্রমণ ঘটাতে ব্যর্থ হয় । সার্স-কোভ-2 কোষে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য যে রিসেপ্টর প্রয়োজন তার অভাবেও এটি হতে পারে। একবার একজন ব্যক্তি সংক্রমিত হয়ে গেলে, গবেষকরা শনাক্ত করেছেন যে প্রতিরোধ ক্ষমতার পার্থক্য লক্ষণগুলির তীব্রতা নির্ধারণে ভূমিকা পালন করে । এটাও সম্ভব যে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমে এত দ্রুত ভাইরাসটিকে বাধা দেয় যে কোনও বড় প্রভাব ফেলার সুযোগই ভাইরাসটি পায় না ।
সংক্রমণের প্রতি আমাদের ইমিউন রেসপন্স কতখানি হবে তা নির্ভর করে মূলত আমাদের বয়স এবং আমাদের জেনেটিক্সের ওপর । স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অবশ্যই এক্ষেত্রে সাহায্য করে । উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কিছু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে । পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া আমাদের শরীরের আক্রমণকারী প্যাথোজেনগুলির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতার উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে । গুরুতর করোনার অন্তর্নিহিত কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রায় 20% ক্ষেত্রে একটি জেনেটিক কারণকে চিহ্নিত করেছেন।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় গবেষকরা একজন চিহ্নিত করেন যিনি কখনও করোনা সংক্রমিত হননি । গবেষেকরা এই ব্যাক্তির শরীরে কিছু আকর্ষণীয় জেনেটিক মিউটেশন আবিষ্কার করেছেন ৷ যার মধ্যে অনেকগুলি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার সঙ্গে জড়িত ছিল । ভাইরাসের উপস্থিতি অনুধাবন করার সঙ্গে সঙ্গেই জিনে যে মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে তা পূর্বে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেখা গিয়েছিল ।
আরও পড়ুন : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় দুর্বলদের জন্যই বুস্টার ডোজ : হু
তবে করোনার বিরুদ্ধে এভাবে অজেয় থাকা কতটা দীর্ঘস্থায়ী তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । আপনি যদি আজ পর্যন্ত কোভিড এড়াতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে হয়ত আপনার কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার জন্য একটি স্বাভাবিক শিল্ড রয়েছে , অথবা সম্ভবত আপনি ভাগ্যবান । তবে যাই হোক এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ কারণ এর সম্পর্কে আমরা এখনও খুব কম জানি।