কলকাতা, 24 এপ্রিল: গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত, এই ছয় ঋতু আর সচিন তেন্ডুলকর ৷ সকল ভারতীয়ের কাছে দুই সমার্থক ৷ 1989 সালে ভারতের হয়ে অভিষেক থেকে 2013 সালে ওয়াংখেড়েতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ৷ দীর্ঘ এই 24 বছর এবং তার পরেও সচিনের জনপ্রিয়তা ভারত তথা ভূ-বিশ্বে এতটূকুও কমেনি ৷ ক্রিকেট থেকে অবসরের 10 বছর পরেও দেশের সকল ক্রিকেট অনুরাগী একবার সচিন দর্শনের জন্য আকুল হয়ে ওঠেন ৷ ভারতের তথা বিশ্ব ক্রিকেটের ঈশ্বর আজ 50 বছর পূর্ণ করলেন ৷ সচিন রমেশ তেন্ডুলকর ৷ এই নামটার সঙ্গে ইংরেজির ‘এ-জেড’ এই 24টি বর্ণমালার প্রতিটির কোনও না কোনও যোগ রয়েছে ৷ কিংবদন্তীর জীবনের হাফসেঞ্চুরিতে দেখে নেওয়া যাক সচিনের সেই সব কাহিনীর ঝলক ৷
এ- অঞ্জলি, অর্জুন এবং অজিত
মাস্টার ব্লাস্টারের জীবনে তাঁর সবচেয়ে কাছে বন্ধুটি হলেন, তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি তেন্ডুলকর ৷ যা তিনি শুরুর দিন থেকে বলে আসছেন ৷ আর তাঁর ছেলে অর্জুন বাবার মতো না হলেও, ক্রিকেট মাঠে বাবার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছেন ৷ 23 বছরের অর্জুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক না করলেও ৷ আইপিএল-এ নিজের প্রভাব ফেলছেন ৷ সেখানেই সচিনের জীবনের তিন নম্বর ‘এ’ হলেন, তাঁর দাদা অজিত রমেশ তেন্ডুলকর ৷ যার পরিশ্রম না থাকলে ভারত হয়তো আজকের এই ক্রিকেট ঈশ্বরকে পেত না ৷
বি- ব্রিস্টল
ব্রিস্টলের মাঠে সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকরের সবসময় একটা আবেগপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং থাকবে ৷ কেনিয়ার বিরুদ্ধে এই মাঠেই সচিন 140 রানের ইনিংস খেলেছিলেন ৷ তবে, তার থেকেও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ, বাবা অধ্যাপক রমেশ তেন্ডুলকরের মৃত্যুর এক সপ্তাহেরও কম সময়ে সেই সেঞ্চুরি করেছিলেন সচিন ৷
সি- সেঞ্চুরিয়ন
দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নের স্টেডিয়ামে সচিন তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ওয়ান ডে ইনিংস খেলেছিলেন ৷ 2003 বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 98 রানের ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলেন সচিন ৷ যে ম্যাচে শোয়েব আখতারকে পয়েন্টের উপর দিয়ে কাট শটে মারা ছয় আজও অধিকাংশ ভারতীয়র স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ৷
ডি- ডন ব্র্যাডম্যান
স্যার ডন ব্র্যাডম্যান তাঁর 99.94 গড়ের জন্য চিরকাল 'সর্বশ্রেষ্ঠ' হয়ে থাকবেন ৷ কিন্তু, সচিন সাক্ষাতে এই অজি যখন বলেছিলেন, ‘‘এই ছোট্ট ছেলেটার ব্যাটিংয়ের ধরন তাঁর সঙ্গে মেলে ৷’’ আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাট কে ? এই প্রশ্নের ইতি হয়ে গিয়েছিল সেদিনই ৷
ই- ইডেন গার্ডেন্স
সচিনে 200 তম টেস্ট এবং বিশ্বকাপ জয়ের মাঠ ওয়াংখেড়ে, তাঁর প্রাণ হতে পারে ৷ কিন্তু, ইডেন গার্ডেন্স, যেখানে সচিন তাঁর 199 তম টেস্ট খেলেছিলেন ৷ সেই ইডেন সচিনের অন্যতম প্রিয় মাঠগুলির মধ্যে একটা ৷ 1993 সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হিরো কাপের সেমিফাইনালে মহাকাব্যিক শেষ ওভারে সচিনের বোলিং চিরস্মরণীয় ৷ সেদিন বোলার সচিনের সুপারস্টারডন দেখেছিল বিশ্ব ক্রিকেট ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাত্র 195 রান ডিফেন্ড করেছিল ভারত ৷ 50 নম্বর ওভারে সচিন মাত্র 3 রান দিয়েছিলেন ৷ আর সেই সঙ্গে প্রোটিয়াদের 9 উইকেটে 193 রানে আটকে দেন ৷
এফ- ফেরারি
সচিনের প্রিয় গাড়ি এবং তাঁর প্রিয় দল ফর্মুলা ওয়ান ৷ তিনি প্রথম ভারতীয় যিনি ফেরারি গর্বিত মালিক ছিলেন ৷ যখন 2002 সালে সংস্থার তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মাস্টার ব্লাস্টারকে লাল উজ্জ্বল রঙের ফেরারি উপহার দেওয়া হবে ৷ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের 29টি সেঞ্চুরির রেকর্ড স্পর্শ করার পর এই উপহার দিয়েছিল সংস্থা ৷
জি- গুজরানওয়ালা
তেন্ডুলকর 49টি শতরানের সঙ্গে তাঁর ওয়ান ডে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ৷ কিন্তু তাঁর 463টি ওয়ান ডে ম্যাচের প্রথমটি পাকিস্তানের এই শহরেই খেলেছিলেন মাস্টার ৷ কতরান করেছিলেন ওয়ান ডে অভিষেকে ? স্কোরারকে উনি কোনও কষ্ট করতে দেননি ৷
এইচ- হ্যারিস শিল্ড
মুম্বইয়ের বিখ্যাত ইন্টার-স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হ্যারিস শিল্ড ৷ এই টুর্নামেন্টেই বিশ্ব প্রথম জেনেছিল সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের নাম ৷ যখন তিনি বন্ধু তথা সতীর্থ বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে 664 রানের পার্টনারশিপ করেন ৷
আই- ইনজামাম-উল-হক
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়কের কাছে একটি মজার গল্প আছে বলার জন্য ৷ তাঁর ছেলে ইবতিসাম বাবার নয়, সচিন তেন্ডুলকরের বড় ভক্ত ৷ 2004 সালের পাকিস্তান সফরের সময় ইনিজি তাঁর স্কুলে পড়া ছেলেকে সচিনের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন, ভারতের অনুশীলনের সময় ৷
জে- জন ম্যাকেনরো
সচিন তেন্ডুলকর একজন টেনিস প্রেমিক ৷ তাঁর কিশোর বয়সে, সচিন আমেরিকান জন ম্যাকেনরোর একজন বড় ভক্ত ছিলেন ৷ প্রবীণদের মতে, 80-এর দশকের গোড়ার দিকে ম্যাকেনরোর মতো, কোঁকড়া চুলের ভারতীয় প্রতিভাকে লাল হেডব্যান্ড পরে, তাঁর হাউজিং সোসাইটির চারপাশে ঘুরতে দেখা যেত ৷
কে- বিনোদ কাম্বলি
সচিনের শৈশবের বন্ধু কাম্বলি হ্যারিস শিল্ডে 664 রানের বিশ্ব রেকর্ডের তাঁর সঙ্গী ছিলেন ৷ আর সচিনকে নিয়ে কাম্বলির একটি মন্তব্য আজও সেরা ৷ তা হল- ‘‘সচিন লিফ্টে চড়ে উপরে উঠে গেল ৷ আর আমাকে ওঠার জন্য সিঁড়ি ভাঙতে হল ৷’’
এল- ব্রায়ান লারা
সচিন না লারা, দুজনের মধ্যে কে বড় ক্রিকেটার ? তা নিয়ে বিতর্ক আগেও ছিল, আজও রয়েছে ৷ কিন্তু, সচিনের ব্যাটিং ক্লাস যাঁরা উপভোগ করেছেন ৷ তাঁরা একইভাবে ব্রায়ান লারার পাঞ্চও উপভোগ করেছেন ৷ এই দুই কিংবদন্তী 90 দশক থেকে বিশ্ব ক্রিকেটকে এক নতুন আলো দেখিয়েছিলেন ৷ আর সেই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও সৌন্দর্য নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা ৷
এম- গ্লেন ম্যাকগ্রা
তেন্ডুলকর বনাম ম্যাকগ্রার দ্বৈরথ ছিল সেই প্রতিযোগিতা, যা টেস্ট ক্রিকেটকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল ৷ এই দুই মাস্টার যখ একে অপরের মুখোমুখি হতেন,তখন নিজেদের সেরাটা উজার কর দিতেন ৷ এমনকি একইঞ্চি জমিও একে অপরকে ছাড়তেন না সহজে ৷