কলকাতা, 30 নভেম্বর: শুধুমাত্র নবম ও দশম শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেই 183টি সুপারিশের (Teacher Recruitment Scam) খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ! বুধবার কলকাতা হাইকোর্টকে (Calcutta High Court) এই তথ্য দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission) বা এসএসসি (SSC) কর্তৃপক্ষ ৷ এই 183টি সুপারিশের প্রেক্ষিতে কারা চাকরি পেয়েছেন, এবার সেই তথ্য চাইলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় (Justice Abhijit Gangopadhyay) ৷
কমিশনের তরফে পেশ করা এই তথ্য হাতে পেয়েই ফের একবার এই ঘটনায় ক্ষোভ উগড়ে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এই 183টি সুপারিশের প্রেক্ষিতে কারা চাকরি পেয়েছিলেন, তাতে কী ধরনের অনিয়ম হয়েছিল, তা জানতে চান বিচারপতি ৷ জবাবে কমিশনের আইনজীবী আদালতকে জানান, তাঁদের কাছে মূলত 'ব়্য়াংক জাম্প' করার সুপারিশ এসেছিল ৷ এর অর্থ হল, মেধাতালিকায় উপরে থাকা যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে তাঁর থেকে কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে চাকরির বন্দোবস্ত করে দেওয়া ! যা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ বলেই বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্ট মহল ৷
আরও পড়ুন:চাকরিহারাদের পুনর্বহালে অতিরিক্ত পদ তৈরির নেপথ্যে কারা, সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ আদালতের
এই প্রসঙ্গে কঠোর অবস্থান নেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ প্রাথমিকভাবে তিনি নির্দেশ দেন, আগামী 24 ঘণ্টার (1 ডিসেম্বর, 2022) মধ্যেই সংশ্লিষ্ট 183টি সুপারিশের ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের নাম এসএসসিকে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে ৷ পরদিন, অর্থাৎ আগামী 2 ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে তাদের ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে চলা নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এই নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় ৷ কিন্তু, পরে এই নির্দেশে কিছু সংশোধন করেন তিনি ৷ আসলে সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই ধরনের বেআইনি সুপারিশের সংখ্যা মাত্র 183 হতে পারে না ৷ আসল সংখ্যাটা এর থেকে অনেক বেশি, অন্তত 952 ! এরপরই বিচারপতি জানান, আগামী বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মামলাগুলির শুনানি হবে ৷ সেই শুনানির পরই এই বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ দেবেন তিনি ৷
এদিন এই গোটা ঘটনাকে সংগঠিত অপরাধ বলেও উল্লেখ করেন বিচারপতি ৷ তাঁর প্রশ্ন, এই ধরনের অনিয়ম রোখার বদলে উচ্চ আদালতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ পেতে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার ! যা বিস্ময়কর বলে মনে করেন বিচারপতি ৷ তাঁর প্রস্তাব, এর বদলে সরকার আসুক ৷ আদালতকে অনিয়ম ঠেকাতে সহযোগিতা করুক ৷ বিচারপতির প্রশ্ন, এসএসসি কর্তৃপক্ষ 183টি বেআইনি সুপারিশ পেল ৷ অথচ সেগুলি বাতিল করতে কোনও পদক্ষেপ করা হল না ! কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কেন এর আগে কোনও রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি ৷
প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই কয়েকদিন আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে এখনও পর্যন্ত নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে কতজনকে বেআইনিভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে ৷ সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই প্রাথমিকভাবে নবম-দশমে নিয়োগের ক্ষেত্রে 183টি সুপারিশ সংক্রান্ত তথ্য এদিন আদালতে পেশ করে এসএসসি কর্তৃপক্ষ ৷