কলকাতা, 19 ডিসেম্বর: রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে হামেশাই কেন্দ্রের টাকা না দেওয়ার প্রসঙ্গটি ঘুরে ফিরে আসে । কখনও একশো দিনের কাজ প্রকল্প, কখনও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বকেয়ার কথা বলে তাঁরা কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ৷ রাজ্যের প্রাপ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কেন বন্ধ রাখা হয়েছে এই প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ।
কিন্তু এবার প্রকাশ্যে চলে এল বরাদ্দ পাওয়ার পরও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ । আর এই অভিযোগ নিয়ে ক্ষুব্ধ নবান্ন । সম্প্রতি নবান্নের হাতে যে তথ্য এসেছে তাতে চক্ষু চরকগাছ রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের শীর্ষ আধিকারিকদের । কারণ তথ্য বলছে, হাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ এলাকায় স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পের আওতায় বাড়ি বাড়ি শৌচাগার নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে (Nabanna is upset with the slow implementation of Swachh Bharat Mission) ।
তথ্য বলছে এই প্রকল্পে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি পাঁচটি জেলায় । বিষয়টি নিয়ে সোমবার কার্যত নবান্নের ক্ষোভের মুখে পড়েছে এই পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসন । জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পঞ্চায়েত দফতরের দেওয়া একটি রিপোর্ট হাতে এসেছে নবান্নের । যেখানে দেখা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায় স্বচ্ছ ভারত মিশনে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র 13 শতাংশ কাজ হয়েছে । পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া এবং মালদা-এই চার জেলাতেও কাজ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার 30 শতাংশের কম । এই 5 জেলাই শুধু নয়, তথ্য বলছে রাজ্যের বেশিরভাগ জেলাতেই ষাট শতাংশের লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি । আর এর জন্যই নবান্নের তরফ থেকে এই জেলাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে (Swachh Bharat Mission in Bengal)।
আরও পড়ুন: ফের রাজ্যকে স্বীকৃতি কেন্দ্রের, দেশের সেরা প্রকল্পের পুরস্কার পাচ্ছে দুয়ারে সরকার
সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষে নবান্নের তরফে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল গ্রামীণ এলাকায় প্রায় সাড়ে 6 লক্ষ বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণের (Swachh Bharat Mission)। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের প্রায় শেষ লগ্নে এসে দেখা যাচ্ছে মাত্র 2 লক্ষ 84 হাজার 649টি বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে । এই রিপোর্ট গত নভেম্বর মাসের । সামগ্রিকভাবে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রায় 50 শতাংশ কাজ এখনও বাকি ৷
এতেই চটেছে নবান্ন ৷ এদিন নবান্নের তরফে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা গেল না । কেন হাতে বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও এই কাজে দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে! প্রসঙ্গত 100 দিনের কাজ ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না মেলায় কাজ আটকে ছিল দীর্ঘদিন । এই বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্যের তরফ থেকে বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবারও করা হয় । অবশেষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । কিন্তু এক্ষেত্রে যে প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ইতিমধ্যেই রয়েছে সেগুলিতে কেন কাজ করা যাচ্ছে না তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ।
আরও পড়ুন: সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণে কেন্দ্রকে সহযোগিতায় উদ্যোগী রাজ্য
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ তার আগে রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকল্প ধরে ধরে জেলাগুলিকে সতর্ক করার কাজ শুরু হয়েছে । আর এমতাবস্থায় এই তথ্য নবান্নের হাতে আসতেই রাজ্য প্রশাসনের অস্বস্তি বেড়েছে । সবচেয়ে বড় কথা, নবান্নের তরফে বারবার স্বচ্ছতা অভিযানকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বিভিন্ন সময়ে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে এই ধরনের কাজকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন । তা সত্ত্বেও কেন এই প্রকল্পের কাজে গতি আনা সম্ভব হল না, তারই উত্তর হাতরাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা ।