কলকাতা, 14 জুন : সন্ধে গড়িয়ে রাত হতেই সবার নজর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়ির দিকে । এত রাতে আবার কে এলেন !
একজন নয় । দু'জন এসেছেন পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করতে । জুটিতে । শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় । বেশ কিছুক্ষণ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে সময় কাটান তাঁরা । মন্ত্রীকে এই কঠিন সময়ে সমবেদনা জানান ।
গতকাল তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের বাড়িতে যাওয়ার পর বিজেপিতে বেসুরো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও দেখা করে গিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে । তারপর আজ শোভন-বৈশাখী । ব্যাপারটা কী !
যদিও শোভনবাবু জানিয়েছেন, মাসিমার খবর পেয়েই এসেছেন । কাল একটু বেশি রাতের দিকে খবর পেয়েছিলেন । তাই কাল আসতে পারেননি । পার্থবাবুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরেই তিনি মনে করেছেন, এই সময়ে মন্ত্রীর পাশে থাকা উচিত । তাই এসেছেন ।
ব্যস ? শুধু এইটুকুই ? আর রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি ? শোভন অবশ্য বলছেন, এখন এই সব কথা বলার পরিবেশ নয় । পার্থবাবু সেই মানসিক অবস্থায় নেই । সুতরাং, এই সংক্রান্ত কথা যা হবে, সব পরে ।
আরও পড়ুন : Suvendu Adhikari : 24 জন বিজেপি বিধায়ক 'মিসিং', কটাক্ষ সুদীপের
তবে বৈশাখী কিন্তু ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন । বন্ধু শোভন রাজনীতিতে ফিরুক । সেটাই চান তিনি । কোন দলে ফিরবেন তবে শোভন? এটারও উত্তর আছে বৈশাখীর কাছে । যাঁরা শোভনবাবুকে ভালবাসেন, সেই অনুগামীদের জন্যই রাজনীতিতে ফিরবেন তাঁর বন্ধু ।
আর তৃণমূল ছাড়লেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁর প্রিয় কাননকে এখনও আগের মতোই স্নেহ করেন, তাও হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেন শোভন-বান্ধবী । বিশেষ করে সিবিআই কাণ্ডের সময় নিজাম প্যালেসে যেভাবে মমতা কাননের পাশে থেকেছেন, তাতেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বৈশাখী ।
তাহলে কি এবার মুকুলের পর প্রিয় কাননের ঘর ওয়াপসির পালা ? এমনই বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতির আনাচে কানাচে ।
তবে কিন্তু-কিন্তু ভাব একটা থেকেই যাচ্ছে । শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় এখন তৃণমূলের বিধায়ক । তাহলে শোভন এবং তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখীও যদি তৃণমূলে ফেরেন, তাহলে আবার কোনও কাদা ছোড়াছুড়ি হবে না তো দলের অন্দরে ? এই প্রশ্নটা নিশ্চয়ই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাতেও আসছে । এখন দেখার শেষ পর্যন্ত শোভন-বৈশাখীর এই নাকতলা সফর এখানেই শেষ হয়, নাকি আরও কোনও গন্তব্য রয়েছে ।
এদিকে আজ দুপুরেই তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । সদ্য মা হারানো তৃণমূল নেতাকে তাঁর এই কঠিন মুহূর্তে সমবেদনা জানিয়ে এসেছেন । স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় টুইটও করেছেন তৃণমূল হেভিওয়েটের সঙ্গে দেখা করে । আর তার কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই ফের তোপ । চেনা মেজাজে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । আর এবার একেবারে শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে ।
আরও পড়ুন : বৈঠক এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, অভিযোগ শুভেন্দুর
নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার । কার্যত তুলোধনা করে গেলেন । বাংলায় নাকি গণতন্ত্র শ্বাস নিতে পারছে না । প্রশাসনিক আধিকারিকরা আগুন নিয়ে খেলছেন । ভোট পরবর্তী হিংসার অব্যাহত । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একবারের জন্যও সেখানে গেলেন না । আর এই সমস্ত কথাগুলি তিনি যখন বলছেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারী । স্বাভাবিকভাবে, শাসকদলও পাল্টা সুযোগ পেয়ে গেল রাজ্যপালের বিজেপি-সখ্যতা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তোলার ।
রাজভবনের বারান্দায় বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আজ রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন বিজেপি বিধায়করা । নেতৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর সঙ্গে আরও জনা পঞ্চাশ বিধায়ক । এদিকে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তিরিশ জন বিধায়কের যাওয়ার কথা ছিল রাজভবনে । বিরোধী দলনেতা বললেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর দলের বিধায়করা এতটাই উদগ্রীব যে সংখ্যাটা তিরিশ ছাপিয়ে গিয়েছে ।
অগত্যা রাজ্যপালকে অনুরোধ করলেন শুভেন্দু, যাতে প্রত্যেককেই থাকতে দেওয়া হয় । রাজ্যপালও মেনে নিলেন । এখন যদি বিধায়করা পদ্মফুলের বদলে, ঘাসফুল হাতে নিয়ে আসতেন... তবে রাজ্যপাল এতটা নমনীয় হতেন কি না, বলা মুশকিল । যাই হোক, করোনাবিধি তো মানতেই হবে । তাই রাজভবনের অলিন্দেই বসে পড়লেন বৈঠকে । রাজভবনের অলিন্দে বসে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে এই ধরনের বৈঠকে আগে কোনও বাংলার রাজ্যপাল করেছেন কি না জানা নেই । আবার এটাও ঠিক, যে এমন তো কোনও বাধা ধরা নিয়ম নেই --- রাজ্যপালকে অমুক জায়গাতে বসেই বৈঠক করতে হবে । তিনি চাইলে অলিন্দে বসে বৈঠক করতেই পারেন ।
বৈঠক শেষে রাজ্যপাল-শুভেন্দু একসঙ্গেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন । আজ আবারও মুকুল রায়ের বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার দাবি তোলেন শুভেন্দু । অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন আনারও হুঁশিয়ারি দেন । বলেন, "আমরা চাইছি তিনি দু'দিনের মধ্যে পদত্যাগ করুন । না হলে আমরা এই আইন কার্যকর করার জন্য স্পিকারের কাছে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার আবেদন জানাব ।"
আর এই গোটা বিষয়টি তিনি যখন রাজ্যপালকে পাশে নিয়ে বলছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি রাজ্যপালেরও বিষয়টিতে মৌন সম্মতি রয়েছে ?
ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে । তারপর এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে । কিন্তু এখনও 17 হাজারের বেশি বিজেপি কর্মী ও সমর্থক ঘরছাড়া রয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু অধিকারী ।
রাজভবন পর্ব মিটে যাওয়ার পর শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি নিয়ে মুকুলের তরফ থেকে গোটা সন্ধেয় কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি । আগেও যে খুব একটা মুখ খুলতেন সব বিষয়ে তাও নয় । এখনও একইরকমভাবে চুপ মুকুল রায় ।