মুম্বই, 11 নভেম্বর: নামের পাশে সম্প্রতি জুড়েছে ‘পদ্মশ্রী’ও ৷ তা সত্ত্বেও বিতর্ক বাঁধানোয় বিরাম নেই ৷ এবার দেশের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের ৷ 1947 সালে নয়, সঠিক অর্থে 2014 সালেই ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি ৷ তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ৷
‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পাওয়ার পর সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে যোগ দেন কঙ্গনা ৷ সেখানে স্বাধীনতা এবং সিপাহি বিদ্রোহের প্রসঙ্গ উঠলে কংগ্রেসকে ব্রিটিশদের বর্ধিত অংশ বলে উল্লেখ করেন তিনি ৷ সেখানে বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেও একসারিতে বসান তিনি ৷
ওই অনুষ্ঠানে কঙ্গনা বলেন, ‘‘সাভারকর, লক্ষ্মীবাঈ এবং নেতাজি বসু জানতেন, রক্তপাত এড়ানো যাবে না ৷ কিন্তু ভারতীয়দের রক্ত বয়ে যাক, তা কখনও চাননি তাঁরা ৷ তাঁরা জানতেন বলেই কড়া মূল্য চুকিয়েছেন ৷ ওটা স্বাধীনতা নয়, ভিক্ষা ছিল ৷ স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায়, তা মিলেছে 2014 সালে ৷’’
আরও পড়ুন:Nawab Malik: মুম্বইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে 'হাইড্রোজেন বোমা' নবাবের, ফুলঝুরি বলল বিজেপি
কঙ্গনার এই মন্তব্যের অংশটুকু নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে ৷ কঙ্গনার সহশিল্পী স্বরা ভাস্কর অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শককেই একহাত নেন । টুইটারে লেখেন, ‘আমি শুধু জানতে চাই, কোন মূর্খগুলো এই মন্তব্যে হাততালি দিচ্ছেন ।’
কঙ্গনাকে একহাত নেন বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধিও । টুইটারে তিনি লেখেন, ‘কখনও মহাত্মা গান্ধির ত্যাগ এবং তপস্যার অবমাননা, কখনও আবার ওঁর খুনির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আর এখন শহিদ মঙ্গল পান্ডে থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীর বলিদানের অপমান করা হচ্ছে । চিন্তাভাবনার এমন প্রতিফলনকে পাগলামি বলব নাকি দেশদ্রোহ ?’
ইতিহাসবিদ এস ইরফান হাবিবের বক্তব্য, ‘‘নির্লজ্জতার চরম উদাহরণ ।’’ আবার কঙ্গনার এমন মন্তব্যে মায়ানগরীর তরফে কোনও প্রতিবাদ নেই কেন, প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের সহ-আহ্বায়ক বিনয়কুমার দোকানিয়া । তিনি লেখেন, ‘প্রিয় বলিউড, মহাত্মা গান্ধি থেকে ভগৎ সিং, মঙ্গল পান্ডে থেকে উধম সিং, দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে সিনেমা তৈরি করে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহানুভবতা পর্দায় ফুটিয়ে তুলে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে তোমাদের । কঙ্গনার মন্তব্যের নিন্দা কখন করবে তোমরা ? আদৌ করবে তো ?’
কঙ্গনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছে আম আদমি পার্টি (আপ)-র জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য প্রীতি শর্মা মেনন ।
আরও পড়ুন:Bonbibi: পার্নোর সঙ্গে রসায়ন একুশের আর্যের, শুটিং শুরু বনবিবির
রাজনীতিতে যোগদানের কোনও অভিপ্রায় নেই বলে জানালেও, শিল্পী এবং জাতীয়তাবাদী হওয়ার দরুণ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে কথা বলা অধিকার রয়েছে বলে জানান কঙ্গনা । কিন্তু তাঁর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমাজ সচেতন মানুষজন । এর আগে, প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল কঙ্গনার বিরুদ্ধে । কেন্দ্রের সমর্থনে কৃষকদের পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদী বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি । সম্প্রতি সেলুলার জেলে সাভারকরের কুঠুরিতেও শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন তিনি । তাই অভিযোগ উঠছে, আসলে শাসকদলের প্রতি নিজের একনিষ্ঠ আনুগত্য জানাতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ইতিহাস বিকৃত করছেন কঙ্গনা । আবার 2014 সালে প্রকৃত স্বাধীনতা এসেছে বলে আসলে কঙ্গনা মোদী-বন্দনায় মেতেছেন বলেও অভিযোগ । তাঁর ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে ।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে সম্প্রতি বিজেপির এক নেত্রী বিতর্ক বাধিয়েছিলেন । তাঁর দাবি ছিল, ব্রিটিশদের কাছে নাকখত দিয়ে 99 বছরের ইজারায় স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিলেন জওহরলাল নেহরু । দেশ এখনও পুরোপুরি স্বাধীন হয়নি । সেই তরুণীর সঙ্গেও কঙ্গনার তুলনা টেনেছেন অনেকেই ।