কোচবিহার, 3 সেপ্টেম্বর : স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ । আর তারপর তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় পুজো শুরু হয় । যা এখন জেলার প্রাচীনতম বারোয়ারি পুজো । চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা কিংবা জমকালো মণ্ডপ নয়, ঐতিহ্য ও নিষ্ঠাই 100 বছর পেরোনো দিনহাটার মহামায়া পাটের দুর্গাপুজোর বিশেষত্ব । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নিয়ম মেনে এবারও পুজো হচ্ছে । তবে পুজো উপলক্ষে চারদিনব্যাপী যে মিলন মেলা হয় তা এবছর বন্ধ থাকতে পারে ।
প্রস্তরখণ্ডকে পেঁচিয়ে ছিল সাপ, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু মহারাজার
কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে যে পুজো শুরু করেছিলেন তা পরে বারোয়ারি পুজোতে পরিণত হয় ।
1885 সাল নাগাদ কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ রায়ের আমলে ডুয়ার্সের জয়ন্তী থেকে বাংলাদেশের লালমনিরহাট পর্যন্ত রেললাইন পাতার কাজ চলছিল । মাঝখানে দিনহাটায় শ্রমিকরা পাথরভাঙার কাজ করছিলেন । কাজ চলাকালীন সেখানে দেবীর অবয়ব আঁকা একটি প্রস্তরখণ্ড দেখতে পান শ্রমিকরা । পাথরটি তোলার চেষ্টা করেও কেউ তা তুলতে পারেননি । পরে মহারাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওই জায়গায় মহামায়া মন্দির গড়ে প্রস্তরখণ্ডটিকে দেবী মহামায়া রূপে পুজো শুরু করেন । কয়েক বছর পর দেবী দশভূজা রূপে পুজো দেওয়ার স্বপ্নাদেশ পান স্থানীয় বাসিন্দারা । 1890 সালে স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে সেই পুজো শুরু করেন । সেই সময় কোচবিহারে মহারাজাদের বড়দেবীর পুজো এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় দু'একটি পুজো হত । এরপর থেকে মহামায়া পাট মন্দিরের পাশে অস্থায়ী মন্দির করে শুরু হয় পুজো । উদ্যোক্তারা জানান, প্রতি বছর রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয় । এরপর সেই কাঠামোতে গড়ে ওঠে দুর্গা প্রতিমা । বৃহৎ নান্দীকেশ্বর পুরাণ মতে পুজো হয় । আগে এই পুজো দেখতে ওপার বাংলার মানুষ ভিড় জমাত । কিন্তু এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ।
পুজো কমিটির কর্মকর্তা বিভূরঞ্জন সাহা বলেন, "দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু হয় । কোচবিহারের রাজাদের উদ্যোগে রেললাইন পাতার কাজ চলছিল । সেই সময় একটি প্রস্তরখণ্ডকে সাপ পেঁচিয়ে ছিল । পরে স্বপ্নাদেশে প্রথমে মহামায়া ও পরে দশভূজা রূপে পুজো শুরু হয় ।" মহামায়া পাট কমিটির সম্পাদক কালীপদ পাল বলেন, "এবার মহামায়া পাটের পুজো 130 তম বর্ষে পড়েছে । কোরোনা পরিস্থিতির জন্য মিলন মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে ।" স্থানীয় বাসিন্দা দীপংকর দত্ত বলেন, "মহামায়া পাটের পুজো ঘিরে দিনহাটার মানুষের আলাদা আবেগ রয়েছে । তাই অঞ্জলি দিতে ও প্রতিমা দর্শনে প্রতি বছর ভিড় হয় । এবছর কোরোনার আশঙ্কা থাকলেও মহামায়া পাটের দুর্গাপুজোয় ভক্তদের ভিড় হবে, এই বিশ্বাস রয়েছে ।"