কলকাতা, 11 ডিসেম্বর : 10 ডিসেম্বর, 2019 । স্টকহোমের মঞ্চে তখন চাঁদের হাট । পাশ্চাত্য সিম্ফনির সুরে মেতে উঠেছে নোবেলের মঞ্চ । গান বাজনার মাঝে মাঝে চলছে বক্তৃতা । একে একে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্যে কৃতীদের নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে । সাদা পাকা চুলের ছিপছিপের চেহারার মানুষটা তখন সস্ত্রীক বসে রয়েছেন । যথানিয়মে,অনুষ্ঠানের একদম শেষ পর্যায়ে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা হচ্ছে । বাাঙালি তথা আপামর ভারতবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় । তখনই নোবেলের শতাব্দীর পোশাক-প্রথা ভেঙে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে পুরোদস্তুর বাঙালি বেশে বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় । সাত সমুদ্র পারে গোটা হল যখন করতালিতে স্বাগত জানাচ্ছে । তখন হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে টিভির সামনে বসে আবেগে বুক বাঁধছে প্রতিটি বাঙালি । এর আগেও বাংলার সংস্কৃতি নোবেলের মঞ্চে দাঁড়িয়েছে , কিন্তু এই প্রথমবার পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানা তথা বাংলার জয়জয়কার খানিক হলেও ম্লান করে দিল পাশ্চাত্য সিম্ফনিকে ।
এর আগে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে নোবেলে যুক্ত হয়েছে তিন বাঙালির নাম । সালটা 1913 । নোবেল পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কিন্তু স্টকহোমের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ ।
1998 সালে নোবেল পুরস্কার নিচ্ছেন অর্মত্য সেন সাল 1998 । অর্থনীতিতে নোবেল পান অর্মত্য সেন । নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে পুরুষদের প্রথাগত পোশাক কালো সুট এবং সাদা টাইতেই পুরস্কার নিয়েছিলেন তিনি ।
2006 সালে নোবেল পান মহম্মদ ইউনুস 2006 সাল । শান্তির জন্য নোবেল পান বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুস । পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি একটি পাজামা- পাঞ্জাবি পরেছিলেন ।
তবে কোথাও যেন ব্যতিক্রম অভিজিৎ । 1901 সালের 10 ডিসেম্বর থেকেই নিয়ম রয়েছে । পুরুষদের প্রথাগত পোশাক কালো সুট এবং সাদা টাই । এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পোশাক পরিবর্তনে কমিটির কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয় । 2006 সালে পাজামা- পাঞ্জাবির জন্য অনুমতি নিতে হয় মহম্মদ ইউনুসকে । তবে কোথাও যেন খামতি থেকে যায় । এবার বাঙালির সেই 'ক্ষত'তে কিছুটা মলম লাগালেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় । পরনে সোনালি পাড়ের ধুতি । সঙ্গে পাঞ্জাবি ও কালো ভেলভেট কোর্ট । এই পোশাকের জন্য তাঁকেও কমিটির কাছে বিশেষ অনুমতি নিতে হয় । আর পাশে তখন অর্ধাঙ্গিনী ৷ যেন সত্যিই তাঁরা একে অপরের পরিপূরক ৷
স্ত্রী এস্থার ডুফলো পরনে নীলচে সবুজ শাড়ি । সঙ্গে কনট্রাস্ট লাল ব্লাউজ । কপালে টিপও রয়েছে । পুরোপুরি আটপৌরে বাঙালি ৷ গোটা বিশ্ব তখন দেখছে, এক বাঙালি আর তাঁর পাশে বাঙালি না হয়েও তিনি বাঙালি বধূ ৷ এর আগে শাড়ি পরে নোবেল মঞ্চে উঠেছিলেন মাদার টেরেসা । সে-বছর (১৯৭৯) অনুষ্ঠান হয়েছিল অসলোয় ।
তিনজন পুরস্কার প্রাপকের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়ান অভিজিৎ, এস্থার এবং মাইকেল ক্রেমার। পদক ও ডিপ্লোমা তুলে দেন সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফ। নোবেল কর্তৃপক্ষ টুইট করে সেই ভিডিয়ো টুইট করে নোবেল কর্তৃপক্ষ । অভিজিৎ ও এস্থারের পোশাক নিয়ে প্রশংসার ঝড় বয়ে যায় সোশাল মিডিয়ায় ।
কিন্তু, দিনের শেষে পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানার ছোঁয়ায় কোথায় একটা খচখচানি থেকেই গেল ৷ ধুতি-পাঞ্জাবির সঙ্গে কালো কোট ! মনটা যেন মানতে চাইল না ৷