পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

জ্বলছে বিশ্ব, সংকট শিয়রে - WEF

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি চাপা দেওয়ায় মরিয়া প্রথম বিশ্বের দেশের নেতারা ৷ কিন্তু বর্তমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি থেকে পরিস্থিত খুব সহজেই স্পষ্ট হয়ে যায় ৷ সাহারা মরুভূমিতে তুষারপাত, অ্যামেরিকায় -40 ডিগ্রি তাপমাত্রা, বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, অসময়ে আবহাওয়া পরিবর্তন সবকিছুই বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকেই ইঙ্গিত করে ৷

THE EARTH IS IN FLAMES
জ্বলছে বিশ্ব, সংকট শিয়রে

By

Published : Feb 11, 2020, 8:03 PM IST

ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব ৷ এরই মধ্যে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবেশ নিয়ে উদাসীনতার ছবি প্রকাশ পেল দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে (WEF) । জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কাকে খারিজ করে দিয়েছেন তিনি । তবে ঘোষণা করেছেন, অ্যামেরিকা এক ট্রিলিয়ন গাছ রোপন, পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের উদ্যোগে যোগ দেবে ৷ তাঁর এই ঘোষণা WEF-র চোখে ধুলো চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।

কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গের পরিবেশ সম্পর্কিত সতর্কতার পরে বিশ্বের হেভিওয়েট নেতাদের দায়িত্ব পরিবেশ বিষয়ে বাস্তবিক পরিবকল্পনা করার ৷ যদিও তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের নেতাদের পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে গাফিলতির বিষয়ে আলোকপাত করেছিল ৷ তবুও প্রথম বিশ্বের দেশগুলি পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে যথেচ্ছ মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ অ্যামেরিকা মনে করে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধে কোনও ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ এর আগে অ্যামেরিকাকে কিয়োটো প্রোটোকল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ।

যদিও ওবামা সরকার প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল । ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে তা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন । মার্কিন নাগরিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন ৷

অন্যদিকে, কানাডা, রাশিয়া, ব্রাজিলের তুলনায় মাথাপিছু গাছের সংখ্যা কম অ্যামেরিকায় ৷ এই তথ্য গোপন করতেই WEF-এর গ্রিন ইনিসিয়েটিভ গ্রহণ করেছে অ্যামেরিকা ৷ পরিবেশের দ্রুত অবনতির পিছনে মূল কারণগুলি হল যথেচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা, বেপরোয়া শিল্পোন্নয়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে গ্রিন হাউজ় গ্যাস নির্গমন ৷ এরই ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বের তাপমাত্রা ৷ যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দূষণ, মহামারী, খাদ্য সংকট ও বিপর্যয় ৷

চিন ও অ্যামেরিকা বিশ্বের 40 শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে ৷ ভারত করে 4.4 শতাংশ ৷ আক্ষরিক অর্থে যে দেশগুলি বিশ্বকে ধীরে ধীরে জ্বালাচ্ছে তারা নিজেদের কার্যকলাপে কোনওভাবেই নজর দিচ্ছে না ৷ সাম্প্রতিক একটি সার্ভেতে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর 10 হাজার কোটি টন প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রহণ করা হচ্ছে ৷ যা পরবর্তী তিন দশকে 18 হাজার 400 কোটি টনে বাড়তে পারে ৷ এই একই সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলিতে মাথাপিছু সংস্থানের গ্রহণের পরিমাণ দশগুণ বেশি ৷ নাইট্রাস অক্সাইডের মতো নির্গমন 100 বছর ধরে পরিবেশের ক্ষতি করতে থাকে ৷ অ্যামেরিকা, চিন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই বিষাক্ত নাইট্রাস অক্সাইড নিঃসরণে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে ৷ এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের WEF - এ গ্রেটা থানবার্গের জলবায়ু উদ্বেগকে নিছক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী বলা বিশ্বের এই ক্রমবর্ধমান তৈরি হওয়া কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতে ৷

আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি চাপা দেওয়ায় মরিয়া প্রথম বিশ্বের দেশের নেতারা ৷ কিন্তু বর্তমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি থেকে পরিস্থিত খুব সহজেই স্পষ্ট হয়ে যায় ৷ সাহারা মরুভূমিতে তুষারপাত, অ্যামেরিকায় -40 ডিগ্রি তাপমাত্রা, বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, অসময়ে আবহাওয়া পরিবর্তন সবকিছুই বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকেই ইঙ্গিত করে ৷ সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে যারা বসবাস করে তাদের জন্য ভবিষ্যতে হিমবাহ গলে কিংবা সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার মতো আসন্ন বিপদ ৷ এছাড়াও দাবানলের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে ৷ গত এক বছরে অ্যামেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ঘটে যাওয়া 15 টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একমাত্র কারণই এই বিশ্ব উষ্ণায়ন ৷ অ্যামাজন ও অস্ট্রেলিয়ার ধ্বংসাত্মক দাবানলও বিশ্ব উষ্ণায়নের শিকার ৷

ল্যানসেট গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে শস্যের ফলন কমার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রজাতির গাছপালা যেমন - বাদাম, কলা, কফি এবং আলু বিলুপ্ত হয়ে যাবে । এত সতর্কতা সত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন COP 25 - এ কোনও কার্যকর সমাধান বা চুক্তি হয়নি । ফলত উন্নতশীল দেশগুলি আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ না নিলে মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারই থেকে যাবে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details