কলকাতা, 31 ডিসেম্বর:"আমি পেলেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর সময়ই বলেছিলাম,আজ গোল করলে পেলের অনুকরনে সেলিব্রেশন করব । তাই গোল করে সুহেরের দিকে ছুটে গিয়েছিলাম ৷" ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভার এই উক্তি আসলে যেকোনও ফুটবলারের মনের কথা । ফুটবল সম্রাট প্রয়াত (Death of Pele)৷ আটচল্লিশ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে । কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সম্রাট নেই । বিশ্বজুড়ে শোকের আবহে প্রথামাফিক শোকঞ্জাপন করছেন সবাই । একই সঙ্গে তাঁরা শপথ নিচ্ছেন সম্রাটের ফুটবল শৈলীকে বহন করার(Remembering the skill and legacy of Pele) ।
সোশাল মিডিয়ায় পেলের ফুটবল স্কিলের ঝলকের ক্লিপিংস সবাই পোস্ট করছেন এখন । আর একই সঙ্গে সবাই বিস্মিত তাঁরা। কারণ বর্তমান সময়ে যেসব স্কিল দেখে আমরা বিস্মিত হই তা পেলে তাঁর খেলোয়াড় জীবনে করে দেখিয়েছেন । তাই এটা বললে অত্যুক্তি হবে না,পেলে আসার আগে ফুটবল ছিল শুধু একটা খেলা । শিল্প নয়, বিনোদনও নয় । যে 17 বছরের ছেলেটি দারিদ্রের কষাঘাত উপেক্ষা করে বিমান চালক হতে চেয়েছিলেন, জীবন শেষে তিনি ফুটবল আকাশের শ্রেষ্ঠ পাইলট হয়ে রয়ে গেলেন (Legacy of Pele)।
যে 17 বছরের ছেলেটি দারিদ্রের কষাঘাত উপেক্ষা করে বিমান চালক হতে চেয়েছিলেন, জীবন শেষে তিনি ফুটবল আকাশের শ্রেষ্ঠ পাইলট হয়ে রয়ে গেলেন ফুটবলে দশ নম্বর জার্সিটি দলের সেরা ফুটবলারের গায়ে ওঠে । জানলে বিস্মিত হতে হয় পেলে তাঁর দশ নম্বর জার্সিটি নিজে বেছে নেননি । 1958 সালে সুইডেন বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের জার্সিতে কোনও নম্বর ছিল না । ফিফাই নম্বরগুলো বেছে দিয়েছিল । পেলের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল 10 নম্বর জার্সিটি । কাকতলীয় হলেও সত্যি 10 নম্বর জার্সিটি পেলের জন্যই রাখা হয়েছিল । ফুটবল দেবতা নিশ্চয় জানাতেন আজকের এই ছেলেটি আগামী দিনে বিশ্বকে শাসন করবে । হয়ে উঠবে আদি এবং অকৃত্রিম সম্রাট ।
ব্রাজিল সেবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে পেলে আর জার্সিটি ছাড়েননি । তারপর থেকে দলের দশ নম্বর জার্সির মালিক মানেই তাঁকে সর্বোচ্চ মানের ফুটবল উপহার দিতে হবে । যা হবে স্বর্গীয় । পেলে এই দশ নম্বর জার্সিটিকে অমরত্ব দিয়েছেন । তা ভগীরথ হয়ে বয়ে চলেছেন মারাদোনা, জিকো-জিদান-রোনাল্ডিনহো-মেসি-নেমাররা । সময় বদলায় পেলের ফুটবল মাহাত্ম বদল হয় না । প্রজন্মের পর প্রজন্ম পেলেয়ানায় মুগ্ধ তথা বিস্মিত ।
পুসকাস বলে গিয়েছেন,"সর্বকালের সেরা ফুটবলার দি স্তেফানো । পেলেকে আমি ফুটবলার ধরি না। কারণ ও সবকিছুর ওপরে।" পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির লম্বা মানুষটি দীর্ঘদেহী নন । কিন্তু স্কিল-স্ট্যামিনা-পাওয়ার সব কিছুতেই তিনি সবার আগে । যেন তিনি ফুটবলের একটি ম্যানুয়াল বই । 1978 সালের আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী কোচ সিজার মেনেত্তি বলেছিলেন,"পেলে ছিল দি স্তেফানো,মারাদোনা,ক্রুয়েফ,মেসির মিশেল।" জোহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন,“পেলে সমস্ত যুক্তির প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছেন।”
আরও পড়ুন:সবুজ গালিচা থেকে বক্সিং রিং, জীবনের ময়দান ছেড়ে তারার দেশে যে বারো তারকা
ব্রাজিলিয়ান কবি ফুটবল সম্রাটকে নিয়ে লেখা গানে বলেছেন,"পেলে জন্মেছিলেন সেরা হওয়ার জন্য/বিঠোফেন যেমন সঙ্গীতে/ মাইকেল অ্যাঞ্জেলো যেমন ছবি আঁকার জন্য জন্মেছিলেন।" আর পেলে, নিজের সম্পর্কে তিনি কী বলেছিলেন? ফুটবল সম্রাট বলেছিলেন, "আমি জন্মেইছিলাম ফুটবল খেলার জন্য ৷ ঠিক যেমন বিঠোফেন সঙ্গীত, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো ছবি আঁকার জন্য জন্মেছিলেন।" কোথায় যেন কবির কলম সম্রাটের ফুটবল এক হয়ে যায় । তাই তো সময় বদলায় কিন্তু সম্রাট থেকে যান সিংহাসনেই ।