মালদা, 19 অক্টোবর:পুলিশের পাশাপাশি গ্রামে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে সেখানকার সমাজ ৷ সেই সমাজের নিদানেই ন’মাস ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার একটি পরিবার ৷ শুধু তাই নয়, বুধবার রাতে সমাজের মাতব্বর গোষ্ঠী ওই পরিবারের দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ৷ এই ঘটনায় পরিবারের কর্ত্রী 14 জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়নি পুলিশ ৷ তবে বাড়ি ভাঙচুরের কথা ক্যামেরার সামনে স্বীকারও করে নিচ্ছেন অভিযুক্তদের প্রতিনিধি ৷ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশের অন্যতম শীর্ষকর্তা ৷ ঘটনাটি ঘটেছে মোথাবাড়ি থানার একটি গ্রামে ৷
অভিযোগ, ওই গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে গ্রামেরই এক কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয় বলে দাবি ৷ একসময় বিয়ে করার জন্য যুবককে চাপ দিতে শুরু করে প্রেমিকা ৷ কিন্তু বিয়েতে বেঁকে বসে প্রেমিক ৷ এনিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসে ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রেমিক যুবক গ্রাম ছেড়ে পালায় ৷ বর্তমানে সে ভিনরাজ্যে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর ৷ তবে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেমের বিষয়টি ধামাচাপা পড়েনি ৷ এই ঘটনা নিয়ে গ্রামে ন’টি সালিশি সভায় বসায় সেখানকার সমাজ ৷ মাতব্বরদের একটাই দাবি, ছেলেকে সালিশি সভায় হাজির করতে হবে পরিবারকে ৷ যতদিন সেটা হবে না, ততদিন এই পরিবারকে সামাজিক বয়কট করা হবে ৷ কিন্তু ছেলে বাড়িতে না থাকায় তাকে সালিশি সভায় হাজির করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা ৷ ফলে ন’মাস ধরে তাঁরা সামাজিক বয়কটের শিকার ৷ তাঁদের বক্তব্য, গ্রামের কোনও দোকানে তাঁদের মালপত্র দেওয়া হচ্ছে না ৷ পানীয় জল নিতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ এমনকী বাচ্চাদের স্কুলেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ বুধবার রাতে মাতব্বর সহ গ্রামবাসীরা তাঁদের বাড়ি এবং সংলগ্ন খাবারের দোকান ভাঙচুর করে দিয়েছে ৷
পরিবারের কর্ত্রীর বক্তব্য, “রোজার পর থেকে আমরা সামাজিক বয়কটের শিকার ৷ এলাকায় কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না ৷ টাকা থাকলে দূর থেকে খাবার আনতে হয় ৷ নইলে পেটে গামছা বেঁধে থাকতে হয় ৷ ছেলে তো বাইরে ৷ আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই ৷ আমাদের সামাজিক বয়কট করে রাখা হয়েছে ৷ তাই আমি সালিশি সভায় যেতে পারিনি ৷ ওরা আমার বাড়ি আর দোকান ভাঙচুর করেছে ৷ আমি পুলিশেও অভিযোগ জানিয়েছি৷” গ্রামের এক মাতব্বর দোকান ভাঙচুরের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন ৷