কলকাতা, 15 অগস্ট : একই দিনে দু-দুবার তৃণমূল সাংসদদের উপর হামলার ঘটনায় ত্রিপুরাকে "জঙ্গল রাজের" সঙ্গে তুলনা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । একই দিনে পরপর দু'বার দোলা সেন ও অপরূপা পোদ্দারের গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল ।
জানা গিয়েছে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন এবং লোকসভার সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ত্রিপুরার ধলাই জেলায় স্বাধীনতা দিবসে দলের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ৷ জঙ্গলে ঘেরা ধলাই থেকে ফেরার পথে তাঁদের গাড়ির উপর আচমকা হামলা চালানো হয় ৷ অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হঠাৎ তাঁদের গাড়ির সামনে বাঁশ, লাঠি নিয়ে চলে আসে ৷ কিছু বুঝে ওঠার আগে গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে আঘাত করা হয় ৷ এমনকি পাথরও ছোড়া হয় ৷ এমনকি অপরূপা পোদ্দারের ব্যাগ ও নথি ছিনতাই করা হয় । মাথা ফাটে দোলা সেনের ব্যক্তিগত সচিবের । দ্বিতীয়বার, থাইরুম থেকে ফেরার পথে বেলুনিয়ায় তাঁদের গাড়িতে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ।
এর তীব্র নিন্দা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, "আমাদের দুই সাংসদদের উপর কুৎসিত হামলা হয়েছে । দফায় দফায় হামলা করা হয়েছে । দোলা সেনের সহায়ক গুরুতর জখম হয়েছেন । অপরূপা পোদ্দারের ফোন, ব্যাগ সব কেড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে । একজন বৃদ্ধা সেই ব্যাগ কুড়িয়ে তুলে দিয়েছেন বলে তাঁর হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে । ত্রিপুরায় অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিজেপি সরকার ।"
আরও পড়ুন : Tripura TMC Attack : ত্রিপুরায় আক্রান্ত অপরূপা-দোলা, ধলাইয়ে গাড়িতে হামলা
দোলা সেনের অভিযোগ, গাড়ির সামনে বসেছিলেন তিনি । তাঁকে লক্ষ্য করে থান ইট ছোড়া হয় । গাড়ির কাচে ইট লেগে কাচের টুকরো তাঁর গায়ে এসে পড়েছে । পরিস্থিতি খুব খারাপ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি । ইট ছুড়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন । এই প্রসঙ্গে দোলা সেন বলেন, "আমার সেক্রেটারির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে । আমাদের সঙ্গে থাকা স্থানীয় নেতৃত্বের উপরও হামলা হয়েছে । রাস্তায়, গাড়িতে যা পারছে ছুড়ে মারছে । ইট, লাঠি, সাইকেল সব ছুড়ে মেরেছে । বেলুনিয়ায় থানার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েকজন আমাদের চলন্ত গাড়িতে ইট-পাথর ছুড়েছে । আমরা গাড়ি থামাইনি । আমাদের গায়ে গাড়ির কাচ ভেঙে লেগেছে । বিজেপির বাইক বাহিনী আমাদের গাড়িকে তাড়া করেছে ।"
সেখান থেকে কোনওক্রমে আগরতলায় পৌঁছে আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে দোলা সেনের ব্যক্তিগত সচিবের মাথায় সেলাই করা হয় । তৃণমূলের তরফে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শীর্ষ নেতৃত্ব দোলা সেন এবং অপরুপা পোদ্দারকে আহতদের সঙ্গে নিয়ে বিকেলের বিমানে কলকাতা ফিরতে নির্দেশ দেয় ।
দোলা সেন জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁদের খোঁজ নিতে ফোন করেছিলেন । ত্রিপুরার মানুষের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "জঙ্গলে রাজত্ব শেষ কথা বলবে না, শেষ কথা বলবে ত্রিপুরার মানুষ ।" দোলা সেন আরও জানান, তাঁরা কোনওরকমে বেঁচে গিয়েছেন । তিনি বলেন, "আমার ব্যক্তিগত সচিবের মাথায় 8টি সেলাই পড়েছে। সিটি স্ক্যান, এক্স রে করাতে হবে । পুলিশে অভিযোগ করব । আগে ওকে বাঁচাতে চাই । আজই কলকাতা ফিরতে হবে । আমাকেই তো ইট ছুড়ে মেরেছিল । আমাকে বাঁচাতে গিয়েই তো ওর এই অবস্থা হল ।"
এদিন এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যও । যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু বলেন, "আমাদের সময়েও পুলিশের সামনেই আক্রমণ হয়েছিল । এবারেও দু'বার আক্রমণ হল । প্রথম আক্রমণটা পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে করা হয়েছে ।" তাঁরা যখন হারিয়ে গিয়েছিলেন রাস্তায়, সেখান থেকে তাঁদের পুলিশের এসকর্ট নিয়ে আসা হয় । পুলিশের এসকর্টে থাকাকালীন তাঁদের উপর দ্বিতীয় বার বাঁশ, ইট দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : TMC-BJP : সিতাইয়ে প্রকাশ্যে বিজেপি কর্মীদের পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি তৃণমূল বিধায়কের
এই আক্রমণের জন্য বিজেপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, "বিজেপি ক্রমাগত আক্রমণ করছে । আমরা ক্রমাগত ভিডিয়ো দেখাচ্ছি । আমরা কি নিজেদের লোকদের মাথা ফাটিয়ে ভিডিয়ো দেখাচ্ছি ? কী করছে এটা বিজেপি ? নগ্ন রূপ বিজেপির ।" অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আক্রমণ প্রসঙ্গে তিনি জানান যে সেই হামলার কোনও সুরাহা করা হয়নি । বরং, "আমাদের উপর আক্রমণ করার পর আমাদেরই জেলে যেতে হয়েছিল । যারা আক্রমণ করল, তাদের গ্রেফতারই করা হয়নি । যাব কার কাছে ?" তবে এই ঘটনায় তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "ওখানে তো একজন জগদীপ ধনখড়ের মতো রাজ্যপালও নেই, যিনি কথায় কথায় টুইট করবেন । রাজ্যের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন । যিনি বিরোধীদের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলবেন এসো বুকে এসো তোমাদের সব জ্বালাযন্ত্রণা আমি শুনছি । পুলিশ দলদাস ওখানে ।"
অন্যদিকে কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "ত্রিপুরাতে গণতন্ত্র বিপন্ন । ত্রিপুরাবাসী স্বেচ্ছাচারী, স্বৈরতন্ত্রের মুখে । তারা যুদ্ধ করছে । মানসিক বিপন্নতায় রয়েছে । তারা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রয়ের খোঁজ করছে । সেই জন্য আমরা এখানে এসেছি ।" তাঁর দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য ত্রিপুরাবাসী 75তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পেরেছে । দোলা সেন ও অপরূপা পোদ্দারের উপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি লোকাল ডিএম-এর সঙ্গে কথা বলেছি । উনি ওখানে এসডিপিওকে পাঠিয়েছেন । এসডিপিও ওঁদের দু'জনকে সুরক্ষিতভাবে ফেরত নিয়ে আসছেন । ওঁদের কর্মসূচিতে যে বাধা দেওয়া হয়েছে, তার আমরা তীব্র নিন্দা করছি ।"