পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Sep 4, 2019, 11:32 PM IST

Updated : Sep 5, 2019, 2:45 PM IST

ETV Bharat / state

অবসরের পরও বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়ে চলেছেন মগরার ধ্রুব স্যার

খাতায় কলমে অবসর নিয়েছেন 2002 সালে । অবসরের 17 বছর পর এই 2019 সালেও সমানতালে অঙ্ক শিখিয়ে চলেছেন ছাত্রদের । কখনই কোনও সরকারি স্বীকৃতির আশা করেননি । ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে চাওয়া বলতে শুধুই সম্মান । এই গতিময়তার যুগেও সঙ্গী বলতে একটি সাইকেল । আর তা নিয়েই আজ 50 বছর ধরে অঙ্ক শিখিয়ে চলেছেন জীবন গড়ার এই কারিগর । মগরার বাসিন্দা ধ্রুবপদ কুণ্ডু খুব সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ । কোনও কোনও ছাত্রের কথায় তো অঙ্ক মানেই ধ্রুবস্যার ।

ধ্রুব স্যার

মগরা, 4 সেপ্টেম্বর : খাতায় কলমে অবসর নিয়েছেন 2002 সালে । অবসরের 17 বছর পর এই 2019 সালেও সমানতালে অঙ্ক শিখিয়ে চলেছেন ছাত্রদের । কখনই কোনও সরকারি স্বীকৃতির আশা করেননি । ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে চাওয়া বলতে শুধুই সম্মান । এই গতিময়তার যুগেও সঙ্গী বলতে একটি সাইকেল । আর তা নিয়েই আজ 50 বছর ধরে অঙ্ক শিখিয়ে চলেছেন জীবন গড়ার এই কারিগর । মগরার বাসিন্দা ধ্রুবপদ কুণ্ডু খুব সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ । কোনও কোনও ছাত্রের কথায় তো অঙ্ক মানেই ধ্রুবস্যার ।

50 বছরেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গে শিক্ষকতা করছেন ধ্রুবপদ কুণ্ডু । 1968 সালে স্নাতক পাশ করেই শিক্ষক জীবনের শুরু । 2002 সালে পাকরি কেদারময়ী বিদ্যমন্দির থেকে দীর্ঘ চাকরিজীবন থেকে অবসর নেন । আর তার পরদিন থেকে কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই কামারপাড়া স্কুলে পড়াতে শুরু করেন । সেখানে 10 বছর পড়ানোর পর বর্তমানে আকনা ইউনিয়ন স্কুল ও পোলবা হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষকতা করেন তিনি । স্কুল শেষ হওয়ার পর যান ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতে । এটাই এখন তার রোজনামচা । বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে হামেশাই । এব্যাপারে ধ্রুববাবুর মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "প্রকৃত শিক্ষক এখনও সম্মান পান ।"

দেখুন ভিডিয়ো

ঠিক কেমন ধ্রুববাবুর দৈনন্দিন জীবন? সকাল 7 টায় সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি । বিনা পারিশ্রমিকে দু'টি সরকারি স্কুলে ক্লাস করেন । তারপরে প্রাইভেট টিউশন পড়িয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত 11 টা । এরপরও রাত 1 টা পর্যন্ত চলে পরদিনের পড়ানোর প্রস্তুতি । এতসব কিছুর মধ্যে মৌলিক বিষয় ওই আদর্শ । ধ্রুববাবুর মতে, পয়সা ও শিক্ষার অভাবে কারও প্রতিভা যেন নষ্ট না হয় । তাই আজীবন তিনি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা করিয়ে যেতে চান । নিজের শিক্ষকজীবন প্রসঙ্গে ধ্রুববাবু বলেন, "অষ্টম শ্রেণি থেকেই ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার । সাহাগঞ্জ রাসবিহারী শক্তি সমিতিতে আমার প্রথম শিক্ষক জীবনের শুরু । তারপর পাকরি কেদারময়ী বিদ্যামন্দির স্কুল । অবসরের পর 1 মাসের জন্য কামারপাড়া স্কুলে পড়াতে গেছিলাম । কিন্তু পড়াই প্রায় 10 বছর । এখন পোলবা আকনা ও পোলবার স্কুল ও কেদারময়ী রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে পড়াই ।" পারিশ্রমিকের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, "আমার কাছে পড়ানোর সঙ্গে টাকা পয়সার কোনও সম্পর্ক নেই । পড়াশোনাই শেষ কথা ।" তাঁর মতে, "কোন ছাত্রই খারাপ হয় না । তাকে ঠিক মতো ভালোবাসতে পারলেই হবে ।"

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে ধ্রুববাবু বলেন, "বর্তমানে পড়াশোনার সিলেবাস আগে না পড়ে গেলে পড়ানো সম্ভব নয় ।" বর্তমান শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "শিক্ষকদের যত বেতন বাড়ছে, দায়িত্ব তত কমছে । শিক্ষকরা সময় মতো ক্লাসে আসেন না । আমি সব সময় নতুন শিক্ষকদের বলি সময় মতো আসার জন্য ।" শিক্ষকতাকে ঠিক কতটা ভালোবাসেন? উত্তরে ধ্রুববাবু বলেন, "স্কুলে না গেলে আমার শরীর খারাপ করে ।" উজ্জ্বল মুখে ধ্রুববাবু বলেন, "আমি স্কুলে যাওয়ার পথে অনেকেই আমাকে হাত তুলে নমস্কার করেন ।" তথাকথিত পুরস্কার না পাওয়ায় আক্ষেপ নেই ধ্রুববাবুর । তিনি বলেন, "অনেকে রাস্তায় বলে আমি পাগল । বলে, পয়সা পায় না অথচ স্কুলে পড়াতে যাচ্ছে । সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ায় আমার কী স্বার্থ । আমার কাছে টাকা-পয়সা বড় কথা নয় । সম্মানটাই বড় ।"

ধ্রুববাবুর স্ত্রী, দুই পুত্র, নাতি-নাতনি ও তাঁর ওই সাইকেল নিয়েই সংসার । বর্তমানে তাঁর পেনশনেই সংসার চলে । চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল 67 টাকা দিয়ে । তবে পারিশ্রমিক সর্বদাই গৌণ থেকেছে তাঁর জীবনে । ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক শেখানোই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল । কখনও ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে নিজেই তাদের বাড়ি পড়াতে চলে যান । তাঁর মতে, পড়াশোনা না পারা ছাত্রদেরই দরকার তাঁকে ।

আকনা ইউনিয়ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোহিত কুমার পাইন বলেন, "ধ্রুবপদবাবুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল । শিক্ষকরা অবসর নেওয়ার পর স্কুলে শিক্ষকের অভাব হয় । সেই কারণেই অবসরের পরও তাঁকে পড়ানোর কথা বলা । তিনি পারিশ্রমিকের জন্য এসব করেন না । বর্তমান শিক্ষকদের সঙ্গে ধ্রুববাবুর মতো শিক্ষকদের তুলনা হয় না । আমাদের নিজেদের দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি, কিন্তু ধ্রুববাবু আলাদা ।" রোহিতবাবু আরও বলেন, "ধ্রুববাবু একজন আদর্শ শিক্ষক কিনা তা জানি না তবে তিনি একজন অনুকরণযোগ্য শিক্ষক । আমার অত্যন্ত গর্ব হবে, যদি উনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান ।"

Last Updated : Sep 5, 2019, 2:45 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details