শান্তিনিকেতন, 25 অগাস্ট : ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি উত্তাল রাজ্য রাজনীতি ৷ অভিযোগ উঠেছে, চতুর্দিক পাঁচিল দিয়ে ঘিরে গুরুদেবের বিশ্বভারতীকে অচলায়তনে পরিণত করা হচ্ছে ৷ এটা রবীন্দ্র আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করছেন আশ্রমিক থেকে পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে স্থানীয়দের একাংশ ৷ কিন্তু, কেন পৌষমেলার মাঠ বা বিশ্বভারতীর একাধিক এলাকাকে বিভিন্ন সময় পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে ৷
উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর গতকাল একটি বিবৃতি জারি করা হয় বিশ্বভারতীর তরফে ৷ যেখানে স্পষ্ট করা হয়, পাঁচিল দেওয়ার কারণ ৷ সেখানে বলা হয়,
- সাম্প্রতিক অতীতে মেয়েদের হস্টেলে ঢুকে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা একজনকে খুন করে ৷ এক দম্পতি আশ্রম চত্বরে আত্মঘাতী হন ৷ যাতে বহিরাগতদের দ্বারা আশ্রমের আর কেউ আক্রান্ত না হন, তাই পড়ুয়াদের সুরক্ষার খাতিরে পাঁচিল দেওয়া জরুরি ৷
- অপ্রীতিকর ঘটনা যার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হতে পারে, তা এড়াতে পাঁচিল দেওয়া প্রয়োজন ৷
- বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চন্দন কাঠ চুরি রুখতে পাঁচিল দেওয়া দরকার ৷
- সংগ্রহশালা থেকে মূল্যবান সামগ্রীর চুরি রুখতে, সেগুলি সুরক্ষিত রাখতে পাঁচিল দেওয়া জরুরি ৷
- যবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি রেস্তরাঁ তৈরি হয়েছে, তখন থেকে বহিরাগতরা সেখানে আসতে শুরু করেছে ৷ সেখানে প্রতিমা হস্টেলের আবাসিক এবং সংগীত ভবনের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে একাধিকবার অভিযোগ এসেছে ৷ এইসব রুখতে পাঁচিল দেওয়া প্রয়োজন ৷
- নিজেদের ইচ্ছায় পাঁচিল নির্মাণ করছে না বিশ্বভারতী ৷ বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একাধিক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে ৷ সেই সব কমিটির সুপারিশ ও নির্দেশে পাঁচিল নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে ৷
বিবৃতিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে উপাচার্য এবং কর্তৃপক্ষকে ৷ কর্তৃপক্ষের তরফে সতর্কতা জারি করার পরও এই ঘটনা ঘটে ৷ আশ্রমিক এবং অন্য যাঁরা রবীন্দ্র আদর্শের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ভাবলে আমরা বাধিত হব ৷
উপরে উল্লেখিত বিবৃতির সঙ্গে একটি রিপোর্টও জুড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ ৷ 2004 থেকে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন এলাকায় কেন পাঁচিল বা ব্যরিকেড দেওয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্য এই রিপোর্টে রয়েছে ৷ সেখানে উল্লেখ -
1. নিম্নলিখিত কারণে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন এলাকায় পাঁচিল বা বেড়া দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনা বা তা নিয়ে বিশেষ একটা আলোচনা করা হয়নি ৷
2. বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ 22 কিলোমিটারের বেশি এলাকা এবং মূল মূল এলাকাগুলিকে প্রায় ঘিরে ফেলা হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে 3 কিলোমিটার পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার কাজ করছে ৷ আরও 5 কিলোমিটার পাঁচিল দিয়ে ঘেরার পরিকল্পনা রয়েছে ৷
3. 2004 সাল পর্যন্ত কয়েকটি বিশেষ ভবন ও এলাকা যেমন রবীন্দ্রভবন, চিনা ভবন, মেয়েদের হস্টেলগুলি, 2-3 খেলার মাঠ ছাড়া বিশ্বভারতী চত্বরে আর কোথাও কোনও পাঁচিল ছিল না ৷
4. 2004 সালের মার্চে নোবেল চুরির ঘটনা ঘটে ৷ এরপর একাধিক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনধিকার প্রবেশ রুখতে কাজ করে ৷ প্রথম এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা করেছিল হাই পাওয়ার্ড এক্সপার্ট কমিটি অন সিকিউরিটি (2004) ৷ কমিটির মাথায় ছিলেন CBI-এর প্রাক্তন জয়েন্ট ডিরেক্টর ৷ এছাড়াও কমিটিতে ছিলেন রিটায়ার্ড IAS হরিপদ রায়, KoPT-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান, রিটায়ার্ড ব্রিগেডিয়ার এস কে ভট্টাচার্য এবং ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রাক্তন ডিরেক্টর-সেক্রেটারি শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী ৷ এরপর রিপোর্ট জমা করেছিল UGC কমিটি অন অগমেন্টেশন অফ সিকিউরিটি ইন বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস (2004) ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই প্রেক্ষিতে 2005 থেকে 2025 সাল পর্যন্ত 20 বছরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ৷ এছাড়া 2006 সালের 26 ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের তরফে সংকল্প নেওয়া হয়েছিল ৷