দুর্গাপুর, 24 অগস্ট: ভোরের আড়াল সরিয়ে তখন একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছে আকাশ ৷ মেঠো রাস্তায় ইতি-উতি দেখা মিলছে দু-একজনের ৷ কিন্তু, ষাটোর্ধ্ব রানি মুর্মুর (Rani Murmu) এত কিছু খেয়াল করার সময় নেই ৷ হাতে কোদাল নিয়ে হনহন করে হাঁটছেন তিনি ৷ পরনে হলুদ ব্লাউজ, সঙ্গে আটপৌঢ়ে হলুদ শাড়ি ৷ তাতে চাকচিক্যের লেশমাত্র নেই ৷ বরং, দু'টোই বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে ৷ আজ তাঁর হাতে রয়েছে কোদাল ৷ কোনও কোনও দিন থাকে কাস্তে ৷ মেঠো পথ ছেড়ে ব্যস্ত পায়ে মাঠে নেমে যান রানি ৷ এরপর টানা কয়েক ঘণ্টার হাড়ভাঙা খাটুনি ৷ রানি অন্য কারও জমিতে ক্ষেতমজুরের কাজ করেন ৷ তাতেই চলে সংসার ৷ অবশ্য তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে ৷ তিনি পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) কাঁকসার (Kanksa) তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মলানদিঘি মোলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ৷
মাটির ঘরে থেকে, ক্ষেতমজুরি করে দিন কাটে তৃণমূলের এই নেত্রীর রানির দিনলিপিতে খুব একটা হেরফের হয় না ৷ প্রতিদিন মাঠের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরেন তিনি ৷ এই বয়সেও একলা হাতে সংসারের সব কাজ সামলান ৷ স্নান, খাওয়া সেরে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছে যান পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ৷ বাড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার ৷ নামে রানি হলেও তাঁর পোশাক যেমন খেটে খাওয়া মেঠো শ্রমিকের মতো, তেমনই তাঁর বাড়ির সঙ্গে রাজমহলের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ সব মিলিয়ে রয়েছে দু'টো ঘর ৷ তাদের মাটির দেওয়াল ৷ একটায় রয়েছে খড়ের চাল, আর একটায় টালির ছাউনি ৷ দু'টোরই বেহাল দশা ৷
আরও পড়ুন:অনুব্রতকে জামিন না দিলে বিচারককে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি চিঠি
বর্ষায় এই ঘরে থাকতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় রানিকে ৷ চালের ফুটো দিয়ে ঘরে লাগাতার বৃষ্টির জল ঢোকে ৷ তখন কোনও কোনও সময় মাথা বাঁচাতে পাশেই দেওরের ঘরে আশ্রয় নেন রানি ৷ সেটার দেওয়াল পাকা, চালের অবস্থাও তুলনামূলক ভালো ৷ একদিকে যখন রাজ্যের নেতা, মন্ত্রীদের 'বেআইনি' ধন-দৌলত চোখ কপালে তুলছে রাজ্যবাসীর, ঠিক তখনই রানি মুর্মুর সাদামাটা জীবনযাপন নজর কাড়ছে সকলের ৷ তাঁর এই ছাপোষা জীবন তাঁকে এনে দিয়েছে গ্রামবাসীর শ্রদ্ধা, সম্মান আর বিশ্বাস ৷ বাহামণি টুডু নামে এক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, প্রয়োজনে সবসময় পাশে পাওয়া যায় উপপ্রধানকে ৷
ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে রানি জানালেন, ঘরটা পাকা হলে সত্যিই ভালো হয় ৷ কিন্তু, তার আগে গ্রামের বাকি সকলের বাড়ি পাকা করতে হবে ৷ তবেই, নিজের ছাদ পাকা করবেন তিনি ! এখানেই প্রশ্ন দুর্নীতিগ্রস্তরা তাঁকে দেখে কিছু শিখবেন কি? গ্রামের কয়েকজনকে এই প্রশ্ন করতেই তাঁদের মুখে মুচকি হাসি ৷ বললেন, বড় নেতা, মন্ত্রীদের কথা তাঁরা জানেন না ৷ তবে গ্রামের উপপ্রধান তাঁদের ঘরের মানুষ ৷ তাঁর উপর আস্থা রয়েছে সকলেরই ৷ গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, আগামী দিনেও এভাবেই প্রয়োজনে পাশে থাকবেন রানি ৷ তাই অন্যদের নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে নারাজ মলানদিঘি মোলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের খেটে খাওয়া মেঠো মানুষরা ৷