স্টকহোম, 4 অক্টোবর: কোয়ান্টাম ডটস বা সেমিকন্ডাক্টর ন্যানোক্রিস্টাল কণার আবিষ্কার ও এর সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণের জন্য এবছর রসায়ন বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী ৷ নোবেল কমিটির তরফ থেকে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের নাম ৷ এই তিন বিজ্ঞানী হলেন মৌঙ্গি জি বাওয়েন্ডি, লুইস ই ব্রাস ও অ্যালেক্সেই আই একিমভ ৷
বুধবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের তরফে স্টকহোমে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই তিন নোবেল প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হয় ৷ কমিটি জানিয়েছে, কোয়ান্টাম ডটস হল এমন এক সূক্ষকণা বা ন্যানো পার্টিকল, যেগুলির আকার এতই আনুবীক্ষণিক যে এগুলির আয়তনের উপর এদের কণা ধর্ম নির্ভর করে ৷ নোবেল কমিটির তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "কোয়ান্টাম ডটস কণাগুলির কিছু নিজস্ব ধর্ম আছে, এই কণাগুলি তাদের আলো বিচ্ছুরিত করে টেলিভিশনের রশ্মি এবং এলইডি লাইটের মাধ্যমে ৷ চিকিৎসাক্ষেত্রে, কোনও টিউমার কলা এই কণার আলো দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ৷ প্রাথমিক ভাবে এই তিন বিজ্ঞানী বর্ণজ্জ্বল আলোর উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই কোয়ান্টাম ডটসের ব্যবহার করেছেন ৷ মনে করা হচ্ছে ভবিষ্যতে ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্স, মিনিস্কুল সেন্সর, সোলার সেল ও এনক্রিপ্টেড কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ৷"
আরও পড়ুন: পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী
এই কণাগুলির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, কোয়ান্টাম ডটসগুলির বহু আকর্ষক ও অনন্য কিছু কণা ধর্ম রয়েছে ৷ আকারের উপর নির্ভর করে এদের রঙ বিভিন্ন ধরনের হয় ৷ এবারের নোবেল প্রাপক তিন বিজ্ঞানী, এই কণাগুলি পরীক্ষাগারে তৈরিতে সফল হয়েছেন, ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই কণাগুলির বড় গুরুত্ব রয়েছে ৷
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের তরফে আরও জানানো হয়েছে, 1980 এর দশকের প্রথম ভাগে অ্যালেক্সেই একিমভ কালার্ড গ্লাসের উপর আয়তন নির্ভর কোয়ান্টাম এফেক্ট তৈরিতে সফল হয়েছিলেন ৷ কপার ক্লোরাইডের ন্যানো পার্টিকেল থেকে এই বর্ণ তৈরি হয়েছিল ৷ এর পরেই একিমভ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, কণার আকার বর্ণকে প্রভাবিত করে এবং কোয়ান্টাম এফেক্টের কারণেই এই ঘটনা ঘটে ৷ এর কয়েক বছর পরে বিজ্ঞানী লুইস ব্রাস বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে প্রামাণ করেন, কোনও তরলের মধ্যে ভাসমান কণার আকারের উপর নির্ভরশীল হয় কোয়ান্টাম এফেক্ট ৷ 1993 সালে, বিজ্ঞানী মৌঙ্গি বাওয়েন্ডি কোয়ান্টাম ডটসের রাসয়ানিক উৎপাদনে কার্যত বিপ্লব আনেন, তিনি একটি প্রকৃত কণা হিসেবে কোয়ান্টাম ডটসের উৎপাদনে সফল হন, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে লাগে ৷ বর্তমানে এই কোয়ান্টাম ডটসের দৌলতেই QLED প্রযুক্তির ব্যবহারে উজ্জ্বল হয় কম্পিউটরের মনিটর, টেলিভিশনের পর্দা ৷
আরও পড়ুন: কোভিড টিকা তৈরিতে বিশেষ অবদান, চিকিৎসায় নোবেল জয় 2 বিজ্ঞানীর
মৌঙ্গি জি বাওয়েন্ডি 1961 সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন ৷ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি 1988 সালে পিএইডি করেন ৷ ম্যাসাচুসেটস, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বর্তমানে তিনি যুক্ত ৷ লুইস ই ব্রাসের জন্ম 1943 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৷ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 1969 সালে পিএইচডি করে পরবর্তীতে সেখানেই তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন ৷ অ্যালেক্সেই আই একিমভ 1945 সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন ৷ 1974 সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ফিজিক্যাল-টেকনোলজি ইন্সটিটিউট থেকে তিনি পিএইচডি করেন ৷ নিউইয়র্কের ন্যানোক্রিস্টাল টেকনোলজির মুখ্য গবেষক হিসেবেও যুক্ত ছিলেন তিনি ৷