কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: রবি ঠাকুরের 'কাবুলিওয়ালা'য় শিশু মিনি পেয়েছিল নিরাপত্তা । পেয়েছিল ভালো থাকার আশ্বাস । সেই কাবুলিওয়ালা নিয়েই একের পর এক সিনেমা । ছবি বিশ্বাস থেকে বলরাজ সাহানি আর এবার মিঠুন চক্রবর্তী । কাবুলিয়ালার চরিত্রে তাঁরা ছাপ ফেলেন দর্শক মনে । তবে প্রশ্ন থাকে, মিনিদের আবদার মেটানো সেই কাবুলিয়ালারা কি আজও একইভাবে ঝোলা নিয়ে বেরোন ? না কি কৃটনৈতিক জালে তারা কোথাও বদ্ধ? আজকের কাবুলিওয়ালারা সত্যিই কি রকমারি জিনিস ঝোলায় রাখেন, উত্তর খুঁজল ইটিভি ভারত ।
জানা যায়, অল্প সংখ্যক কাবুলিওয়ালা এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন হুগলি জেলায়। খবর পেয়ে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করে হুগলির স্থানীয় ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট সত্যেন্দ্রপ্রসাদ সিংহর সঙ্গে। তিনি বলেন, "অনেক বছর ধরে বংশ পরম্পরায় ওরা এখানে থাকে। হুগলির ইমামবারার পাশের ডিএম বাংলোর উলটো দিকের কুঠিতে আগে ষাট জন থাকতেন। এরপর কুঠি বিক্রি হওয়ায় সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন এদিকে ওদিকে। এরা মূলত সুদের ব্যবসাই করেন। অন্য কোনও ব্যবসা করেন না। তবে, একটা সময় এদের কদর ছিল। এখন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাঙ্ক অল্প সুদে ঋণ দেওয়ায় এদের কদর কমেছে। তবু এই ব্যবসাতেই রয়েছেন এরা। এদের মানসিকতা খুব ভালো। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের কষ্ট বোঝে ওরা। দিনের পর দিন সুদ নিয়ে আসল না নেওয়ার মানসিকতা এদের নেই। আগে কাবুলিওয়ালারা মারত লোকেদের। আজ উলটে ওরা পাওনা টাকা চাইলে মার খায়।"
তিনি আরও জানান, " খুব ডিসিপ্লিন্ড ওরা। দুপুর বারোটায় লাঞ্চ। তারপর বিশ্রাম নিয়ে ঠিক তিনটেয় উঠে তাগাদায় বেরোন। যে তারিখ ওদের দেওয়া হয় সেই তারিখেই ওরা হানা দেন। তার আগে নয়। ওরা কিন্তু দরিদ্র পরিবার থেকেই আসেন। কেউই ধনী নয়। ধনীরা এখানে এই ব্যবসা করতে আসেন না।" জানা যায়, এই সুদের টাকা খাটিয়েই কাবুলে পরিবারের হাতে সংসারে টাকা পাঠান তাঁরা। সেই টাকাতেই চলে পেট। ওদের ব্যবসা তলানিতে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ওরা আছে এখানে। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বা একা।
চূচূড়ার কাবুলিওয়ালা আনিমুদ্দিন ইটিভি ভারতে প্রতিনিধিকে বলেন, "এখন সুদের হার অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে কাবুলিওয়ালারা আসছেও তুলনায় কম। অনেক ধরনের ব্যাঙ্ক হয়েছে এখন। অনেক কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক আছে। সোনার বদলে টাকা ঋণ দেওয়ারও ব্যাঙ্ক আছে। ফলে টিকে থাকতে সুদের হার কমাতে হয়েছে কাবুলিওয়ালাদের।"
আসলে শীতের দুপুরের মিঠে আলোয় হোক বা পড়ন্ত বিকেলে, উত্তর কলকাতার অলি-গলি পেড়িয়ে পরনে আলখাল্লা, আফগানি কোট, মাথায় পাগড়ি, একমুখ দাড়ি ও ঝোলা কাঁধে নিয়ে আসা কাবুলিওয়ালাদের অনেকটা সন্দিহান চোখেই দেখা হত উনবিংশ শতকের শেষ দিকে ৷ বাড়ির খুদেদের চোখে তখন বিশাল বড় ঝোলাটাই কৌতুহলের মূল কারণ ৷ প্রশ্ন জাগত কী আছে সেই ঝোলায়? বাড়ির বড়রা সন্তর্পণে উত্তর দিতেন, ওই ঝোলা করেই ছোট ছোট শিশুরা, যারা কথা শোনে না, তাদের নিয়ে চলে যান কাবুলিওয়ালারা ৷