কলকাতা : সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু অনেকগুলো প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের । যশ, খ্যাতি, অর্থ এইসবকিছুর হাতছানিকে উপেক্ষা করা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি । শোনা যাচ্ছে যে, মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি । অনুমান, সেই অবসাদের কারণেই নাকি আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত । অভিনেত্রী ও ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট সন্দীপ্তা সেন এই অবসাদ মেটানোর কিছু টিপস দিলেন । কথা বললেন ETV ভারত সিতারার সঙ্গে ।
14 জুন, রবিবার, দুপুর । গোটা দেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে একটি আকস্মিক মৃত্যুসংবাদে । মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাসভবনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত । শোনা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন অভিনেতা । সেই হতাশা এতটাই নাকি বড় আকার ধারণ করেছে, যে যশ, খ্যাতি, লক্ষ লক্ষ ভক্ত, সাফল্য কোনও কিছুই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে । অবলীলায় মৃত্যুকে বরণ করেছেন 34-এর যুবক । অবসাদ এতটাই ভয়ঙ্কর !
এই বিষয়টি ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে তামাম বিনোদন জগতকে । সাধারণ মানুষের মতো তাঁরাও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন । বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি অভিনেত্রী ও ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট সন্দীপ্তা সেনের সঙ্গে । তিনি আমাদের বলেন, "একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে । আমরা এক প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে বাস করছি । আমাদের আগের প্রজন্ম যেভাবে জীবনটাকে নিয়ে বেঁচেছে, আমরা সেভাবে বাঁচতে পারছি না । এখন মানুষ প্রচণ্ড দৌড়চ্ছে । সোশাল মিডিয়াতে শো অফ করে সবাই দেখাচ্ছে তাঁরা কত খুশি । আর আমরা সেই দেখেই এখন মানুষকে জাজ করি ।" মানসিক অবসাদ কাটাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, উত্তরে সন্দীপ্তা বলেন, "এক, যদি মানসিক অবসাদ কাটানোর জন্য কারও ওষুধ চলে, তাঁকে একা থাকতে দেওয়াই উচিত নয় । অনেক সময় মানুষ সাইকোলজিকাল হেল্প নিতে চায় না । কারণ সে বদ্ধপরিকর যে, তাঁর কিছুই হবে না । তখন তাঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের যেভাবে হোক বোঝাতে হবে, যে সে একা নয় এবং সবাই তাঁর পাশে আছে । ঠিক করে বাঁচার জন্য তাঁকে একজন সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে হবে । এটা তাঁকে কনভিন্স করানোটা খুব দরকার । এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।" তিনি আরও বলেন, "দ্বিতীয়ত, কোনও মানুষের যদি ব্যবহারের দিক থেকে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, মানুষটা বদলে গেছে সেটা না ভেবে, জানতে চাওয়া উচিত, সেই মানুষটির কী সমস্যা হয়েছে । প্রথমে হয়তো মানুষটি কিছু বলবেই না । হয়তো রেগে যাবে, এড়িয়ে চলবে, বিশ্রীভাবে কথা বলবে । উলটোদিকের মানুষটাকে কিন্তু সেই ধৈর্য ধরতে হবে । তাঁকে এটা বোঝাতে হবে সে একা নয় ।" বলতে থাকেন সন্দীপ্তা, "তৃতীয়ত, আমাদের জাজমেন্টাল হওয়া বন্ধ করতে হবে । এখন মানুষ প্রচণ্ড জাজমেন্টাল হয়ে উঠেছে । মানুষ যেভাবে ভালো থাকতে চায়, তাঁকে সেভাবে ভালো থাকতে দেওয়া উচিত । এই জাজ করে করে আমরা মানুষকে মানুষের থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছি । তাতে মানুষ অনেক বেশি একা হয়ে যাচ্ছে । তাঁর পরিস্থিতি বুঝতেই পারছি না । এবং চতুর্থত, আমাদের প্রত্যেককে সমব্যাথী হতে হবে । অন্য মানুষের জায়গায় বসে পরিস্থিতিকে বিচার করতে হবে । সেই পরিস্থিতিকে জাজ করার অধিকার কারও নেই । এই কাজটা করা ভীষণ কঠিন । এবং এর জন্য অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন । ইচ্ছের প্রয়োজন ।"অভিনেত্রী এটাও বলেন যে, সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়া মানেই সেই ব্যক্তি পাগল নন । কেউ যদি মনোবিদের কাছে গিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে হালকা হন, তার জন্য তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দূরে সরিয়ে রাখা ঠিক নয়, কাজ কেড়ে নেওয়া ঠিক নয়, মত সন্দীপ্তার । "কেউ কীভাবে তাঁর জীবন কাটাচ্ছে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।", মনে করছেন সন্দীপ্তা । এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগোলে মানসিক অবসাদকে হারানো সহজ হবে, যেটা এই মুহূর্তের অন্যতম বড় সমস্যা যে কোনও মানুষের জীবনে ।