পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

River Erosion in Malda: শুধু চিঠি চালাচালি নয়, গঙ্গা থেকে আয়ের টাকা নদী বাঁচাতে খরচ হোক, দাবি স্থানীয়দের - river erosion puts land of malda in jeopardy

গঙ্গার প্রলয়ঙ্কর ভাঙনে আগামী 20 বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে মালদা । আশঙ্কা প্রকাশ করছে মালদাবাসী (River Erosion in Malda) ৷ এমতাবস্থায় দ্রুত সমস্যার সমাধান চান তাঁরা ।

River Erosion in Malda
গঙ্গা ভাঙন, চরম সমস্যায় এলাকাবাসী

By

Published : Nov 19, 2022, 12:56 PM IST

মালদা, 18 নভেম্বর: গঙ্গা থেকে আয়ের টাকা খরচ হোক গঙ্গা বাঁচাতেই ৷ এমনই দাবি তুলছেন গঙ্গাপাড়ের মানুষ ৷ গঙ্গা ভাঙন রোধে মুখ্যমন্ত্রী খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন ৷ এতে ভাঙন বিধ্বস্ত মানুষ খুশি ৷ কিন্তু ভাঙন রোধের স্থায়ী কাজ হবে কিনা, হলেও সেটা সঠিকভাবে হবে কিনা, তা নিয়েই আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা ৷ তাঁদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা, বিপুল খরচের ভয়ে এই কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে পারে কেন্দ্র ৷ তাই গঙ্গার আয় থেকেই তাঁরা গঙ্গা বাঁধার দাবি তুলেছেন ৷

গঙ্গার প্রলয়ঙ্কর ভাঙনে আগামী 20 বছরের মধ্যে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে মালদা জেলা ৷ গত 15 নভেম্বর ইটিভি ভারতে এই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার ৷ এনিয়ে নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করে গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তবে শুধু মালদা নয়, তাঁর আশঙ্কা মুর্শিদাবাদ আর নদিয়া জেলার একাংশ নিয়েও ৷ যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এখনও সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়নি বলেই নবান্ন সূত্রে খবর ৷

গঙ্গা ভাঙন, চরম সমস্যায় এলাকাবাসী

ভাঙন বিধ্বস্ত ভূতনি চরের গোবর্ধনটোলার বাসিন্দা ধনঞ্জয় মণ্ডল বলছেন, "গতকাল সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, গঙ্গা ভাঙন রুখতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকার একসঙ্গে এই কাজ না করলে ভূতনি ভাঙন আর বন্যায় একাকার হয়ে যাবে ৷ ভিটেমাটি সব গঙ্গাগর্ভে চলে যাবে ৷ সরকার পদক্ষেপ নিলে আমরা বাঁচতে পারি ৷ কংক্রিট ঢালাই করেই গঙ্গাকে রুখতে হবে ৷ বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন আটকানো কিছুতেই সম্ভব নয় এখন ৷"

আরও পড়ুন:20 বছরেই গঙ্গায় তলিয়ে যাবে গোটা মালদা ? আতঙ্কে ভাঙনে জেরবার স্থানীয়রা

উত্তর চণ্ডীপুরের বাসিন্দা আবদুর রশিদের বক্তব্য, "গতকাল দেখলাম গঙ্গার ভাঙন রুখতে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন ৷ চার দশকের বেশি সময় ধরে ভাঙন হচ্ছে ৷ আগে মানিকচক, ডোমহাট আর ভূতনির হীরানন্দপুরে ভাঙন হত ৷ কিন্তু এখন গোটা জেলা জুড়ে ভাঙন হচ্ছে ৷ এতে গোটা মালদা জেলাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ৷ বিশেষত মানিকচকের উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর আর রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি, এই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত নদীতে তলিয়ে যাওয়ার প্রহর গুনছে ৷ এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত দেড় লাখ মানুষের বাস ৷ মুখ্যমন্ত্রী এনিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ায় আমরা খুশি ৷ কিন্তু আদৌ ভাঙন রোধের কাজ হবে, নাকি শুধু চিঠি চালাচালিই হবে, তা বুঝতে পারছি না ৷ এতদিন শুধু বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোখার চেষ্টা হয়েছে ৷ কোনও কাজ হয়নি ৷ নদী সেই বস্তাও গিলে নিয়েছে ৷ এই কাজে কিছুই হবে না ৷ নদীকে কংক্রিটের ঢালাই আর স্পার দিয়ে আটকাতে হবে ৷ আমরা কিছু চাই না ৷ শুধু বাঁচতে চাই ৷ আমাদের বাঁচাতে দুই সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে ৷"

মুনিরামটোলার বাসিন্দা অর্জুন মণ্ডল বলেন, " আমার 70 বছর বয়স হল ৷ চোখের সামনে গঙ্গার প্রলয় দেখেছি ৷ আগে এই নদী মহারাজপুরের পিছনে ছিল ৷ এখন সেই নদী 12 কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে ৷ এবার আমাদের তিনটি অঞ্চলও গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার মুখে ৷ আর ফুলহর আর গঙ্গা মিশে গেলে মালদা জেলাও আর থাকবে না ৷ ইতিমধ্যে ওই দুই নদীর মধ্যের দূরত্ব মাত্র 900 মিটারে এসে ঠেকেছে ৷ এর আগে পাথর, বালি দিয়ে নদীকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে ৷ এভাবে গঙ্গাকে আটকানো যাবে না ৷ একমাত্র কংক্রিটের ঢালাই করেই নদীর ভাঙন আটকানো যেতে পারে ৷ এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ায় আমরা আনন্দিত ৷ দুই সরকার একযোগে কাজ করলেই আমরা বাঁচতে পারব ৷"

দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গা ভাঙন নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে আসা এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা নদী ভাঙন নিয়ে লাগাতার খবর করায় ইটিভি ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "আমি যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেটা গঙ্গা আর ফুলহরের সংযোগস্থল ৷ দুই নদীর মধ্যের দূরত্ব এখন মাত্র এক কিলোমিটার ৷ গঙ্গা ভাঙন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ৷ খুব ভালো কথা ৷ কিন্তু তাঁরা রাজনীতি করতেই ব্যস্ত থাকেন ৷ আমরা দেখব, এনিয়ে শুধুই চিঠি চালাচালি হবে, নাকি বাস্তবে কোনও কাজ হবে ৷

আরও পড়ুন:কালিন্দ্রীর ভাঙনে বিপন্ন গ্রাম, আতঙ্কে তিনঘরিয়াবাসী

তিনি আরও বলেন, "প্রায় এক দশক প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর মেয়াদও 11 বছর হল ৷ কিন্তু এতদিনে গঙ্গা ভাঙন রুখতে তাঁদের কোনও উদ্যোগ আমরা দেখিনি ৷ শুখা মরশুমে ভাঙন রোধের কাজ হয় না ৷ বর্ষার সময় বস্তা ফেলে অনেকের পকেট ভরানো হয় ৷ নমামি গঙ্গে প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী 20 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন ৷ কিন্তু তার কাজ কোথায়? গঙ্গা থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে সরকারের ৷ সেই টাকার একটা অংশ কেন গঙ্গার ভাঙন রোধে খরচ করা হচ্ছে না? তাহলে তো এই অবস্থা তৈরি হত না ৷ দুই সরকারই ভোট নিয়ে বিষয়টি নাড়াচাড়া করেন ৷ বাস্তব সমস্যা মেটাতে কেউ উদ্যোগ নেয় না ৷ ফরাক্কা ব্যারেজ হওয়ার পর মালদা আর মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ৷ আরও বড় বিষয়, ভাঙন উদ্বাস্তুদের জন্য পুনর্বাসনের কোনও প্যাকেজ করা হচ্ছে না ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details