মানুষের হাতে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ফেরাতে জ্যোতি বসুর জন্মদিনে শপথ সেলিমের কলকাতা, 8 জুলাই: পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করার সময় যিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই জ্যোতি বসুর 109তম জন্মদিনে আজ শনিবার রাজ্য়ে চলছে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ তাই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘জ্যোতিবাবুর জন্মদিন শপথ নিয়েছি মানুষের হাতে পঞ্চায়েত যাতে ফেরত আসে ।’’
1977 সালে বাংলায় প্রথম বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হয় ৷ মুখ্যমন্ত্রী হন জ্যোতি বসু ৷ পরের বছর তাঁর সরকার রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তৈরি করে ৷ এই ব্যবস্থা সম্বন্ধে সেই সময় জ্যোতি বসু বলেছিলেন, পঞ্চায়েত থেকে মহাকরণ চলবে । সিপিএম বরাবর দাবি করে যে সমাজের প্রান্তিক অংশের মানুষের কাছে প্রশাসনকে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার জন্যই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল ৷ শনিবার সেই কথাই আবার শোনা গেল মহম্মদ সেলিমের মুখে ৷ তিনি বললেন, ‘‘জ্যোতি বসু যেটা করেছিলেন, সেটা আসল দুয়ারে সরকার । ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ।’’
আরও পড়ুন:আউশগ্রামে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ ! সিপিএম কর্মীর মৃত্যু
সিপিএম বহুবার এই দাবি করেছে যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রকরণ তাঁরা ভালোই করেছিলেন ৷ সেই কারণে, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে বিষয়টিকে খতিয়ে দেখেছিলেন ৷ পরে সারা দেশে তা বলবৎও করেন ৷ কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি একেবারে বদলে গিয়েছে বলে অভিযোগ মহম্মদ সেলিমের ৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখছি গত কয়েক বছর ধরে উলটোটা হচ্ছে । সরকারকে ভূমিস্তরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম । এখন দেখা যাচ্ছে দুর্নীতি ভূমিস্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । ভূমি সংস্কার করা হয়েছিল, জমিদার জোতদারদের হাত থেকে জমি নিয়ে যে যেখানে চাষ করে, লাঙ্গল যার, জমি তাঁর । শহরে ঠিকা করা হল । এখন ফের নির্দিষ্ট কিছু জনের হতে এই জমি কুক্ষিগত হচ্ছে । যে মানুষ পঞ্চায়েতে অধিকার পেল, তার ঘরের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা পেল । জনশিক্ষার প্রসার হল ৷ এখন দেখা যাচ্ছে স্কুল-মাদ্রাসা বন্ধ হচ্ছে ।’’
এই অবস্থায় সিপিএম তথা বামফ্রন্ট মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে মানুষের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর হলেও তৃণমূল তা চাইছে না বলে অভিযোগ সেলিমের ৷ তাঁর কথায়, দুর্নীতি আর দুষ্কৃতী এক হয়ে লাঠি-বোমা নিয়ে খুনোখুনিতে মেতেছে । রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই পুলিশ মন্ত্রী, নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তিনি পুলিশের ব্যবস্থা করলেন না । আগে থেকে ব্যবস্থা নিলেন না যাতে খুনোখুনি বন্ধ করা যায় । কিন্তু বললেন বেড রেডি রাখো, ডাক্তার ছুটি বাতিল । অক্সিজেন সিলিন্ডার, রক্ত মজুত রাখো । যারা আধমরা হয়ে আসবে, তাদের চিকিৎসা হয় ।’’
আরও পড়ুন:বাদুড়িয়ায় পুলিশের সামনেই বুথ দখল করে দেদার ছাপ্পা ভোট ! কাঠগড়ায় সিপিএম
তাঁর অভিযোগ, ‘‘হিংসা ছড়ানো হবে, সেটা মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা ছিল । হাসপাতালের ছবি দেখলে বুঝবেন সরকার কী চাইছে ? যেকোনও ক্ষমতাসীন চায়, তার লুঠের বখরা নিয়ে মারামারি করতে, কিন্তু লুঠের হক ছাড়তে চায় না । মানুষের হক পেতে লড়তে হবে । গরিব মানুষের লড়াই ।’’