পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কমছে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান, সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার-ডেকরেটর্সরা - Corona effect

করোনা আবহে, এই দুই বছরে বিয়েবাড়ি কমেছে ৷ বেশিরভাগ রেজিস্ট্রি করেই বিয়ে সারছে ৷ কারণ 50 জনের বেশি তো লোক বলা হচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকারের নির্দেশ তেমনটাই ৷ তাই অনেকে নমনম করেই বিয়ে সারছে ৷ শুধু বিয়ে কেন ? সমস্ত অনুষ্ঠানই বন্ধ ৷ তাহলে এই পরিস্থিতিতে ওই ফুল বিক্রেতা, ডেকরেটর্স ব্যবসায়ী, ক্যাটারার ব্যবসায়ীরা কেমন আছেন ? পেট কীভাবে চলছে তাঁদের ?

সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার,ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীরা
সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার,ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীরা

By

Published : Jul 13, 2021, 4:20 PM IST

বাঁকুড়া, 13 জুলাই : বিয়ে ৷ শব্দটার মধ্যেই রয়েছে দুটো মনের মিলন ৷ চার হাত এক হওয়া ৷ বিয়ে মানে টুকটুকে লাল বেনারসি, গায়ে গয়না, পান পাতায় ঢাকা লজ্জা মুখে কনে ৷ অন্যদিকে, আড় চোখে হবু বউকে দেখে নেওয়ার চেষ্টায় বর ৷ সানাইয়ের সুর, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনিতে মালাবদল থেকে সিঁদুরদান... বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন... হাসি, ঠাট্টা, খাওয়া-দাওয়া সবটা নিয়ে বিয়ে ৷ বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড় ৷ নানা আচার-অনুষ্ঠান ৷ সব নিয়ম-রীতি মানার পর দুটি হৃদয় এক হয় ৷ তবে বিয়ে মানে কি শুধু দুটি মানুষ আর তাদের ঘিরে থাকা আত্মীয়-স্বজন ? একটা বিয়ের সঙ্গে কিন্তু আরও অনেকে জড়িয়ে রয়েছে ৷ যাঁদের ছাড়া আমাদের চলবে না ৷

বিয়ে তো হবে ৷ তার জন্য মণ্ডপ সজ্জার প্রয়োজন ৷ আগে-পরে খাওয়ার জন্য তো বাড়ির ছাদে কিংবা উঠোনে প্যান্ডেল করতে হবে ৷ আর বাড়িতে যে এত আত্মীয়-স্বজন ৷ তাদের থাকার জন্য তোষকও দরকার ৷ শীতকাল হলে তো কথাই নেই ৷ সেই সময় আবার কম্বলও লাগে ৷ কিন্তু এত কিছু জোগাড় হবে কীভাবে ? তার জন্য আছে ডেকরেটার্স ৷ চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে প্যান্ডেল বাঁধা...তোষক,বালিশ,কম্বল সবকিছু তাদের কাছ থেকে ভাড়া পাওয়া যায় ৷ শুধু কি তাই ? খাওয়া-দাওয়ার জন্য ক্যাটারার, মালাবদল কিংবা বিয়ের জায়গা হোক বা বরের গাড়ি সাজানোর জন্য তো ফুল দরকার ৷ তার জন্য ফুল ব্যবসায়ী আছে ৷ আর পুরোহিত ছাড়া তো বিয়েই হবে না ৷ দেখতে গেলে একটা বিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার পিছনে কিন্তু অনেকে আছে ৷

আরও পড়ুন,কাটা হবে বাঁকুড়ার ব্রিটিশ আমলের সারি সারি তালগাছ, বাঁচাতে আন্দোলন

কিন্তু করোনা আবহে, এই দুই বছরে বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়া কমেছে ৷ বেশিরভাগ রেজিস্ট্রি করেই বিয়ে সারছে ৷ কারণ 50 জনের বেশি তো লোক বলা হচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকারের নির্দেশ তেমনটাই ৷ তাই অনেকে নমনম করেই বিয়ে সারছে ৷ শুধু বিয়ে কেন ? সমস্ত অনুষ্ঠানই বন্ধ ৷ তাহলে এই পরিস্থিতিতে ওই ফুল বিক্রেতা, ডেকরেটার্স ব্যবসায়ী, ক্যাটারার ব্যবসায়ীরা কেমন আছেন ? পেট কীভাবে চলছে তাঁদের ?

খদ্দেরের অপেক্ষায় ফুল ব্যবসায়ীরা

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর করোনার কারণে বিয়েবাড়ি বন্ধ রয়েছে । সানাইের সুরে বা কিশোর কুমারের গান দিয়ে সজ্জিত বিয়ের মণ্ডপ খুব কম চোখ পড়ে ৷ করোনা আতঙ্কে বিয়েবাড়িটাও নিয়মমাফিক হয়ে গিয়েছে ৷ ফলে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানের সঙ্গে যে মানুষগুলোর জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে, তাদের হাল এখন বেহাল ৷ ব্যবসা সেরকম নেই ৷ চেনা ছন্দের কাজকর্ম এখন আর নেই ৷ নমো নমো করে কিছুটা চললেও তা জীবনকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিন্দুমাত্র । বাঁকুড়া জেলাতেও সেই একই ছবি ৷ এক ফুল ব্যবসায়ী জানান, "একটা সময় বিয়ে বাড়ির মরসুমে তাদের ব্যবসা খুব ভালভাবে চলত ৷ কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে তাদের বাড়ি ভাড়া বা দোকান ভাড়া দিতেও সমস্যা হচ্ছে ৷ " তবুও তারা পসার সাজিয়ে বসে আছে খদ্দেরের অপেক্ষায় ৷"

চেয়ারগুলো আর বিয়েবাড়িতে যাচ্ছে না ৷ থরে থরে সাজানো চেয়ারগুলিতে জমছে ধুলো

আরও পড়ুন,গত হয়েছে ম্যাটিনি-ইভনিং-নাইট, মনকেমনের সাক্ষী রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য চণ্ডীদাস চিত্র মন্দির

মাঝে টুকটাক ব্যবসা শুরু হলেও ফের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রায় বন্ধ হতে বসেছে ব্যবসা ৷ এক ডেকরেটর্স ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য জানান, দুই বছর ধরে সমস্যায় রয়েছি ৷ 2020 সালে করোনার আগে মাত্র দুই মাস কাজ করেছি ৷ তারপর থেকে খুব কম কাজ হয়েছে ৷ বিয়েবাড়ি লোকে সেরকমভাবে করতে চাইছে না ৷ আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয় ৷ সংসার যে কীভাবে চলছে তা ঈশ্বরই একমাত্র জানেন ৷ আমরা যারা সারা বছর এই ব্যবসার উপর নির্ভর করে দিন কাটাই, তাদের পক্ষে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে ৷ একইভাবে সমস্যায় পড়েছেন রাঁধুনি, ক্যাটারার ব্যবসায়ীরা ৷

কমছে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান, সমস্যায় ফুল ব্যবসায়ী থেকে ক্যাটারার, ডেকরেটর্স ব্যবসায়ীরা

অন্যদিকে, পুরোহিতদের অবস্থাও শোচনীয় ৷ রেজিস্ট্রি হলে তো পুরোহিত লাগে না ৷ তাছাড়া মন্দিরে যে বিয়ে হত, সেগুলিও বন্ধ ৷ করোনার আতঙ্কে লোকে মন্দিরে আসতে চাইছে না ৷ তাছাড়া আরও যে শুভ অনুষ্ঠান রয়েছে সেগুলিও হচ্ছে না ৷ এমনই জানালেন পরেশ দেওঘুরিয়া নামে এক পুরোহিত ৷ এই মানুষগুলোর এখন একটাই দাবি, সরকারি সাহায্য ৷ সরকার যেন তাদের দিকে একটু মুখ তুলে চায় ৷ তাঁদের এখন একটাই চাওয়া ৷ খুব তাড়াতাড়ি সেরে উঠুক পৃথিবী ৷ তাঁরা যাতে সেই চেনা ছন্দে ফিরে যেতে পারেন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details