পাঁশকুড়া, 13 ফেব্রুয়ারি : অবশেষে চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান শাহ খুনে জড়িত পলাতক তৃণমূল নেতা শীতল মান্নার স্ত্রী কাকলি মান্না । কাকলিদেবী মাইসোর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন । সম্প্রতি পাঁশকুড়া ব্লকের বিডিও ধেনদুপ ভুটিয়ার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন । আজ বিডিও অফিসে শুনানির মাধ্যমে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় । পদত্যাগের কারণ হিসেবে কাকলিদেবী শারীরিক অসুস্থতা ও তাঁর পরিবারের ওপর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অত্যাচারকে দায়ী করলেও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ।
কুরবান শাহ খুন : পঞ্চায়েত সদস্যার পদ ছাড়লেন তৃণমূল নেতা শীতল মান্নার স্ত্রী - কুরবান শাহ খুন
কুরবান শাহ খুনে অভিযুক্ত শুটার তাসলিম আরিফ পুলিশকে জানায়, স্থানীয় তৃণমূল নেতা শীতল মান্না তাকে আশ্রয় দিয়েছিল ৷ একথা প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের থেকে ক্রমাগত হুমকি ও চাপ আসতে থাকে বলে অভিযোগ পলাতক শীতলের স্ত্রী কাকলি মান্নার ৷ বাধ্য হয়ে তিনি পঞ্চায়েত সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বলে জানিয়েছেন ৷
গতবছর দুর্গাপূজার নবমীর রাতে কুরবান শাহকে নিজের দলীয় কার্যালয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা । এরপর পুলিশি তদন্তে ধরা পড়ে খুনে অভিযুক্ত খড়্গপুরের বাসিন্দা শুটার তাসলিম আরিফ ওরফে রাজা । ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় রাজা পুলিশকে জানায়, কুরবানকে খুনের জন্য এলাকায় আশ্রয় দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা উপপ্রধান শীতল মান্না । ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় । তারপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান কুরবান খুনে অভিযুক্ত শীতল মান্না । এলাকার নেতাকে খুনের পেছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা জড়িত রয়েছে, একথা প্রকাশ্যে আসতেই শীতল মান্নার পরিবারের ওপর আক্রমণ শুরু করে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা । মাইসোর রাজ শহরে শীতলের ফুলের গোডাউন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় । এছাড়াও প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে বাড়িতে দুষ্কৃতীরা ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে । অভিযোগ জমিতে চাষবাসও বন্ধ করে দেওয়া হয় । এই অবস্থায় আজ শীতল মান্নার স্ত্রী কাকলি মান্না বিডিওর কাছে তাঁর পদত্যাগ পত্র জমা দেন । পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন বিডিও ধেনদুপ ভুটিয়া । তিনি জানান, সমস্ত প্রক্রিয়া মেনেই কাকলিদেবী আমার কাছে আবেদন জানিয়েছেন । সরকারিভাবে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই তা গৃহীত হবে ।
পদত্যাগপত্রে পঞ্চায়েত সদস্য কাকলি মান্না শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখালেও পরিবারের উপর ঘটে যাওয়া দলীয় স্থানীয় নেতৃত্বের অত্যাচারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন । তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী কুরবান শাহ খুনের ঘটনায় জড়িত আমি বিশ্বাস করি না । যদি ঘটনায় জড়িত থাকে তাহলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আমাদের ফুলের আড়ত ভেঙে দিয়েছে । বাড়ির ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে । জমিতে চাষ করতে বারণ করেছে । আমি পঞ্চায়েত সদস্যা ৷ আমি তো কোনও দোষ করিনি ৷ তা সত্ত্বেও আমাকে এলাকার কোনও বৈঠক বা মিছিলে ডাকা হয় না ৷ এমনকি খবর দেওয়া হয় না । আমার পরিবারের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি । তাই আমি আজ পদত্যাগ করেছি ।’’ যদিও ওই তৃণমূল সদস্যের পরিবারের উপর অত্যাচারের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মালিক । তিনি জানিয়েছেন, কাকলিদেবী কোনওদিনই তাঁর পরিবারের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ ব্লক নেতৃত্ব বা তাঁদের কারওর কাছে জানাননি । ওনার পরিবারের ওপর দলের কেউ কোনও অত্যাচার চালায় নি । কি কারণে পদত্যাগ করেছেন, তা আমাদের জানা নেই । দলকে না জানিয়েই কালিমালিপ্ত করার জন্য এই কাজ করলেও করে থাকতে পারে ।