দত্তপুকুর, 4 সেপ্টেম্বর: "পুলিশ প্রশাসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাপের নয় ৷ বগটুইয়ের মতো দত্তপুকুরেও মামলা সাজাতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, তাঁর সরকার চাইছে না বিস্ফোরণ কাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের সাজা হোক।" দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে সোমবার দলীয় এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে এভাবেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এদিন বিস্ফোরণ কাণ্ডে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি-সহ একাধিক দাবিতে পথে নামে লাল ঝাণ্ডা শিবির। বিকেলে দত্তপুকুরের জগন্নাথপুর থেকে মিছিল করে বিস্ফোরণস্থল মোচপোল গ্রাম পর্যন্ত যায় সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা। সেই কর্মসূচিতেই সামিল হয়েছিলেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি ছাড়াও মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, দলের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, জেলার নেতা আহমেদ আলি খান, পলাশ দাস প্রমুখ।
মিছিল শুরুর আগে দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ড নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলেন মহম্মদ সেলিম। রীতিমতো বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। সেলিম বলেন, "বিস্ফোরণ কাণ্ডে তৃণমূলের বড় বড় মাথা, নেতা এবং তোলাবাজরা জড়িত।তাই, অপরাধীদের না ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাদের নিজেদের ছত্রছায়ায় রেখে দিয়েছে। যার ফলে মোচপোল গ্রামে এই ধরণের বেআইনি বোমার কারখানা, বোমা-পিস্তল ও বিস্ফোরকের কারবার বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত স্থানীয় থানার পুলিশ না অপরাধীদের খুঁজছে। আর না গ্রেফতার করছে তাদের। এমনকী, বিস্ফোরণে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণের দেওয়ার কোনও উদ্যোগও নিচ্ছে না প্রশাসনের আধিকারিকরা।" এরপরই বগটুই কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুর চড়ান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সেলিমের কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুইয়ে যেমন কেষ্ট (অনুব্রত মণ্ডল)-কে পাশে নিয়ে মামলা সাজিয়ে ছিলেন। ঠিক দত্তপুকুরেও একইভাবে মামলা সাজাচ্ছেন তিনি। এটা যতদিন করব, ততদিন আমরা অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাব। বেআইনি কারবার বন্ধ করার দাবিতেও সরব হব আমরা।"
আরও পড়ুন: সনাতন ধর্ম নিয়ে উদয়নিধি স্ট্যালিনের মন্তব্য সমর্থন করলেন না মমতা
এদিকে, দত্তপুকুর বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে শাসকদলের যোগ রয়েছে বলেও এদিন দাবি করেছেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এখানে শুধু বোমা-পিস্তলের কারবার নয় ! তৃণমূল নেতারা হেরোইন, গাঁজা এবং বেআইনি মদের ব্যবসাও খুলে বসেছেন। তাই, একটা ফাঁড়ির ওসি কিংবা থানার আইসি-কে সাসপেন্ড করলেই চলবে না। তৃণমূল বড় বড় মাথা, নেতা এবং তোলাবাজ-দেরও ধরতে হবে।" জেলা পুলিশ সুপারের মন্তব্যের প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, "উনি যদি ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের লোক হয়ে থাকে তাহলে আগে তাঁকে তদন্ত করতে হবে। এতো কুকুর নয়, যে শুকে বলে দেবে! নবান্ন থেকে যা গন্ধ বেরবে তাই বলে দেবে! তাই, যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে রাস্তায় নামছে, তাঁদের জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।এখানে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বানানোর পিছনে পুলিশ প্রশাসনের একাংশের মদত রয়েছে। যারা মারা গিয়েছে তাঁদের প্রতি কোনও মায়া দয়া নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের।" অন্যদিকে,দত্তপুকুর বিস্ফোরণের ঘটনাকে তৃণমূল সরকার লঘু করার চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম।