কলকাতা, 26 অগস্ট: দেশভাগের (Partition of India) যন্ত্রণা বরাবরই বাঙালির (Bengali) বুকে বাজে ৷ আজও ছিন্নমূল বাঙালি মনে, প্রাণে স্মরণ করে তার ফেলে আসা অতীতকে ৷ কিন্তু, দুই বাংলার মাঝে গড়ে ওঠা কাঁটাতারের দেওয়াল চাইলেও আজ আর উপড়ে ফেলা সম্ভব নয় ৷ আর তাই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বহু প্রবীণ মানুষ দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন ৷ এবার সেই দেশভাগ নিয়েই রাজ্যে তৈরি হল ভার্চুয়াল সংগ্রহশালা (Virtual Partition Museum) ৷
প্রসঙ্গত, 1947 সালে দেশভাগের সময় যে রাজ্য দু'টি সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছিল, তার একটি হল বাংলা (West Bengal) এবং অন্যটি পঞ্জাব (Punjab) ৷ ইতিমধ্যেই পঞ্জাবে দেশভাগ নিয়ে একটি মিউজিয়াম গড়ে উঠেছে ৷ তবে বাংলায় ইতিহাসকে ফিরে দেখার কোনও সুযোগ এত দিন ছিল না ৷ এবার কলকাতায় চালু হতে চলেছে ভার্চুয়াল পার্টিশন মিউজিয়াম ৷ স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশভাগের 75তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে ৷ কেপিএমটি (KPMT) এবং আর্কিটেকচার রিসার্চ আর্বানিজমের (Architecture Research Urbanism) মিলিত প্রচেষ্টায় এই ভার্চুয়াল সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন:তেরঙার সঙ্গে মিশে মাটি ছাড়ার যন্ত্রণা, 14 অগস্ট পর্যন্ত ভিটে-হারাদের ছবি নিয়ে প্রদর্শনী কেন্দ্রের
এই পরিকল্পনা রূপায়নের কাণ্ডারী হলেন আর্কিটেকচার রিসার্চ আর্বানিজমের প্রধান অর্ঘজ্যোতি এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দেশভাগ বিশেষজ্ঞ ঋতুপর্ণা রায় (Rituparna Roy) ৷ এই প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণা বলেন, "বিভিন্ন দেশে দেশভাগের মর্মান্তিক স্মৃতি সংরক্ষিত করে রাখার প্রয়াস চলছে ৷ বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়াল হোক বা নম পেনের কিলিং ফিল্ডস, এমন বহু নিদর্শন রয়েছে বিশ্বজুড়ে ৷ একই কারণে ভারতের অমৃতসরেও একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে ৷ অথচ, কলকাতার মানুষের মধ্যে দেশভাগের স্মৃতি নিয়ে বহু ব্যথা থাকলেও, এখানে দেশভাগ নিয়ে কোন সংগ্রহশালা নেই ! আমরা সেই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছি মাত্র ৷ আপাতত ভার্চুয়ালি পথ চলা শুরু হবে মিউজিয়ামটির ৷ পরবর্তীতে এই মিউজিয়াম তৈরি হবে কলকাতাতেই ৷"
ঋতুপর্ণা আরও জানিয়েছেন, আপাতত এই কাজ ভার্চুয়ালি শুরু করা হলেও শীঘ্রই কলকাতার বুকে দেশভাগ নিয়ে মিউজিয়াম দেখতে পাওয়া যাবে ৷ এই পরিকল্পনা যাতে দ্রুত বাস্তবের মুখ দেখে, তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে টাটা স্টিল ৷ আগামী দিনে এই মিউজিয়াম তৈরি হয়ে গেলে আমজনতা উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন ঋতুপর্ণারা ৷
এই সংগ্রহশালায় কী কী থাকবে ? জবাবে ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, "কলকাতার অলিতে-গলিতে দেশভাগ সংক্রান্ত বহু স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ৷ প্রচুর মানুষ দেশভাগের সময় তাদের ভালোবাসার আবাস ছেড়ে পাকাপাকিভাবে পশ্চিম বাংলায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন ৷ তাঁদের স্মৃতি কথা, দেশভাগ নিয়ে বিভিন্ন সাহিত্য, সিনেমা, তথ্যচিত্র, ছবি সবই গ্যালারি আকারে এই মিউজিয়ামে সংগ্রহ করে রাখা হবে ৷"