সাগর, 26 মে :2009 সালে ধূলিসাত্ করে দিয়ে গিয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আয়লা ৷ তার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সুন্দরবন ৷ এরইমধ্যে গত বছর তাদের যুঝতে হয়েছে মারাত্মক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানের সঙ্গে ৷ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে সুন্দরবনের মানুষের জনজীবন ৷ সবে পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছিল ৷ তবে প্রকৃতির রোষ আবারও অভিশাপের মতো নেমে এল সুন্দরবনের দিকে ৷ ঘূর্ণিঝড় যশ ওডিশায় আছড়ে পড়লেও তার ঝাপটায় বেসামাল রাজ্যের ব-দ্বীপ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চল ৷ সরকারি তত্পরতায় প্রাণহানি ঘটেনি ৷ তবে বাঁধ ভেঙে, কৃষিজমি প্লাবিত হওয়ায় প্রবল ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যায়নি ৷ ফলে ভবিষ্যত্ জীবন ও জীবিকা নিয়ে ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মুখে সুন্দরবনের মানুষ ৷
গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের বিপদ ঘনিয়ে এসেছে মূলত তিনটি দিক থেকে ৷ প্রাকৃতিক, বাস্তুতান্ত্রিক ও মানুষের অর্থনীতি ৷ অবস্থানগত কারণেই প্রাকৃতিক বিপদের মুখে বসে রয়েছে সুন্দরবন ৷ সুন্দরবন মূলত বদ্বীপ অঞ্চল ৷ এর একটা অংশ সমুদ্রের একেবারে সামনে রয়েছে, যা মূলত সাগরের জলে প্রভাবিত ব-দ্বীপ ৷ আর ভেতরের দিকে যে জায়গাগুলি রয়েছে সেগুলি নদীর জোয়ারভাঁটা ও সমুদ্রের জলের যৌথ সমন্বয়ে তৈরি দ্বীপ ৷ সুন্দরবনের 102টি দ্বীপের মধ্যে জনবসতি রয়েছে 50 টির মতো দ্বীপে ৷ দ্বীপগুলিতে এখনও প্রাকৃতিক ভাঙা-গড়া চলছে ৷ ফলে দ্বীপের প্রান্তবাসী বিপদের ঝুঁকিও সবসময়েই বেশি ৷
গত বছর আমফানে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের প্রায় 30 শতাংশ অর্থাত্ 1200 বর্গ কিমি এলাকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৷ কমবেশি 150টি স্থানে নদী বাঁধ ভেঙে পড়ে ৷ যার ফলে দুটো প্রভাব পড়ে ৷ 18000 একর জমি জলের তলায় চলে যায় ৷ নোনা জলে মাসের পর মাস ডুবে থাকে কৃষিজমি ৷ সুন্দরবনের 70 শতাংশ মানুষেরই জীবিকা অর্জনের মূল উত্স কৃষিকাজ ৷ ফলে বৃহত্তর একটি অংশের মানুষের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ৷ নদীবাঁধ ভেঙে জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বাঘেদের বাসস্থান অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে যায় ৷ এর ফলে বাঘের হানায় মৃত্যু বেড়ে যায় বহুগুণ ৷
আমফানের জন্য যে জায়গায় বাঁধ মেরামতের প্রয়োজন ছিল ও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা ছিল, এত অল্প সময়ের মধ্যে তাও সম্পূর্ণ করতে দেয়নি ঘূর্ণিঝড় যশ ৷ ফলে প্রাকৃতিক বাঁধ অরক্ষিতই থেকে যায় ৷ স্বাভাবিকভাবে পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর, মথুরাপুর, হিঙ্গলগঞ্জ, কুলতলি, সন্দেশখালি-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও মাটির বাঁধ ভেঙেছে ৷ জল ঢুকছে প্লাবিত করেছে আশপাশের এলাকা ৷ প্রায় 8-10টি ব্লকের জীবন জীবিকা আক্রান্ত ৷ ঝড়ের আগেই 10 লক্ষ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে এনেছে সরকার ৷ তাই প্রাণহানি রোধ করা গিয়েছে ৷ তবে রোখা যায়নি অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি ৷ কংক্রিটের বাঁধ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এখানে সম্ভব নয় ৷ কারণ জলের স্রোত ও দ্বীপগলির 9 টি চরিত্র ৷ তাই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মানুষকে বসবাস করতে হবে ৷