কলকাতা, 9 অক্টোবর : একমাত্র অনুশীলনেই আসে সাফল্য ৷ নিউ নর্মাল লাইফে এটাই ভৈরবী রায়ের মন্ত্র । জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ির পশ্চিম মল্লিকপাড়া থেকে সাউথ এশিয়ান গেমসের পোডিয়ামে পৌঁছানোর যাত্রাপথটা অনেক দীর্ঘ । কিন্তু ইচ্ছাশক্তির সামনে সমস্ত বাধাই পার কারা যায় । তাই কৃষিকাজে ব্যস্ত বাবা উকিল রায় এবং অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে ব্যস্ত মায়ের অন্য ভাবনা থাকলেও অ্যাথলেটিক্সে ভর দিয়ে জীবনকে অন্যভাবে সাজাতে চেয়েছেন তিনি ।
লখনউতে আন্তঃরাজ্য অ্যাথলেটিক্স মিটের ট্রিপল জাম্পে সোনা, পুণেতে সর্বভারতীয় রেল অ্যাথলেটিক্সে প্রথম, রাঁচিতে ওপেন ন্যাশনালে সোনা যখন আরও বড় স্বপ্নের দিকে তাকানোর সাহস দিচ্ছে তখনই কোরোনা ভাইরাসের থাবা । যা অন্য সবার মত ভৈরবীকেও থমকে দিয়েছে ।
নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসের ট্রিপল জাম্পে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ার পর চলতি বছরে আরও ভালো পারফরম্যান্সকে পাখির চোখ করেছিলেন ভৈরবী । বলেন, "এমন একটা পরিস্থিতি যে কারও কিছু করার নেই" । আপাতত বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দশটা-পাঁচটা অফিস আর রাস্তায় অনুশীলন করেই ন্যূনতম শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি । বলেন, "আমার ইভেন্টের জন্য পিট দরকার । কিন্তু রাস্তায় তা পাব কোথায় । এখন হয়ত কুড়ি শতাংশের মতো ফিটনেস রয়েছে আমার" ।
কলকাতায় সাধারণত SAI ক্যাম্পাসে সাধারণত থাকেন । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণের জেরে সেই দরজা বন্ধ । হস্টেল পর্যন্ত খালি করে দিতে হয়েছে । ফলে বাসস্থান এবং অনুশীলনের সুযোগ দুটোই হাতছাড়া হয়েছে প্রতিভাবান অ্যাথলিটের । আপাতত বাড়িভাড়া করে থাকছেন । "অন্যরা কীভাবে অনুশীলন করছে জানি না । আমি সল্টলেকের রাস্তায় করছি । গাড়ি-ঘোড়া সামলেই করতে হচ্ছে । যাতে চোট কিংবা দূর্ঘটনা না হয়", বলছিলেন বাংলার এই অ্যাথলিট । একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, "ফুটবলের জন্য সল্টলেক স্টেডিয়াম খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে । আর আমাদের জন্য কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে না তা জানি না । অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানানো হয়নি । তবে হলে তো সুবিধা হত আমাদের । প্রস্তুতি তো চালাতে হচ্ছে ।"
ভালো সময়ের প্রত্যাশায় ভৈরবী মার্চের শেষ সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর ধুপগুড়িতে চলে গিয়েছিলেন ভৈরবী । সেখানে ঘরবন্দী ছিলেন । আনলক পর্বে ফিজ়িক্যাল ট্রেনিং শুরু করেছেন । কোচ সুশান্ত রায় যে সূচি করে দিয়েছিলেন তা দেখেই অনুশীলন করছেন ভৈরবী । অনলাইনে পরামর্শ নিচ্ছেন । কিন্তু তাতে তো জাম্প প্র্যাকটিস করা হচ্ছে না । 2019 সালের সাফল্যের পর ভৈরবী 2020 সালের জন্য নতুন টার্গেট ঠিক করেছিলেন । কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতিতে সবকিছুই পণ্ড । শুনছেন আগামী বছরের মার্চ মাসে প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে । "অ্যাথলিটদের সারা বছর অনুশীলন দরকার । সেখানে এই অবস্থায় আমরা অসহায়ভাবে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি । মাসের পর মাস নষ্ট হচ্ছে । প্র্যাকটিস করা যাচ্ছে না । প্রতিযোগিতা মার্চ মাসে শুরু হলে তার জন্য প্রস্তুতি দরকার । এই সমস্যা সবার । কী হবে জানি না", অসহায় শোনায় ভৈরবীর গলা ।
সপ্তাহে দু'দিন অফিস আসতে হচ্ছে । না হলে রাস্তায় অনুশীলন করে বাড়িতে সিনেমা দেখে, গল্পের বই পড়ে, রান্না করে সময় কাটছে ভেরবীর । মাঝে পরিবারের একজনের মৃত্যু হওয়ার জলপাইগুড়ি গিয়েছিলেন । ফিরে ফের দশটা পাঁচটার অফিস । ভালো সময়ের প্রত্যাশায় ভৈরবী ।