পোলবা, 3 এপ্রিল : লকডাউনে বিপন্ন জাতীয় পাখি। খাবার খোঁজে অসংখ্য ময়ূর ঘুরে বেড়াচ্ছে পোলবার বিভিন্ন গ্রামে ।এমনিতেই খাদ্যের একটা সমস্যা ছিল। তার উপর কোরোনা আর লকডাউনের জন্য সব কিছুই বন্ধ । মাঠে সেভাবে নেই চাষবাস । কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ । দিনমুজুরদের সমস্যা বাড়ছে নিত্যদিন । সমস্ত জায়গায় খাবারের আকাল ।
লকডাউন : পোলবায় অনাহারে ধুঁকছে জাতীয় পাখি - কোরোনা
খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে পোলবার একাধিক গ্রামের ময়ূর ।
রাজহাটের কল্লা পরিবার এই ময়ূরের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন । গম, চাল বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে কিছুটা হলেও ময়ূরের খাবারের জোগান দিতেন । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কারও খাবার জুটছে না । এই অঞ্চলে যেটুকু সবজি ছিল তাও শেষের মুখে । ফলে খাবার না পেয়ে মারা যাচ্ছে এই অঞ্চলের ময়ূরগুলি । সরকারি তরফে কোনও রকম সাহায্য মেলেনি কোনদিনই । সম্পূর্ণ উদাসীনতায় আস্তে আস্তে কমছে ময়ূরের সংখ্যা । এর উপর চোরাশিকারি আছেই । পালকের জন্য অনেকে মেরে ফেলে এই জাতীয় পাখিকে । পোলবার এই গান্ধিগ্রাম অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ময়ূর । জাতীয় পাখির কোনও সুরক্ষা নেই পোলবাতে ।
পোলবা ব্লকে বিভিন্ন গ্রামে বহুকাল আগে থেকেই ময়ূরের সমাগম ছিল । রাজহাট ,চৌতারা, গান্ধিগ্রাম ও সুগন্ধা অঞ্চলে অসংখ্য ময়ূরের দেখা মেলে । বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আম গাছে এই জাতীয় পাখির ডাক শোনা যেত । কিন্তু খাবারে অভাব ও চোরাশিকারির জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । সরকারি তরফে সেভাবে কোনও সাহায্য পাওয়া যায় না । খাবার তো দূরের কথা ময়ূরের রোগ হলেও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তর কিছু করে না । স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, এই ময়ূর গুলির জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করুক সরকার । না হলে চোখের সামনে মরতে দেখা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।
প্রাক্তন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ কল্লা বলেন, " রাজঘাটে বেশ কয়েক জায়গায় গাছপালা কেটে দেওয়ার ফলে গান্ধিগ্রাম সহ একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে ময়ূর । বিগত 20 বছর ধরে ময়ূর আছে । আগে খাবারের অসুবিধা ছিল না । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষের জমি কমে আসায় খাবারের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে । কয়েক বছর আগে শিলাবৃষ্টির ফলে কিছু ময়ূর মারা গিয়েছিল । আগে এক-একটি ঝাঁকে 250টি করে ময়ূর থাকত, আস্তে আস্তে তা সংখ্যায় কমতে শুরু করেছে ।ময়ূরের জন্য এখনও আমাদের পরিবার থেকে খাবার দেওয়া হয় । কিন্তু আমাদের পরিস্থিতিও সেই রকম নেই। তার ফলে এই খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । হয়তো এখান থেকে ময়ূর অন্যত্র চলে যাবে । কিংবা মারা যাবে । বহুবার স্থানীয় পঞ্চায়েত ব্লক স্তরেও বলা হয়েছে ময়ূরের খাওয়ার জন্য । কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি ।
স্থানীয়দের দাবি, জেলা পরিষদের তথৈবচ অবস্থা । কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেউ সাড়া না দেওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে ময়ূরের খাদ্য জোগানের ক্ষেত্রে । কিছু সংখ্যক মানুষ আসে পাখি দেখতে । কিন্তু কেউ খাবারের ব্যবস্থা করে না । বিভিন্ন রেশন দোকানে বা অন্যান্য জায়গার গোডাউনের পড়ে থাকা খাবারও এই মুহূর্তে মিলছে না । পয়সা দিয়েও মিলছে না বাইরের খাবার । ময়ূর যে কয়েকটি আছে, তারা খাবারের অভাবে ধুঁকছে । এভাবে চলতে থাকলে খাবারের অভাবে মরতে শুরু করবে ।