লাইসেন্সহীন পাঁচটি অ্যাপ ক্যাব সংস্থাকে শো-কজ কলকাতা, 24 এপ্রিল: লাইসেন্সবিহীন অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। গত সপ্তাহে পাঁচটি অ্যাপ ক্যাব সংস্থাকে লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করার অভিযোগে শো-কজ করা হয়েছে। এর ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন শো-কজ হওয়া সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অ্যাপ ক্যাব মালিক এবং চালকেরা।
বৈধ্য কাগজপত্র ছাড়াই শহর কলকাতায় রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে একাধিক অ্যাপ ক্যাব সংস্থা। তাদের মধ্যে বেশ কিছু টিকে গেলেও দু-একটি সংস্থা বন্ধও হয়ে গিয়েছে। মূলত, অ্যাপ ক্যাব ব্যবসা শুরু করার জন্য লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ রাজ্য পরিবহণ মন্ত্রকের স্বীকৃতি প্রাপ্ত সংস্থা হিসাবে লাইসেন্স জরুরি। বর্তমানে ওলা, উবার, ডি সি এস ক্যাব, স্ন্যাপ, ওয়াইএলডি টেকনোলজি এবং এলওয়াইএফটি ক্যাব রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি পেলেও ইনড্রাইভ, আরপিভিভি, ব়্যাপিডো, জুম, মাই চয়েস-এর মতো অ্যাপ ক্যাব সংস্থাকে শো-কজ করা হয়েছে ৷
স্বীকৃতি প্রাপ্ত সংস্থার অ্যাপ ক্যাবগুলির শহর এবং শহরতলির রাস্তায় বা রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড কিংবা বিমানবন্দর এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পার্ক করার অনুমতি থাকে ৷ কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না-থাকলে এই ধরনের সুযোগ সুবিধা মেলে না, তেমনি যাত্রী সুরক্ষার দিকটিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়কে আরও আঁটোসাঁটো করতে রাজ্য পরিবহণ দফতর, অ্যাগ্রিগেটর আইন চালু করার বিষয়ে উদ্যত হলেও বিভিন্ন কারণে এখনও তা আটকে রয়েছে।
মূলত শো-কজ হওয়া পাঁচটি সংস্থা যদি সন্তোষজনক উত্তর দিতে না-পারে, তাহলে আইনি হয়রানির পাশাপাশি বড়সড় আর্থিক জরিমানা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে সমস্যায় পড়েছেন গাড়ির মালিক এবং চালকরা। কারণ এইসব সংস্থার অ্যাপ ক্যাব চালালে একদিকে যেমন রাস্তায় পুলিশি হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তেমনই যাত্রী তোলা বা নামানোর ক্ষেত্রেও বিস্তর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চালকদের। তাঁদের অভিযোগ, ওলা কিংবা উবার সংস্থাকে বারংবার বলা সত্ত্বেও শোষণ করে চলেছে। কম কমিশন দেওয়া থেকে শুরু করে কথায় কথায় আই ডি ব্লক করে দেওয়া, কোনও কিছুই বাদ নেই। ফলে গাড়ির ইএমআই মেটাতে এবং সংসার চালাতে অগত্যা লাইসেন্সহীন অ্যাপ ক্যাব সংস্থার আইডি-তে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানতে হবে এগ্রিগেটের গাইডলাইন, অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে কড়া বার্তা পরিবহণ মন্ত্রীর
অ্যাপ চালক রাজা রামকুমার যাদব বলেন, "আমি আগে ওলায় গাড়ি চালাতাম। তারপর হঠাৎ করে কিছু না-বলেই, আমার আইডি ব্লক করে দিয়েছে। প্রায় এক বছর আমার আইডি ব্লক করে রেখেছে। বারবার জানানো সত্ত্বেও এখনও আনব্লক করা হয়নি। অগত্যা আমাকে অন্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গাড়ি চালাতে হয়েছে ৷ নইলে তো না-খেতে পেয়ে মরতে হবে। এখন জানতে পারছি যে এইসব সংস্থাগুলিকে শো-কজ করা হয়েছে। এই সংস্থাও যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে যেটুকু উপার্জন হচ্ছে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি, লাইসেন্সবিহীন সংস্থাগুলির অ্যাপ ক্যাব বলে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ হয়রানির শিকার হতে হয় ৷ কোথাও গেলে পার্কিং পাওয়া যায় না। পার্কিংয়ে দাঁড়াতে না-পেরে চক্কর কাটতে কাটতে জ্বালানি পুড়ে যায়।"
এই বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সদস্য সজল দাস বলেন, "এই সংস্থাগুলি প্রথম থেকেই লাইসেন্স ছাড়া পরিষেবা দিতে বাজারে নেমেছিল। চালক এবং মালিকদের আকৃষ্ট করার জন্য এই সব সংস্থাগুলি বিশাল বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল যে, এই সংস্থাগুলি রাজ্য পরিবহণ দফতরের স্বীকৃতি প্রাপ্ত। কিন্তু এখন দেখছি তা নয় ৷ এখানে একদিকে যেমন যাত্রীদের কোনও নিরাপত্তা নেই তেমনি চালকদেরও কোনও সুরক্ষা বা নিরাপত্তা নেই।" তবে সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বাতিল হওয়া পাঁচ অ্যাপ-ক্যাব সংস্থা ও অনান্য অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার মালিকদের সঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর আলোচনায় বসার সম্ভাবনা রয়েছে ৷