কলকাতা, 20 জুন :প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের চাকরি কাড়লেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Calcutta High court remove Manik Bhattacharya from president post) ৷ বিচারপতির নির্দেশেই অপসারিত হলেন তিনি । নতুন সভাপতি দায়িত্ব না-নেওয়া পর্যন্ত আপাতত সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচিই সভাপতির দায়িত্ব সামলাবেন । আগামিকাল মঙ্গলবার বেলা 2টোর সময় মানিক ভট্টাচার্যকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
গত শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ 2787 জনের একজনেরও আবেদনপত্র জমা দিতে পারেনি আদালতে । ফলে বোর্ড যে দাবি করেছিল প্রার্থীদের থেকে আবেদনপত্র নেওয়া হয়েছিল নম্বর দেওয়ার জন্য তা সত্য নয় ।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সোমবার কম্পিউটার জেনারেটেড কিছু রোল নম্বর জমা দিয়েছে যা প্যানেল বলে মনে হয়নি বলে উল্লেখ বিচারপতির । মামলাকারী আইনজীবীদের তরফে সুদীপ্ত দাসগুপ্ত আদালতে জানান, একটা সিলেকশন কমিটি থাকা উচিত ছিল । কিন্তু 273 জনকে নতুন করে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও সিলেকশন কমিটি ছিল না । প্যানেল প্রকাশ না-করেই নিয়োগ হয়েছে ।
আরও পড়ুন :প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যুক্তি, বোর্ড চাইলে একাধিক তালিকা প্রকাশ করতেই পারে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সুবিচার করার জন্য। এই ব্যাপারে বিচারপতির নির্দেশ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
এদিন সিবিআই-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত নথি জমা করেছে পর্ষদ তা আদৌ 2017 সালের কি না, সেটা ফরেনসিক সায়েন্স খতিয়ে দেখবে । প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানায়, 2011 সালে একটা কমিটি গঠিত হয়েছিল । সেই কমিটিই 2014 সালের প্রশ্ন সঠিক না ভুল, সেই ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । কিন্তু বিচারপতির প্রশ্ন, কোনও পরীক্ষার প্রশ্ন সঠিক না ভুল তা খতিয়ে দেখার ক্ষমতা আদৌ দেওয়া হয়নি তাদের ।
মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ সেই কমিটিতে ছিলেন অভীক মজুমদার, ঋত্বিক মল্লিক ৷ তাঁরা 2017 সালের 20 নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিল । কিন্ত ঋত্বিক মল্লিক একটা কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন তারিখ ছাড়াই । আর 2017 সালের 23 নভেম্বর অভীক মজুমদার স্বাক্ষর করেছিলেন দুটি কাগজে । এই কাগজগুলি সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । কারণ এদের নাম প্রাথমিকভাবে সিলেবাস কমিটির সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিল । ফলে প্রশ্ন-উত্তর যাচাই সংক্রান্ত এক্সপার্ট কমিটি বলে যা উল্লেখ করা হচ্ছে তা আসলে পুরোটাই ভাওতা বলে নির্দেশ বিচারপতির ।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যে সমস্ত নথি আদালতে জমা করা হয়েছে তা দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না যে তা নভেম্বরের 2017 সালের । কারণ নথিগুলো ছিল অত্যন্ত ঝকঝকে । সেই কারণে 2017 সালের আসল নথি আদালতে জমা করার নির্দেশ দেন বিচারপতি ।