কলকাতা, 15 ফেব্রুয়ারি : সময়টা 1945 ৷ সে বছর অগস্ট মাসে কলম্বিয়া থেকে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হল 14 বছরের এক কিশোরীর ৷ সে গেয়েছিল গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে আধুনিক গান 'তুমি ফিরায়ে দিয়াছ' ও 'তোমার আকাশে ঝিলমিল করে'৷ এরপর আর তাকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ৷ 1948 সালে রাইচাঁদ বড়ালের সুরে অঞ্জনগড় ও রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় সমাপিকা ছবিতে মিলল প্লেব্যাক করার সুযোগ ৷ বাংলা ছবিতে নেপথ্যে গাওয়া শুরু সেখান থেকেই ৷ সে বছরই বেরোল আধুনিক তিনটি গানের রেকর্ড ৷ আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ৷ শুরু হয়ে গেল বাংলা গানের জগতে এক নতুন অধ্যায় ৷ নিখুঁত কণ্ঠে যাকে সাজিয়ে তুললেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ৷ তাঁর পরের পর কালজয়ী গান বাংলা সিনেমার গানে এনে দিল সোনালি যুগ ৷
দীর্ঘ কয়েক দশক উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের জুটি যেমন বাংলা সিনেমায় রাজত্ব করেছে, তেমনই গানের জগতে একাধিপত্ব ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জুটি ৷ তাঁরা বাঙালি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন 'এই পথ যদি না শেষ হয়', 'কে তুমি আমারে ডাকো', 'গানে মোর ইন্দ্রধনু', 'চম্পা চামেলি', 'এ শুধু গানের দিন' - এমনই নানা যুগান্তকারী গান ৷ এ ছাড়াও রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ ও সলিল চৌধুরীর সঙ্গেও বহু কাজ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ৷ তাঁর মধুর কণ্ঠে জনপ্রিয় হয়েছে কালজয়ী সব গান ৷
শিল্পীর জন্ম 1931 সালে 4 অক্টোবর, তাঁর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে ৷ নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও হেমপ্রভা দেবীর 6 সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট ৷ আধুনিক গানের কিংবদন্তি গায়িকা হলেও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমান দক্ষ ছিলেন তিনি ৷ পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, অধ্যাপক এ টি কানন, অধ্যাপক চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে গান শিখেছেন ৷ পেয়েছেন উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান ও তাঁর পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলি খানের সান্নিধ্য ৷
কেরিয়ারের শুরুতেই 1950 সালে মুম্বইতে হিন্দি গান গাওয়া শুরু করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ৷ তারানা ছবিতে একটি গান গেয়েছিলেন তিনি ৷ এরপর 17টি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন ৷ তবে ব্যক্তিগত কিছু কারণে তিনি 1952 সালে কলকাতার বাড়িতে ফিরে আসেন ৷ বাঙালি কবি শ্যামল গুপ্তর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় 1966 সালে ৷ তাঁর অনেক গানের গীতিকার শ্যামল গুপ্ত ৷