মালদা, ১১ নভেম্বর: ইংরেজ আমলের শেষ দিক ৷ দেশজুড়ে চলছে স্বাধীনতার লড়াই ৷ ব্রিটিশ শাসকও বুঝতে পারে, ভারতবর্ষে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠছে ৷ তাই ক্ষমতা অস্তমিত হওয়ার আগে তারাও অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুন ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার দামালরা তখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাপট দেখাচ্ছে ৷ দেশবাসীকে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, চেয়েচিন্তে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না ৷ ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে চাই সহিংস আন্দোলন ৷ নেতাজি সুভাষ, রাসবিহারী বসুরা তখন এই দামালদের হার্টথ্রব ৷ নলিনী বাগচি, ভূপেন্দ্রনাথ বোসরা তখন সারা বাংলা ঘুরে ঘুরে যুবকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীক্ষা দিচ্ছেন ৷
সেই আন্দোলনে ঝাঁপ দিয়েছিল মালদার বেশ কিছু যুবকও ৷ ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাঁরা নিজেদের শরীর ও মনকে তৈরি করতে শুরু করেছিলেন ৷ তাঁরা বুঝেছিলেন, এই সংগ্রামে বুদ্ধির সঙ্গে চাই শারীরিক ও মানসিক শক্তি ৷ এই যুবকদের অধিকাংশই ছিলেন মালদা শহরের পুড়াটুলি এলাকার বাসিন্দা ৷ সেখানেই তাঁরা একটি ব্যায়ামাগার খোলেন ৷ মনে জোর আনতে তাঁরা শুরু করেছিলেন মহাকালীর আরাধনা ৷ 1930 সালে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সেই পুজো এখনও চলছে ৷ এবার তা 94 বছরে পা দিল ৷
এখানে মহাকালীর 10টি মাথা, 10টি পা ও 10টি হাত ৷ মায়ের পায়ের নীচে অসুর রয়েছে ৷ তবে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই ৷ কারণ, এই পুজো অমাবস্যায় নয়, হয় চতুর্দশীতে, তন্ত্র মেনে ৷ প্রথম থেকে এই মূর্তিতেই মায়ের পুজো চলে আসছে ৷ শ্রীশ্রী চণ্ডী গ্রন্থের বৈকৃতিক রহস্য পর্বেও এই মূর্তির উল্লেখ রয়েছে ৷ প্রাচীন যুগে বিহারের বিন্দুবাসিনী পাহাড়ের গায়ে এই মূর্তি খোদাই করা হয়েছিল ৷ তা এখনও অটুট ৷
স্বাধীনতা সংগ্রামীরা পুড়াটুলিতে যে ব্যায়ামাগার চালু করেছিলেন, তার নাম দিয়েছিলেন ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি ৷ পুড়াটুলিতেই শুরু হয়েছিল এই পুজো ৷ পরবর্তীতে পুজো স্থানান্তরিত হয় বকুলতলায় ৷ 1985 সালে মালদা শহরের গঙ্গাবাগে মায়ের স্থায়ী মন্দির নির্মিত হয় ৷ তখন থেকে এখানেই এই পুজো হয়ে আসছে ৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, ভূত চতুর্দশীর দুপুরে এই পুজো হয় কেন? পুরাণ মতে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ ৷ তাই একে নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী বলা হয় ৷ এই তিথিতে পিতৃ ও মাতৃকূলের সাত পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর বিধান রয়েছে ৷ একদিকে অসুররূপী ব্রিটিশ অত্যাচারীদের বধ, অন্যদিকে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ পেতেই এদিন এই পুজো চালু হয় ৷ সেই সময় রাতে কোনও জমায়েত হলে ব্রিটিশ পুলিশ সবাইকেই ধরে নিয়ে যেত ৷ তাই দিনের বেলায় এই পুজোর প্রবর্তন ৷