কলকাতা, 4 মে:বাংলায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ মসনদে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাই নিয়েই লেখালেখি শুরু হয়ে গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমে ৷ শোভন-বৈশাখী কি তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন ? তাঁরা কী মমতাকে কোনও বার্তা পাঠাতে চাইছেন ? এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে ৷ তবে জল্পনা কাটালেন তাঁরা নিজেরাই ৷ ফেসবুকে ভিডিয়ো বার্তা পোস্ট করে দুজনেই জানালেন, এমন কোনও অভিসন্ধি তাঁদের নেই ৷
ভিডিয়োতে পাশাপাশি বসে আলাপচারিতা করতে দেখা গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভিডিয়োটি পোস্ট করে বৈশাখী ক্যাপশনে লেখেন, "প্রথমবারের মতো শোভন এবং আমি এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কিছু ভুল ধারণা পরিষ্কার করার কথা ভাবলাম যা আজ একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে । এই কথোপকথন দীর্ঘ ছিল কিন্তু আমাদের দুজনেরই অনেক কিছু বলার আছে অল্প সময়ে । আশা করি সবাই শেষ পর্যন্ত দেখবেন এবং সম্পাদিত সাক্ষাৎকার দেখে নিজেদের উপসংহার না করে ঘোড়ার মুখ থেকে সত্যটা জানার চেষ্টা করবেন ।"
শুরুতেই শোভন ও বৈশাখী স্পষ্ট করে দেন যে, মমতাকে অভিনন্দন জানানোটা তাঁদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ৷ বৈশাখীর কথায়, "দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছি ৷ তবে কোনও বার্তা দিতে চাইনি ৷ কোনও বার্তা দেওয়ার ভাবনাই আসেনি ৷" রাজ্যে বিজেপি যে এই ফলাফলের দিকে এগোচ্ছে, শোভন আগেই তা নেতৃত্বকে বলেছিল বলে দাবি করেন তাঁরা ৷ আক্ষেপের সুরে বৈশাখী বলেন, "এই জায়গাটা শোভন হাতের তালুর মতো চেনেন ৷ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয় তাঁকে ৷ তাঁর কোনও প্রস্তাব কানে তোলা হয়নি ৷ কোনও আলোচনা ছাড়াই প্রার্থী বাছাই হয়েছে ৷ শোভন পর্যবেক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কোনও মত নেওয়া হয়নি ৷ তাই আমরা দলকে বিব্রত করব না বলেই বিজেপি থেকে সরে আসি ৷ তবে বিজেপির কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ৷ ওরা আমায় এত বড় প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে ৷ সবাই যখন কুত্সার বেড়াজালে আটকে দিতে চেয়েছিল, তখন রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে তুলে ধরেছে আমাকে ৷"
আরও পড়ুন:মমতার শপথে আমন্ত্রিত বুদ্ধদেব, বিমানরা ; আমন্ত্রণ সৌরভকেও
বিজেপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগের সুর শোনা গিয়েছে শোভনের গলাতেও ৷ তিনি বলেন,"কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি সব সিদ্ধান্ত নিতে পারব, এটা বলা হয়েছিল ৷ ভূমিপুত্র হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, নির্বাচনী পদ্ধতি বলতে চেয়েছি ৷ তখন বাধা দেওয়া হয়েছে, উপেক্ষা করা হয়েছে ৷ 2019 লোকসভা ও 2021 বিধানসভার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা ৷ প্রার্থী বাছাইয়ের নামে অভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্তে ছেলেখেলা হয়েছে ৷" বৈশাখীর জন্যই শোভন ভোটে দাঁড়াননি, এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যে লেখালেখি হয়েছে তারও প্রতিবাদ করে বৈশাখী বলেন, "সেই সময়ে শিবপ্রকাশকে মেসেজ করে বলি, শোভনের থেকে সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন কেড়ে নেবেন না ৷ কিন্তু সেই মেসেজের উত্তর আসেনি ৷ তৃণমূলের বি বা সি গ্রেডের নেতাদের প্রার্থী করেছে ৷" পদত্যাগের সময় রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মমতার ছবি হাতে বেরিয়ে আসাকেও কটাক্ষ করেন বৈশাখী ৷ বিজেপির তারকা প্রার্থী পায়েল ও শ্রাবন্তীকে দোলের দিন তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের সঙ্গে নাচানাচি করতে দেখে বেহালার মানুষ অপমানিত হয়েছেন বলে তাঁর মত ৷ বিজেপি তারকা প্রার্থীদের উপর ভরসা করলেও, তাঁদের রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করেনি বলে তোপ দাগেন বৈশাখী ৷
তাঁদের আলাপচারিতায় এ দিন স্বাভাবিকভাবেই এসেছে রত্না চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রসঙ্গ ৷ রত্না বিভিন্ন জায়গায় অর্ধসত্য বলেছেন বলে অভিযোগ করেন শোভন ৷ তবে তিনি সব কথার ব্যাখা দেওয়ার প্রয়োজন করেন না বলে জানিয়েছেন ৷ শোভনের স্পষ্ট বক্তব্য, "বৈশাখীর জন্য আমাদের ডিভোর্স হয়নি ৷ শোভন ও বৈশাখীকে নিয়ে অনেকেই মনের মাধুরী দিয়ে গল্প বানিয়েছে শুধু আমরা দুটি আলাদা লিঙ্গ বলে ৷ বাস্তব সত্য আমরা জানি ৷ আমার থেকে কেউ ব্যাখ্যা চায়নি ৷ আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি ৷ তৃণমূল যে ভাবে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করেছিল, সেটাই করেছে বিজেপি ৷"
সবশেষে বিধানসভা বাম কংগ্রেস শূন্য হওয়াকে ঐতিহাসিক বলে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শোভন ৷ এ দিনের আলোচনায় বারবার নানা প্রসঙ্গ টেনে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি তোলা হয় তার জবাব দিয়েছেন বৈশাখী ৷ তবে তাঁরা দুজনেই যে এখন খুব ভালো আছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷