ডায়মন্ড হারবার, 8 অক্টোবর : 1866 সালে ডায়মন্ড হারবারের তৎকালীন হাজিপুরের বারদ্রোণ গ্রামের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ এ বছর সেই পুজো 156 বছরে পড়ল ৷ আগের মতো জাঁকজমক না হলেও, নিয়ম মেনে দেবীর আরাধনা করেন মণ্ডল বাড়ির সদস্যরা ৷ বিশুদ্ধ নন্দীকেশ্বর রীতি মেনে পুজো হয় দেবী দুর্গার ৷ আগে এই পুজোয় নবমীতে পাঁঠা বলি এবং অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় গুলি ছোড়ার রীতি ছিল ৷ জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির সঙ্গেই সেই সব রীতিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, হুসেন শাহ অবিভক্ত বাংলার নবাব থাকাকালীন লবণ ও তাঁতের ব্যবসার রমরমা ছিল ৷ তৎকালীন হাজিপুরের (বর্তমান ডায়মন্ড হারবার) বারদ্রোণ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন অযোধ্যা রাম মণ্ডল ৷ তিনি ওই লবণ ও তাঁতের ব্যবসা করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হন ৷ ব্যবসার টাকায় বারদ্রোণ, মন্দিরবাজার, ঘটকপুর, হটুগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, মথুরাপুর, নামখানা সহ একাধিক এলাকায় জমিদারি শুরু করেন ৷ সেই অযোধ্যা রামের বংশধর ছিলেন জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডল ৷ তিনিই 1866 সালে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ৷ বারদ্রোণের জমিদার বাড়িতে সুবিশাল দালান বাড়ি তৈরি করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : Mankundu Durga Puja: মানকুণ্ডুর খাঁ বাড়িতে অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা’ রূপে পূজিত হন
অতীতে মণ্ডলদের জমিদার বাড়িতে পুজোর 4 দিন গ্রামবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য কবি গানের আসর বসতো ৷ মহাসপ্তমীতে এলাকায় ব্রাহ্ম ভোজন ও মহানবমীতে কুমারী পুজোর চল ছিল ৷ কুমারী পুজো হলেও, বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্রাহ্মণ ভোজনের রীতি ৷ জমিদারি থাকাকালীন মহানবমীতে পাঁঠা বলির রেওয়াজ ছিল ৷ আর প্রতিদিনই গ্রামবাসীদের ভোজনের ব্যবস্থা করা হতো জমিদার বাড়িতে ৷ জমিদার বাড়ির সামনে সুবিশাল সিংহদুয়ার রয়েছে ৷ জমিদারি প্রথায় সেই সিংহদুয়ারে দিবারাত পাহারায় থাকতেন দু’জন দারোয়ান ৷ জানা যায়, সেই সময় বন্দুকের গুলির আওয়াজে শুরু হতো সন্ধিপুজো ৷ বর্তমানে সেই প্রথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কালের নিয়মে জমিদারি প্রথার অবসানের সঙ্গে সিংহদুয়ারে দারোয়ানও আজ নেই ৷