কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : IPL-এর দামামা বেজে গেছে ইতিমধ্যে । সিগনেচার টোন বেজে ওঠার মধ্যে দিয়েই মরুশহরে IPL-এর বল গড়াবে । আরব দুনিয়ায় ক্রিকেট এবং বিনোদনের প্যাকেজ সমৃদ্ধ ক্রিকেট আদতে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ক্রীড়া দুনিয়ার জেগে উঠতে চাওয়ার প্রয়াস । যা গত ছয় মাসের স্তব্ধতার মধ্যে জয়ের গন্ধও বটে । ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী লিগে অংশ নিতে সেরা ক্রিকেটাররা ভিড় করেছেন । মরুদেশের গরম, কোরোনা ভাইরাসের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে IPL-এ আলো জ্বলবে। প্রথম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মুখোমুখি চেন্নাই সুপার কিংস ।
অনেক সময় ম্যাচের প্রেক্ষাপটের চেয়ে কুশীলবের ছায়া দীর্ঘতর হয়ে ওঠে । শনিবাসরীয় দুবাই সেই রকম এক মাহেন্দ্রক্ষণের সামনে । বাইশগজে অবতীর্ণ হবেন মহেন্দ্র সিং ধোনি । চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় সবাইকে চমকে দিয়ে অবসর ঘোষণা মাহির । নিজের ইনস্টাগ্রামে মুকেশের গানের কলি ভাজতে ভাজতে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা জানিয়েছিলেন কর্নেল মাহি । চিপক স্টেডিয়ামে চেন্নাই সুপার কিংসের অনুশীলনে ব্যস্ত ক্রিকেটাররা সে দিন এই বিষয়ে আন্দাজ করেছিলেন । তা যে বাস্তব হয়ে দাঁড়াবে তা কেউ সেদিন ভাবতে পারেননি । তবে আমজনতা ধোনির অবসরের আচমকা ঘোষণায় চমকে গিয়েছিলেন ।
ম্যানুয়াল নির্ভর করে ক্রিকেট খেলা নয় । বরং ম্যানুয়ালকে নিজের মত করে গড়ে নিয়েছিলেন তিনি । ছকভাঙা ক্রিকেট ধোনির USP।
তাঁর বেহমেনিয়ান কিন্তু হিসেবের আলতো ছোয়ার ক্রিকেটীয় শৌর্য, ওদের মাঠ থেকে মাঠে ছুটিয়ে বেরিয়েছে । ওদের মানে, চেন্নাইয়ের সারভানন, মোহালির রামবাবু সবকিছু ছেড়ে এমাঠ-ওমাঠ করে বেড়ান শুধু ধোনির টানে। সুপার ফ্যান সারভানন আদতে চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থক। সারা গায়ে হলুদ রং রাঙিয়ে মাঠে আসেন । এইভাবেই ধোনির খেলার প্রতি ভালোলাগা এবং পরে প্রেম । 2009 সাল থেকে ভারতের খেলা দেখতে আসতে শুরু করেছিলেন তিনি ।
আরও পড়ুন :IPL 2020 : ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের COVID রিপোর্ট নেগেটিভ
মোহালির রামবাবু ধোনির বড় সমর্থক । বছর আঠাশের যুবক ভারতীয় দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান । বিদেশেও গিয়েছেন । এক সময় রামবাবুর চিকিৎসার ব্যয় বহন করেছিলেন ধোনি । এইসব ভক্তরা পনেরো অগাস্টের সন্ধ্যা সাতটা উনত্রিশ মিনিটের ঘোষণা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন । জীবন থমকে গিয়েছিল । তারা বিশ্বাস করতে পারেননি মাহিভাই ক্রিকেট বাইশগজে দেশের জার্সিতে আর নামবেন না । এদের সমর্থনের ব্যাকুলতার পেছনের গল্প নিয়ে আস্ত বই লেখা যেতে পারে । সারা দেহে রং মেখে মাঠে আসতেন । এই রঙিন হতে তাদের যে হ্যাপা পোহাতে হত তা কথায় বোঝানো যাবে না । বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচ হলে কার্যত পাঁচ দিন ঘুমোতে পারতেন না ওরা । শেহবাগ বলছেন, এ-বছরের IPL-এ ধোনির পারফরম্যান্স সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ওয়াসিম আক্রম বলছেন তিনি ফিনিশার ধোনির বিরুদ্ধে বল করতে গেলে চিন্তায় পড়তেন । আসলে ছকভাঙা ক্রিকেটে রাশ টানার কৌশল ঠিক করতে গিয়ে বারবার কালঘাম ছুটেছে প্রতিপক্ষের।
ধোনির ছোটবেলার কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, সাহস এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের ক্রিকেটকে বদলে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ধোনির মধ্যে। ষোলো বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা বারবার সামনে এসেছে । নিজের প্রিয় ছাত্রের IPL অভিযান দেখতে তিনি টিভির সামনে বসবেন । " আসলে কী জানেন, মাহির খেলা দেখার সুযোগ আর বেশি তো নেই । IPL-এ দেখা যাবে । তাই মিস করব না ।" বলছিলেন কেশব স্যার ।
আরও পড়ুন :IPL ভালোবাসি, ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ : পিটারসন
ধোনির ব্যাটিং আর হেলিকপ্টার শট একে অপরের সমার্থক । সমালোচকরা বলছেন হেলিকপ্টার শটের জনক নন ধোনি । আগেও বহু ক্রিকেটার এই শটটি মেরেছেন । তবে তাঁরা সকলেই একমত যে, ধোনির হাতে পড়ে হেলিকপ্টার শটটি নতুন মাত্রা পেয়েছে । বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে । মরুদেশে বিধ্বংসী ক্রিকেট মানেই সচিন তেন্ডুলকরের বিধ্বংসী ইনিংসের স্মৃতি । চলতি IPL-এ হয়তো তা ফিরে আসবে ধোনিবাদের হাত ধরে । সেখানে হেলিকপ্টার শট কিংবা নতুন কোনও শট নতুনদের সামনে ইম্প্রোভাইজ়েশনের নতুন পথ দেখাবে । যা নিউ নর্মাল ক্রিকেটের ম্যানুয়ালে নতুন পাতা যোগ করবে ।
আমাচি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স নাকি চেন্নাইয়ের হুইসেল পডু ! এই সবকিছুকে ছাপিয়ে এখন IPL-এর প্রথম ম্যাচে এবার শুধু মাহিয়ানা, যা দেখতে ভিড় করবেন সারভানন, রামবাবুরা ।