পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / lifestyle

প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকাকরণ : মিথ বনাম বাস্তব - Adult immunization

টিকার মাধ্যমে সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ করে, দীর্ঘ ও উন্নত জীবন সুনিশ্চিত করা গেলেও, বড়দের টিকাকরণে সেভাবে জোর দেওয়া হয় না । টিকাকরণের ভুল ধারণা ভাঙতে, বিশদ তথ্য জেনে টিকাকরণ নির্ঘণ্ট তৈরি করতে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলুন।

Adult immunization
প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ

By

Published : May 14, 2021, 12:05 PM IST

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দীর্ঘদিন বজায় রাখতে ভ্যাকসিন সবথেকে কার্যকর কৌশল হলেও, বড়দের টিকাকরণকে এখনও অবহেলাই করা হয় । দ্বিধা, প্রতিষ্ঠিত সরকারি সংস্থা এবং সচেতনতার অভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ নিয়ে নানা মিথ রয়ে গেছে, যার ফলে দেশজুড়ে ভ্যাকসিন কভারেজ কম । উদাহরণ, ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও দেশে টাইফয়েড আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে । এর থেকেই বোঝা যায় যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে টিকাকরণ নিয়ে বড়দের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ।

অ্যাসোয়িয়েশন অফ ফিজিশিয়ানস অফ ইন্ডিয়ার প্রথম সুপারিশগুলোর মধ্যেই ভারতে বড়দের টিকাকরণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) প্রাক্তন অধিকর্তা নির্মল কুমার গাঙ্গুলি বলেন,“ভারতে বড়দের টিকাকরণ বাড়াবার সম্ভাবনা রয়েছে । এ নিয়ে প্রমাণভিত্তিক সুপারিশের জন্য আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করেছি । এর মধ্যে কার্ডিওলজি, পালমোনোলজি, গাইনিকোলজি থেকে নেফ্রোলজির বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন । এর মাধ্যমে একটি সংস্থা তৈরি হয়েছে, যাতে বড়দের টিকাকরণ নিয়ে সবথেকে ভাল পদ্ধতি এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে । এর সুপারিশগুলোর মধ্যে দিয়ে আমরা বড়দের ইমিউনাইজেশনে একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পারব বলে আশা রাখি ।”

অ্যাবট ইন্ডিয়ার মেডিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীরূপা দাস বলেন, “টিকার মাধ্যমে সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ করে, দীর্ঘ ও উন্নত জীবন সুনিশ্চিত করা গেলেও, বড়দের টিকাকরণে সেভাবে জোর দেওয়া হয় না । এপিআই-এর সুপারিশের মধ্যে দিয়ে সচেতনতা বাড়বে এবং চিকিৎসকরা প্রমাণভিত্তিক তথ্যের মধ্যে দিয়ে সুপারিশ করতে পারবেন । অ্যাবটে আমরা ভ্যাকসিনে প্রতিরোধযোগ্য অসুখ নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে চলেছি, যাতে তাঁরা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন ।”

সঠিক তথ্য জেনে ভুল ধারণাগুলোকে সরিয়ে ফেলা দরকার, যাতে আপনি টিকাকরণ নিয়ে আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন । নিচে কয়েকটি সাধারণ ভ্যাকসিন মিথ এবং সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হল। এই তালিকায় তথ্য দিয়েছে অ্যাবট ইন্ডিয়াও।

প্রথম মিথ: ভ্যাকসিন শুধু শিশুদের জন্য

সত্যি : জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে টিকাকরণের সুপারিশ করা হয়। শৈশবে দেওয়া ভ্যাকসিনের প্রভাব একটা সময় পর কমে আসে, তাই বুস্টার শট নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক যাতায়াত বেড়ে চলায় বড়রাও ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস এ এবং বি-র মতো অসুখের সংস্পর্শে আসছেন। এতে বড়দের মধ্যে রোগের বোঝা এবং মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে।

ছোটবেলায় না নিয়ে থাকলেও কিছু ভ্যাকসিন বড় বয়সেও নেওয়া উচিত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, পার্টুসিস (ডিপিটি) ভ্যাকসিন, যার বুস্টার শট প্রতি দশ বছরে একবার নেওয়া উচিত।

দ্বিতীয় মিথ: সব বড়দের ভ্যাকসিন লাগে না

সত্যি: ভ্যাকসিনেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য-কৌশল এবং বহু ভ্যাকসিন সার্বিকভাবে সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড এবং হেপাটাইটিস এ ও বি, যেগুলো ভারতে মরশুমী মহামারী হিসেবে দেখা দেয়।

হেপাটাইটিস বি-র মতো কিছু ভ্যাকসিনের চাহিদাও বেড়েছে, বিশেষ করে কো-মর্বিডিটি আছে এমন মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে।

তৃতীয় মিথ : ভ্যাকসিনে অযথা হয়রানি হয় আর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি

সত্যি : ভ্যাকসিন অত্যন্ত উপকারী এবং ভবিষ্যতে বড়সড় সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে। ভ্যাকসিনে কোনও অসুখ হয়না, তবে স্বল্পমেয়াদী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন হালকা জ্বর বা ব্যাথা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। শরীর ভ্যাকসিনে সাড়া দেওয়ার ফলেই এমনটা ঘটে।

চতুর্থ মিথ : ভ্যাকসিন আমার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে, তাই এমনিই ফ্লু হওয়া ভাল

সত্যি : ফ্লু আক্রান্ত হলে আপনি গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। মাঝারি থেকে গুরুতর জ্বর, গাঁটে ব্যাথা এবং কাশি হতে পারে। এর থেকে নিউমোনিয়া, রেসপিরেটরি ফেলিয়র এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের ঝুঁকি আছে। এক্ষেত্রে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে ভ্যাকসিন অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য বিকল্প।

পঞ্চম মিথ : আমি গতবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়েছি, তাই আমার আর দরকার নেই

সত্যি :ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ক্রমাগত বদলাচ্ছে এবং হু প্রতিবছর সর্বশেষ স্ট্রেনটিকে চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সুপারিশ করে। এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে প্রতি বছর ভ্যাকসিন নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা 2012, 2015 এবং 2017 সালে রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে ইনফ্লুয়েঞ্জার মহামারী দেখেছি।

এরপর কী : নিজের ভ্যাকসিন চেকলিস্ট তৈরি করুন। আরও ভুল ধারণা ভাঙতে, বিশদ তথ্য জেনে টিকাকরণ নির্ঘণ্ট তৈরি করতে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে কথা বলুন।

ABOUT THE AUTHOR

...view details