সোনামুখী, 29 অক্টোবর : সালটা তখন ইংরাজির 1742 এবং বাংলার 1149 ৷ বর্গীদের একটা দল-সহ মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত তৎকালীন মল্লগড় অর্থাৎ আজকের বিষ্ণুপুর থেকে আরেক মল্ল সাম্রাজ্য সোনামুখীতে আসে । বর্গীদের দল এখানে এসে লুঠপাট চালানোর জন্য বাদ্যভাণ্ড-সহ ভগবান শিবের নাম উচ্চারণ করতে করতে সোনামুখীর রানীবাজারের মা কালীর মন্দিরের সামনে এসে জড়ো হত । এখন নগরায়নের মোড়কে ঘেরা সোনামুখী শহর সেই সময় ঘন জঙ্গল ও আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল ৷ গাছপালা ঘেরা এই জায়গাতেই তখন বিরাজ করতেন মা কালী ।
একটা সময় ছিল যখন দিনে দুপুরেও এই মন্দিরের সামনে আসতে সাহস পেতেন না কেউ । দিবালোকেও এই অঞ্চলের মানুষজন বর্গীদের ভয়ে নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখতেন । এভাবেই চলতে চলতে একদিন লুঠপাট শেষ হওয়ার পর আনন্দে বর্গীদের দল বাজনা বাজিয়ে নাচ গান করছিল । ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধা মায়ের ঘরের সামনে সন্ধ্যা প্রদীপ রেখে বলিদানের হাড়িকাঠে প্রণাম করছিলেন ৷ ঠিক তখন মারাঠা সর্দার ভাস্কর সেনাপতি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত ওই বৃদ্ধাকে বলি দিতে উদ্যত হলে এক দৈবশক্তিতে সেই খাঁড়া আর নিচে নামল না ৷ সর্দার ভাবলেন, কেউ যেন একটা পিছন থেকে টান দিয়ে ধরে রয়েছে ৷
কিছুক্ষণের মধ্যেই বলি দিতে উদ্যত হতে যাওয়া ভাস্কর পণ্ডিত হঠাৎই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং দৈবশক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধাকে বলি থেকে বিরত হন । বৃদ্ধা প্রণাম সেরে উঠে দাঁড়াতেই সমস্ত বিষয়টা বুঝতে পেরে মায়ের ঘট থেকে জল নিয়ে এসে সর্দারের চোখে দিতেই তিনি পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান ৷ এরপর মারাঠা সর্দার ওই বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করেন এখানে কোন দেবী বাস করেন ? বৃদ্ধা উত্তর দেন মা কালী । তখন সঙ্গে সঙ্গে সর্দার হিন্দিতে বলে ওঠেন "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায় ৷"