তমলুক,১৩ আগস্ট : হিন্দি সিনেমা 'বাবুল'-এর কাহিনী এবার বাস্তবে । ছেলের মৃত্যুশোক বুকে চেপে বিধবা পুত্রবধূর বিয়ে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন শ্বশুর । শুধু তাই নয়, কন্যাদানের যৌতুক হিসেবে নানা সামগ্রী দিয়ে আশীর্বাদও করলেন নবদম্পতিকে ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার বাড়জিশুয়ার মুকুন্দ মাইতির এমন পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন মহলের ৷ বিধবা পুত্রবধূর সম্বন্ধ ঠিক করে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন তিনি ৷ পেশায় সোনার কারিগর মুকুন্দবাবুর ছেলের নাম অমিত ৷ আট মাস আগে তিনি মাইসুরু থেকে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে মারা যান ।
ছেলে মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী উমাকে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন মুকুন্দবাবু । তিনি উমাকে নতুন জীবন শুরু করার কথা বলেছিলেন । পাঁশকুড়া ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর পটনার বাসিন্দা স্বপন মাইতির সঙ্গে বিধবা পুত্রবধূ উমার সম্বন্ধ করেছিলেন মুকুন্দবাবু । গতরাতে পুরোনো পাঁশকুড়া বাজারের ভবতারিণীর মন্দিরে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে উমা- স্বপনের চার হাত এক করে দেন তিনি । মুকুন্দবাবুর এই উদ্যোগে বিস্মিত অনেকেই ৷ তাঁদের বক্তব্য, মুকুন্দবাবু যে কাজ করেছেন , তা অনেক শিক্ষিত মানুষও করেন না ৷
ভিডিয়োয় শুনুন মুকুন্দ মাইতির বক্তব্য বৌমার বিয়ে দিয়ে মুকুন্দবাবু বলেন, "ছেলে মাইসুরু থেকে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৷ এরপর তার মৃত্যু হয় । ঘটনার সময় আমরা খুবই ভেঙে পড়েছিলাম । কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনকে শক্ত করে বৌমাকে নিজের কাছেই রেখেছিলাম । মাঝে একবার বৌমা চার মাসের জন্য বাপের বাড়িতে গেছিল । কিন্তু, সেখানে থাকতে পারেনি ৷ আবার ফিরে এসেছিল । ওকে আমি মেয়ের মতোই ভালোবাসতাম । এভাবে একা বাঁচা যায় না । তাই ওর দীর্ঘ ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । প্রথমে বৌমা রাজি হয়নি । সকল আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে ওকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছে । ছেলে হারানোর পর মনকে শক্ত করে ফের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি । সরকার মহিলাদের কথা ভেবে বহু প্রকল্পের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে । তাও মেয়েরা পিছিয়ে থাকছে । আমি শুধু ওর ভবিষ্যতের দিনগুলোর কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । "
শ্বশুরের চেষ্টায় নতুন স্বামী, সংসার পেয়ে ভীষণ খুশি উমাও । বলেন, "বিয়ের পর থেকে শ্বশুরমশাইকে বাবা হিসাবে দেখে এসেছি । স্বামীর মৃত্যুর পর বাপের বাড়িতে মাস চারেকের জন্য চলে গেছিলাম । কিন্তু এখানে বাবার অসুবিধা হবে একথা ভেবেই ফিরে এসেছিলাম । সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে আমার শ্বশুরমশাই বাবা হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ সাহস জুগিয়েছিলেন । তাই বাবা হিসেবে তিনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রথমে মানতে না চাইলেও পরবর্তীকালে তা মেনে নিয়েছি । "
উমাকে পেয়ে খুশি স্বপনও । বলেন, "প্রত্যেকেই এই পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নেন । আমি নিজেই ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । তা ছাড়া বাড়িতে মা অসুস্থ । ও বাড়িতে এলে অনেক সুবিধে হবে । ভবিষ্যতে আরও ভালো ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সুখে দিন কাটাব । "