পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বর্ধমান দক্ষিণে জয়ের ধারা কি বজায় রাখতে পারবেন খোকন দাস ? - খোকন দাস

বর্ধমান দক্ষিণে কি জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারবে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি বিজেপির পক্ষেও বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্র নিজেদের দখলে আনা একপ্রকার চ্য়ালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিজেপি। আর তাতেই খেলা জমে উঠবে বলে মনে করছে বর্ধমান দক্ষিণের ভোটাররা।

Khokhon Das in Bardhaman Dakkhin seat for Election
খোকন দাস

By

Published : Mar 6, 2021, 1:47 PM IST

বর্ধমান, 6 মার্চ : বাম দূর্গ হিসেবে পরিচিত বর্ধমান। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। একটা সময় বলা হত বাম নেতাদের কথায় বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায় সেখানে। 2011 সালে রাজ্য়ে পালাবদলের সময় সেই বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। বিপুল ভোটে বাম আমলের মন্ত্রী নিরুপম সেনকে হারিয়ে দেন রবিরঞ্জন ভট্টাচার্য। 2016 সালেও নির্বাচনে ভোটে দাঁড়ান রবিরঞ্জনবাবু। এবং জিতেও যান। এবার সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন খোকন দাস। তিনি কি বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারবেন?

বর্ধমান দক্ষিণ একটি অন্য়তম গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র। একদিকে সংখ্য়ালঘু ভোট অন্য়দিকে বিস্তীর্ণ এলাকায় শাসক দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। সব মিলিয়ে সবুজ গেরুয়া উভয় পক্ষই চাইছে ওই কেন্দ্রটি নিজেদের দখলে রাখতে। এদিকে বিজেপিও লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল পাওয়ায় বেশ উজ্জীবিত বিজেপির নেতা কর্মীরা।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক 2016 সালের নির্বাচনে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে কোনও দল কত ভোট পেয়েছিল। জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্য়ায়। তাঁর প্রাপ্ত ভোট 91882। তার পরেই ছিল সিপি আই এম প্রার্থী আইনুল হক। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল 62444 । এবং বিজেপি ছিল চতুর্থ স্থানে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল 16192।

আরও পড়ুন- "বেশি টাইম দিতে পারব না", সেই মমতাই ঘরভাড়া নিলেন নন্দীগ্রামে

যদি লোকসভার নিরিখে বিচার করা হয় তাহলে দেখা যাবে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি চতুর্থ স্থান থেকে পৌঁছে গিয়েছে প্রথমে। তাদের প্রাপ্ত ভোট 83963 এবং দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা এবং তৃতীয় স্থানে সিপি এমের প্রার্থী আভাস রায় চৌধুরী । তাঁদের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে 85301 এবং 18848 ।

লোকসভার পরেই প্রশ্ন উঠে যায় আগামী নির্বাচনে নিজেদের কেন্দ্র কি ধরে রাখতে পারবে তৃণমূল? বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল সব থেকে বেশি যে সমস্য়ায় জর্জরিত তা হল গোষ্ঠী কোন্দল। বর্ধমান শহরেই একাধিক তৃণমূলের গোষ্ঠী রয়েছে বলে খবর। বর্ধমান শহরবাসী এবং তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীদের অনেকেই বলেছেন, গোষ্ঠী কোন্দলই বিজেপির উত্থানের প্রধান কারণ। বর্ধমান শহরেই রয়েছে খোকন দাস গোষ্ঠী, রাসবিহারী গোষ্ঠী, উত্তম সেনগুপ্ত গোষ্ঠী এবং কয়েক মাস আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া আইনুল হক গোষ্ঠী। প্রকাশ্য়ে কেউ কিছু না বললেও গতকাল খোকন দাসের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরেই পথে দেখা যায়নি তৃণমূলের যুব নেতা রাসবিহারী হালদার ও তাঁর অনুগামীদের।

এ তো গেল দলের ভিতরের কথা। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে কাটমানি খাওয়ার। বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রটি মূলত গ্রাম কেন্দ্রীক। গ্রামবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাড়ি করার জন্য় সরকারি টাকা থেকে কাটমানি খেয়েছেন তৃণমূলের অনেক নেতা । যার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন নির্বাচনে।

এদিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত বিজেপিও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অনেকেই একথা জানিয়েছেন। এমনকি বিষয়টি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে বিজেপির বর্ধমান জেলা কার্যালয়ে ব্য়াপক ভাঙচুর চালায় দলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, সন্দীপ নন্দী পুরনো বিজেপি কর্মীদের বঞ্চিত করে নতুনদের জায়গা দিচ্ছেন। এরপরেই দলের তরফ থেকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হয়। সন্দীপ নন্দীকে সরিয়ে বর্ধমান জেলা সদর সভাপতি করা হয় অভিজিৎ তা কে। কিন্তু এতেই কি সব সমস্য়া মিটে গিয়েছে ? দলের কর্মীরাই বলছেন, লোকসভা ভোটের পর কদাচিৎ বর্ধমানে এসেছেন আলুওয়ালিয়া। যা বেশ কিছুটা প্রভাব পড়েছে দলের কর্মীদের মধ্য়েই।

  • কোন কোন বিষয় ফ্য়াক্টর হতে পারে আসন্ন নির্বাচনে?

তৃণমূলের শাসন কালে বর্ধমানে যে উন্নতি হয়নি তা কেউ বলছেন না। মূলত খোকন দাসের এলাকায় ব্য়াপক উন্নতি হয়েছে। রাস্তা, পানীয় জল, মন্দির সংস্করণ, গণ বিবাহ, মেলা, বৃদ্ধাশ্রম, রাস্তার দুধার সৌন্দর্যায়ন সব করেছেন খোকন দাস। বলছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাহলে ফ্য়াক্টর? একটাই। স্বজন পোষণ। অভিযোগ, খোকন দাস নিজের লোকেদের চাকরি দিয়েছেন, বিভিন্ন কাজ দিয়েছেন। এলাকার অন্য় কাউকে কোনও চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্য়বস্থা করে দেননি। আর সেটাকেই হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি।

নাম ঘোষণার পরেই খোকন দাসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, "বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা থেকে আমি জয়ী হব । আমাদের প্রচারে হাতিয়ার হবে উন্নয়ন।" গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য়, "দলে থাকতে গেলে মনোমালিন্য একটু হবেই। এবারও আমি সব সদস্যর কাছে যাব। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে জেতাব।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details