বিতর্কে বারাসতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী হাবরা, 24 নভেম্বর: বাংলাদেশিদের এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আহ্বান জানিয়ে বিতর্কে জড়ালেন বারাসত সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারপার্সন রত্না বিশ্বাস । তাঁর একটি বক্তব্যের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায় । তাকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত ৷ এই নিয়ে তৃণমূলকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা ৷
ভাইরাল ভিডিয়োয় তৃণমূল নেত্রী রত্না বিশ্বাসকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "এখানে অনেক বাংলাদেশিরা বসবাস করেন । আর মাত্র তিনমাস । তারপরেই লোকসভার ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে । ভোটার লিস্টে নাম তুলতে কারও কোনও অসুবিধা হলে জাকিরদার অফিসে যোগাযোগ করুন । একটি ভোটও নষ্ট হোক, সেটা আমরা চাই না ।"
শাসক নেত্রীর এই ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলা রাজনীতির অন্দরে । বিরোধীরা এই ভাইরাল ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছে । কার্যত শাসক দলকে নিশানা করেছেন তাঁরা । যদিও এ নিয়ে বিরোধীরা অযথা জলঘোলা করার চেষ্টা করছেন বলে সাফাই দিয়েছেন তৃণমূল নেতা জাকির হোসেন ।
তৃণমূল কংগ্রেসের ওই নেত্রীর যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, সেটি হাবরা 1 নম্বর ব্লকের পৃথীবা পঞ্চায়েত এলাকার । ভিডিয়োটি একদিন আগের ।বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার । সেই উপলক্ষে হাবরা 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা জাকির হোসেনের দলীয় কার্যালয়ে এ দিন এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল । সেই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন পৃথীবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, বর্তমানে বারাসত সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারপার্সন রত্না বিশ্বাস । তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলীয় নেতা জাকির হোসেন-সহ একঝাঁক নেতা-কর্মীর সামনেই বাংলাদেশিদের এ রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম তোলার আহ্বান জানান ৷
সেখানে তিনি আরও বলেন, "তিনমাস পরেই লোকসভার নির্বাচন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই কথায় বলেছেন । ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে সকলকে ৷" এরপরই তাঁর সংযোজন, "আমরা জানি ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ চলছে এখন । এখানে, জাকিরদার নির্বাচনী এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বসবাস করেন । জাকিরদা লিংকটা ভালো করতে পারেন । বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এখানে এসেছেন, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে যদি তাঁদের লিংকের কোনও সমস্যা হয়, সেটা জাকিরদা ভালো করে দেবে । সবাই যোগাযোগ করবেন এই অফিসে এসে । আর যাঁরা নতুন ভোটার, তাঁদের বাবা-মার লিংক দেখিয়েই নাম তুলে নিতে পারবে । এই কাজটা অতি দ্রুত করবেন । আমরা চাই না একটি ভোটও বাইরে থাকুক ৷"
এ দিকে, ভাইরাল ভিডিয়োয় যে জাকিরদার কথা বারবার বলা হচ্ছে, তিনি আদতে তৃণমূলের জাকির হোসেন । একসময়ে তিনিও হাবরা 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন । ফলে তাঁর নাম দলেরই নেত্রীর মুখে উচ্চারিত হওয়ায় অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে ওই তৃণমূল নেতাকেও । যদিও এ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী রত্না বিশ্বাসের পাশেই দাঁড়িয়েছেন জাকির হোসেন ।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, "আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ বাসিন্দাই 1960-65 সালের পরে ওপার বাংলা থেকে এসে বসবাস করছেন । 90 সালের আগে ভোটার তালিকায় নাম ছিল, কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, ভোটার তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ গিয়েছে । সেই সময়ের ভোটার তালিকাগুলি আমরা ইন্টারনেট থেকে বের করে রেখেছি, যাঁর যাঁর প্রয়োজন তাঁদের দেওয়ার জন্য । সেই কথাটাকেই উনি 'লিংক করিয়ে দেবেন' বলে বলতে চেয়েছেন ৷" তৃণমূল নেতা জাকির হোসেনের মতে, "আমরা পরিষেবা দিয়ে থাকি । কোনও বেআইনি কাজ করি না । বাংলাদেশি কথাটা না বললেই ভালো হত । মুখ ফসকে উনি বলে ফেলেছেন ৷"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এই রাজ্যে তৃণমূলের আইনও থাকবে । আবার তৃণমূলের শাসনও থাকবে । এই দুটো একসঙ্গে হতে পারে না । শাসকদলের নেতানেত্রীরা বেআইনি কাজ করতে অভ্যস্ত । শুধু টাকা পেলেই কেল্লাফতে ৷"
আরও পড়ুন:
- 'বিধানসভা কি স্কুল?' হাজিরা খাতায় সই করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ফিরহাদের!
- আমডাঙায় তৃণমূল নেতা খুনে ডোমকল থেকে গ্রেফতার খাঁচাওয়ালা আফতাব
- খোদ মহকুমাশাসকের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট করে সোশাল মিডিয়ায় প্রতারণা, অভিযোগ দায়ের