পুরুলিয়া, 18 অক্টোবর : নদীতে ধস রুখতে একের পর এক নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ । CCTV বসানো থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিক রেখে নজরদারি সবই চলে রাজ্যের বিভিন্ন নদীচরে । তাতেও কি রোখা যায় ধস? না, যায় না । মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া এমন অনেক জেলায় অনেক গ্রামের নাম উঠে আসবে যা আস্ত শেষ হয়ে গেছে নদীর গ্রাসে । দামোদরের মতো অনেক জায়গায় আবার যেখান সেখান থেকে বালি তুলতে তুলতে নদীর গতিপথই সংকীর্ণ হয়ে গেছে । সরকারিভাবে এলাকাগুলিতে বালি তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও মেলে বালি । কারণটা চোরাই বালির ব্যবসা । আর এই ব্যবসার ফলে রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে বালি তুলে বিক্রি হয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় । বালি তোলা নিষেধ তাহলে কোথা থেকে আসছে এই বালি? কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে বালি তোলা? প্রশ্ন করা হলে বালি মাফিয়ারা বলে, বালি লাগলে দিতে পারি । কী ভাবে মিলবে ছাড়পত্র ? খদ্দের (সাংবাদিক)-এর কাছে অনেক দ্বিধার পর তারা জানায়, প্রশাসনিক আধিকারিকরাই টাকা নেন । এক গাড়ির জন্য 900 টাকা । এ যেন রক্ষকই ভক্ষক ।
বালি মাফিয়াদের কাছে ঘুষ নিয়ে পকেট ভরাতে ব্যস্ত প্রশাসনিক কর্তারা । তাই শত চেষ্টা করলেও বালি চুরিতে রাশ টানতে পারছেন না খোদ পুরুলিয়া জেলাশাসক । প্রশাসনের নির্দেশ মতো বর্ষার সময় থেকেই টানা তিনমাস বালি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুরুলিয়ায় । কিন্তু তা আর মানবে কে? হাজার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কংসাবতী নদীর চর থেকে নিয়মিত বালি চুরি হয়েই চলেছে । একদিকে পুরুলিয়া জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, অগাস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । অথচ ETV ভারতের ক্যামেরায় ধরা পড়ল বালি চুরির সেই ভিডিয়ো ।
"রয়্যালটি দিতে হয় BLRO"-কে, বলছে বালি মাফিয়া - sand steal in Purulia
বালি মাফিয়াদের কাছে ঘুষ নিয়ে পকেট ভরাতে ব্যস্ত প্রশাসনিক কর্তারা । এমনই বলছে খোদ বালি মাফিয়ারা ।
খদ্দের সেজে ETV ভারতের প্রতিনিধি বালি কিনতে যান পুরুলিয়ার কাঁসাই নদীর ডাবর বলরামপুরের ঘাটে । সেখানে এক বালি মাফিয়ার সাথে কথা বলেই উঠে এল বালি চুরির আসল রহস্য । 25-30 গাড়ি বালির বরাত পেয়েই বালি মাফিয়ারা জানায়, ট্রাক্টর পিছু বালির দাম 2500 টাকা । কারণ এই টাকার একটা অংশ দিতে হয় প্রশাসনের লোকজনদের । ট্রাক্টর পিছু 900 টাকা রয়্যালটি দিতে হয় BLRO-কে । ব্যাস তাহলেই আর কোনও বাধা থাকে না, এমন কী পুলিশও কোনও বাধা দেয় না । যেখানে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলছেন নদী থেকে বালি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । তাহলে BLRO কীসের নামে রয়্যালটি নিচ্ছেন? বালি যে নদী থেকে উঠছে তা ক্যামেরায়ও ধরা পড়েছে । এমন কী ট্রাক্টর চালকও মেনে নিয়েছে তারা চুরি করছে বালি । ট্রাক্টরে লোড করা বালি থেকে ঝরে পড়ছে নদীর জল, তা দেখলেই বোঝা যায় সদ্য নদীঘাট থেকে তোলা হয়েছে সেটি । প্রশাসনের কড়া নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করেই পুরুলিয়ার কাঁসাই নদী থেকে নিয়মিত বালি চুরি হচ্ছে । এই চুরি এবং এভাবে ধীরে ধীরে ধংসের মুখে নিয়ে যাওয়ার অভিসন্ধি যে কবে বন্ধ হবে তা বলা মুশকিল কারণ সরষের মধ্যেই যে লুকিয়ে রয়েছে ভূত ।
এবিষয়ে জেলাশাসককে অবগত করলে তিনি বলেন, "আপনি বলছেন আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব । যদি আমাদের কোনও আধিকারিক এতে জড়িত থাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব ।"