আসানসোল, 6 অগাস্ট : পরাধীন ভারতে লড়াই কেবল অধিকার বাঁচানোর কিংবা স্বাধীনতার জন্য নয় ছিল না, লড়াই ছিল সংস্কৃতি রক্ষা করারও । সেই সংস্কৃতি রক্ষা করার লড়াই এবং তার জয়ের সাক্ষী থেকেছে আসানসোল । আসানসোলে আজও দুটি ভবন ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির জয়ের স্মৃতি রক্ষা করছে । ডুরান্ড ইনস্টিটিউট এবং সুভাষ ইনস্টিটিউট এই দুটি ভবন ব্রিটিশ আমলের অনেক অজানা ইতিহাসের কথা মনে পড়িয়ে দেয় । সম্প্রতি পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের উদ্যোগে এই দুটি ভবনকে সংস্কার করা হয়েছে । আগামী কিছু দিনের মধ্যেই সুভাষ ইন্সটিটিউটের দরজা খুলে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষের জন্য ৷
1876 সাল । ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির ব্যবসা তখন জমে উঠেছে । রানিগঞ্জের কয়লা খনি কেন্দ্র করে রেল চলাচল শুরু হয়েছে । আসানসোল সহ তৎকালীন বিহার রাজ্যের সঙ্গে রেল সংযোগ হয়েছে । কয়লা খনি অঞ্চলের কেন্দ্রে থাকায় আসানসোলে রেল ডিভিশন তৈরি করে ব্রিটিশরা । ডিভিশনের উচ্চপদ অলঙ্কৃত করতে অনেক ব্রিটিশ অফিসারের সমাগম হয় আসানসোলে । রেলের বিভিন্ন নিম্ন পদে যোগ দিতে সারা দেশ থেকে অনেক ভারতীয় রেলকর্মীরা আসেন আসানসোলে ৷
আসানসোলের ডুরান্ড ইন্সটিটিউট ব্রিটিশ রেল অফিসারদের আমোদ প্রমোদের জন্য 1878 সালে তৈরি হয় ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট যা পরবর্তীকালে স্যার মার্তিমার ডুরান্ডের নামে নামাঙ্কিত হয় ডুরান্ড ইনস্টিটিউট
নামে । ব্রিটিশ আমলে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউটে ভারতীয়দের ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল । ব্রিটিশদের সংস্কৃতিতে ভারতীয়দের নাক গলানো সাহেবদের নাপসন্দ ছিল ৷ জনশ্রুতি ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউটে বাইরে নাকি নোটিশ বোর্ডে লেখা থাকত কুকুর এবং ভারতীয়দের ভেতরে আসা নিষেধ ।
আসানসোলের সুভাষ ইনস্টিটিউট সেই সময় দেশ জুড়ে স্বাধীনতার আন্দেলন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে ৷ অপমানিত ভারতীয় রেলকর্মীরা 1890 সাল থেকে নিজেদের জন্য আলাদা ভবনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ৷ প্রায় 25 বছর সেই আন্দোলন চলার পর 1915 সালে তৈরি হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট । স্বাধীনতার পর যার নাম হয় সুভাষ ইনস্টিটিউট ৷ আসানসোলের এই দুটি ভবন ব্রিটিশ আমল থেকেই পৃথক পৃথক ভাবে দুই সংস্কৃতির পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল । কিন্তু কালের নিয়মে ভবন দুটি ক্রমশ জৌলুস হারাতে থাকে ৷
বিরাট লম্বা গম্বুজাকৃতির ডুরান্ড ইনস্টিটিউট আসানসোল শহরের সবচেয়ে উঁচু বাড়ি ছিল সেই সময় । এত লম্বা প্রেক্ষাগৃহ এখনও আসানসোল শহরে নেই । অন্যদিকে নির্মাণে তেমন জাঁকজমক না থাকলেও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ও দেখতে মন্দ ছিল না । তবে ব্রিটিশদের প্রেক্ষাগৃহ এবং ভারতীয়দের প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে শ্রেণি বিভাজনের স্পষ্ট ছাপ ছিল । দুটি ভবনই কালের অতলে হারিয়ে যেতে বসেছিল । পরাধীন ভারতের এক অনন্য ইতিহাস ধ্বংসের হাতে থেকে বাঁচাল আসানসোল রেল ডিভিশন ৷ সম্প্রতি এই দুটি ভবনকে সংস্কার করা হয়েছে ৷
আসানসোল রেল ডিভিশনের প্রাক্তন DRM প্রশান্ত কুমার মিশ্রের উদ্যোগেই এরকম মোট 34টি ভবনকে সংস্কার করা হয়েছে । প্রশান্ত কুমার মিশ্র বলেন, "ডুরান্ড ও সুভাষ ইনস্টিটিউটের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে ৷ সেই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের পক্ষ থেকে এই দুটি ভবনের সংস্কার করা হয়েছে ৷ আগামী দিনে সুভাষ ইন্সটিটিউটের দরজা আসানসোলের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে ৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , ইন্ডোর গেম কম্পিটিশন, কোনও মিটিং , কনভোকেশন , কনফারেন্স সবই আয়োজন করা যাবে এখানে ৷ "
তিনি আরও বলেন , "স্বাধীনতার আগে স্বাধীনতা সংগামীরা লুকিয়ে সুভাষ ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন ঘরে মিটিং করতেন ৷ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এই সুভাষ ইন্সটিটিউটে গ্রহণ করা হয়েছিল ৷ শুধু তাই নয়, সুভাষ ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন হলে বিপ্লবীরা দিনের পর দিন লুকিয়ে থাকতেন ৷ "