কলকাতা, 25 মে : গত সপ্তাহে নারদ মামলায় চার ধৃতের জেল হেফাজত থেকে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে ৷ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করে সিবিআই ৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে সেই পিটিশন প্রত্যাহার করল সিবিআই । মামলা ফিরছে কলকাতা হাইকোর্টে 5 বিচারপতির বেঞ্চেই । সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিনীত সরান ও বিচারপতি ভূষণ গাভাইয়ের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলার সওয়াল-জবাব চলাকালীন সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহেতা বেঞ্চকে জানান, তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে এই আবেদন প্রত্যাহার করছেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে মামলাটির শুনানি হোক তাঁরা চান ।
নারদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হল সিবিআই । বিচারপতি বিনীত সারান ও বিচারপতি ভূষণ গাভাইয়ের বেঞ্চে একের পর এক প্রশ্নবাণে কার্যত পিছু হটল সিবিআই । সুপ্রিম কোর্ট থেকে নারদ মামলা প্রত্যাহারের কথা জানালেন সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহেতা । আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ফিরছে এই মামলা ।
মামলার শুনানির শুরুতেই সুপ্রিম কোর্টে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানতে চায়, "আপনারা ঠিক কী চান ?"
সলিসিটর জেনেরাল বলেন, "কলকাতা হাইকোর্ট 21 মে চার নেতা-মন্ত্রীর জেল হেফাজত থেকে গৃহবন্দি থাকার যে নির্দেশ দিয়েছে সেই নির্দেশকে আমরা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি । পাশাপাশি মামলাটি ভিনরাজ্যে স্থানান্তর করার আবেদন জানাচ্ছি । কারণ ওই চার নেতা-মন্ত্রী অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি । পাশাপাশি তাঁদের গ্রেফতার করার পর রাজ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে সিবিআইয়ের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে ।"
বিচারপতি ভূষণ গাভাই সলিসিটর জেনেরালের উদ্দেশে বলেন, "অভিযুক্তেরও অধিকার আছে । তাঁকে না জানিয়ে নোটিস না দিয়ে সেই অধিকার কি প্রত্যাহার করা যায় ? মুখ্যমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রী যদি আইন তাঁদের হাতে তুলে নেন, তার জন্য একজন অভিযুক্ত কেন তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন ? কলকাতা হাইকোর্ট আপনাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে সিবিআই আদালতে চলা মামলা শুনেছে এবং আপনাদের আবেদনে মান্যতা দিয়েছেন । আপনারা অভিযুক্তদের নোটিশ পর্যন্ত দেননি !"
তখন সলিসিটর জেনেরাল বলেন, "অভিযুক্তরা বর্তমানে গৃহবন্দি রয়েছেন ।"
এর পাল্টা বিচারপতি গাভাই আবার বলেন, "মানুষের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে কি না সেটা মূল বিষয় । গৃহবন্দি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাঁরা তো আপনাদের নজরদারিতে আছেন ৷"
সলিসিটর জেনেরাল আবার বলেন, "এই নেতা-মন্ত্রীরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ৷ এঁরা সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন । মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট করতে পারেন ।"
তখন বিচারপতি গাভাই জানতে চান, "যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়ে গিয়েছে তাঁরা বেশি প্রভাবশালী ? নাকি যাঁদের বিরুদ্ধে এখনও চার্জশিট পেশ হয়নি তাঁরা বেশি প্রভাবশালী ?"
প্রসঙ্গত, এই মামলায় মোট 13 জন অভিযুক্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই ।
সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহেতা আবার বলেন, "এই প্রভাবশালীদের গ্রেফতার করার পর রাজ্যে যে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা সেটা নজিরবিহীন । সিবিআই বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ওইদিন । তাই মামলা ভিনরাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমরা ।"
তখন বিচারপতি ভূষণ গাভাই বলেন, "আমি যখন ঔরঙ্গাবাদে ছিলাম, একটি মামলায় 200-300 মহিলা আদালতকক্ষে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল । পুলিশ এসে আমাকে বিষয়টি ভেবে দেখতে বলার অনুরোধ করে । আমি স্পষ্ট পুলিশকে জানিয়েছিলাম আইন-শৃঙ্খলা পুলিশের বিষয় এবং আমি এই পরিস্থিতির মধ্যেই নিজের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলাম । আমার মনে হয় আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা এত দুর্বল নয় যে কিছু মানুষের বিক্ষোভের কারণে ভীত হয়ে পড়বে । আপনি চাইলে আপনার এই মামলা প্রত্যাহার করে হাইকোর্টে ফেরত যেতে পারেন । এখানেও শুনানি করতে পারেন । কী করবেন ভেবে দেখুন ।"
তখন সলিসিটর জেনেরাল তুষার মেহেতা শুক্রবার পর্যন্ত মামলার শুনানি স্থগিত রাখার দাবি জানান । কিন্তু দুই বিচারপতি বলেন, "আপনারাই এখানে গতকাল শুনানি চাইছিলেন মামলার । এখন কেন পিছিয়ে নিয়ে যেতে চান ?" এরপরই সলিসিটর জেনেরাল দুই বিচারপতির বেঞ্চের কাছে কিছুটা সময় প্রার্থনা করেন । কিছু সময় পর সলিসিটর জেনেরাল জানান, তাঁরা এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাইছেন । তাঁরা চান, হাইকোর্টেই মামলার শুনানি হোক । ফলে আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের 5 বিচারপতির বেঞ্চেই ফিরছে মামলা ।
গত 21 মে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দোল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এক নির্দেশে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জেল হেফাজত থেকে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দেন । এমনকি, মামলার শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করেন ৷ সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের এসএলপি স্পেশাল লিভ পিটিশন ফাইল করেছিল সিবিআই । আজ নিজেরাই সেই পিটিশন প্রত্যাহার করল ।
আরও পড়ুন : ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যের জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট