আসানসোল, 14 অগস্ট: আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বিনামূল্য বিশেষ নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে (Training for Tribal Girls to Make Self Reliant)। পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়ার প্রান্তিক এলাকার 75 জন মেয়ে এই প্রশিক্ষণের অংশ হয়েছেন।
দামোদরের দুই পাড়, পশ্চিম বর্ধমান হোক কিংবা বাঁকুড়া। প্রান্তিক আদিবাসী গ্রামগুলোতে এখনও স্পষ্ট অবহেলার ছাপ। অনুন্নয়ন তো রয়েছেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের হাতে কাজ নেই। দিনমজুরি করে এই অগ্নিমূল্যের বাজারে দিন চালানো বড় দায়। তবু স্বপ্ন দেখতে তো আর বাধা নেই ৷ আদিবাসী মেয়েরা এখন পড়াশোনা করছেন। তাঁরাও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু আর্থিক-অনটনের জন্য অনেকের স্বপ্ন মাঝপথে হারিয়ে যায়। তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে এসেছে সেলের (SAIL) ইস্কো হাসপাতাল ও পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি।
আরও পড়ুন:আদিবাসী মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ
প্রথম ব্যাচেই এই উৎসাহ দেখে ইস্কো কর্তৃপক্ষ আরও বড় করে বিষয়টিকে ভাবতে শুরু করেছে। আর মেয়েরাও আনন্দে নাচে, গানের মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি ও ইস্কো কারখানা কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে ইস্কোর বার্নপুর হাসপাতালে।
বার্নপুর হাসপাতালের ইডি সঞ্জয় চৌধুরী জানান, ইস্কো সিএসআর প্রজেক্টেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দু'টো বিষয়ের উপরে এই প্রশিক্ষণ চলছে। জেনারেল ডিউটি অ্যাটেন্ডেন্ট ও ফ্লেবোটমি। এনারা মূলত হাতে-কলমে রোগীদের সাধারণ সেবা করা, রক্ত নেওয়া-সহ অনান্য কাজ শিখতে পারছেন। প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে প্রচুর সুযোগও পাবেন। আবার নিজে কেউ সেন্টারও করতে পারবেন। একদিকে পড়াশোনো অন্যদিকে সরাসরি প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ। বার্নপুর হাসপাতালের নার্সিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ গীতা দাস চৌধুরী মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি সিনিয়র নার্সরাও হাতে কলমে ওয়ার্ডে কীভাবে রোগীদের সেবা করা হয় তা দেখিয়ে দিচ্ছেন।
আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়েদের স্বনির্ভর গড়ে তোলার জন্য বিনামূল্য বিশেষ নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে আরও পড়ুন:'আমাদের বিধায়ক মাতাল' বললেন আদিবাসী তৃণমূল নেতা
গীতা দাস চৌধুরী জানান, মেয়েদের মধ্যে অদ্ভুত উৎসাহ। গ্রাম-গঞ্জ থেকে ছুটে আসছেন মেয়েরা। আমরাও তাই খুব উৎসাহিত ওনাদের স্বনির্ভর করতে পারছি বলে। কারও বাবা সামান্য ফুলের ডেকরেশনের কাজ করেন, কারও মা আবার পরিচারিকা। বিয়ের পর কোনও মেয়ের জীবনের স্বপ্ন শেষ হতে বসেছিল। তাঁরাই আজ নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। যাঁদের অবলম্বন হয়ে উঠেছে ইস্কো হাসপাতালের এই বিশেষ উদ্যোগ। তাই প্রশিক্ষণ ক্লাসে ওনারা মেতে ওঠেন আনন্দে, গানে কিংবা আদিবাসী নাচে। অন্ধকার কেটে আলো ফিরছে ওনাদের জীবনে ৷