কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি: 12 ফেব্রুয়ারি থেকে খুলছে রাজ্যের সব স্কুল। তবে পঠনপাঠন হবে শুধুমাত্র চারটি শ্রেণিতে৷ করোনা আবহে আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই স্কুলে এসে রোজের ক্লাস করতে পারবে৷
গত মঙ্গলবারই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, 12 ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুল খোলা হবে। বৃহস্পতিবার সেই মর্মেই জারি হল বিজ্ঞপ্তি। ইতিমধ্যেই সেই বিজ্ঞপ্তি স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে কোরোনা সংক্রান্ত যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করেই স্কুল খোলার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনারের তরফে রাজ্যের সব জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে স্কুল খোলা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। সঙ্গে সব জেলার পরিদর্শক, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও সংশ্লিষ্ট সব বিভাগেই পাঠানো হয়েছে সরকারি এই বিজ্ঞপ্তি। তাতে বলা হয়েছে, 12 ফেব্রুয়ারি থেকে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য পুনরায় স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, কোভিড-19-এর যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সুষ্ঠুভাবে পুনরায় স্কুল খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এ বিষয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে আর একটি অ্যাডভাইজারিও দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে দেওয়া অ্যাডভাইজারিতে স্কুল পুনরায় খোলার আগে ও স্কুল খোলার পরে কী কী করণীয়, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সেখানে প্রথমেই বলা হয়েছে, 12 ফেব্রুয়ারি থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য স্কুল খোলা যেতে পারে। প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিদিন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের অ্যাকাডেমিক ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাসকে দুই বা তার বেশি ঘরে ভাগ করে বসানো যেতে পারে পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে। সেই অনুসারেই ক্লাসের রুটিন তৈরি করতে হবে৷
আরও পড়ুন:স্কুল খোলার সরকারি সিদ্ধান্তে খুশি শিক্ষক সংগঠনগুলি
পড়ুয়া এবং কর্মচারীদের সামাজিক দূরত্ব ও কোভিডের যাবতীয় প্রোটোকল মেনে চলতে হবে। 12 ফেব্রুয়ারি স্কুল খোলার পর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির থিয়োরি ক্লাসের সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও চালু করতে পারে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি স্কুলকে যথাযথভাবে জীবানুমুক্ত করতে হবে। স্কুলের দিনগুলিতে যাবতীয় করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন, প্রতি পড়ুয়ার সঙ্গে শিক্ষক ও কর্মচারীদেরও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রভৃতি মানতে হবে৷ কোভিড প্রোটোকল সম্পর্কে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে৷
প্রায় ১১ মাস বন্ধ থাকার পর স্কুল পুনরায় খোলার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরেই স্বাগত জানিয়েছিল শিক্ষক মহলের অধিকাংশই। তবে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর একাধিক প্রশ্ন তুলছে শিক্ষক মহলের একাংশ। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, "শিক্ষা দপ্তরের জারি করা নির্দেশিকায় 'রি-ওপেনিং অফ স্কুলস' কথাটিতে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। বিদ্যালয় তো খোলাই রয়েছে। সমস্ত অফিশিয়াল কাজকর্ম প্রতিদিন চলছে। কেবল পঠনপাঠনের কাজ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা প্রধান শিক্ষকের রোস্টার অনুযায়ী প্রতিদিন বিদ্যালয় যাচ্ছেন। বিদ্যালয় খোলার পরিবর্তে পঠনপাঠন শুরুর কথা নির্দেশিকায় বলা উচিত ছিল। নির্দেশিকা জারি করে ‘মে বি’, ‘ক্যান বি’ কথাগুলির মানে কী? এতে বিভ্রান্তি ছড়াবে। নির্দেশিকা স্পষ্টভাবে আসা দরকার।"
আবার স্টেট ফোরাম অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দনকুমার মাইতি বলেন, "স্কুল খোলার সরকারি পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে খরচ করতে হবে, তা বেশিরভাগ স্কুলেরই ক্ষমতার বাইরে। তাই সরকারেরই তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, স্ট্যান্ড স্যানিটাইজার, ক্লাসরুম জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্প্রে-মেশিনের খরচ বহন করা উচিত।"
বিজ্ঞপ্তি জারি স্কুলশিক্ষা দপ্তরের
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, "এই মুহূর্তে ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দশম শ্রেণি এবং ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ দশম শ্রেণি, যারা ২০২০ শিক্ষাবর্ষের শেষে নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে, এই দুই প্রকার দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা একসঙ্গে বিদ্যালয়ে আসবে কি না, সেই সংক্রান্ত সুস্পষ্ট কোনও ভাবনা এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে নেই। যদি এই দু’টি দশম শ্রেণির পড়ুয়ারাই স্কুলে আসে তাহলে মোট পাঁচটি ক্লাস একসঙ্গে বিদ্যালয়ে আসবে। আমরা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলাম, সবকটি ক্লাসকে একসঙ্গে বিদ্যালয়ে না এনে অল্টারনেট দিনগুলোতে, একদিন অন্তর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিদ্যালয়ে আনা হোক এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হোক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। কিন্তু, নির্দেশিকায় সকলকেই বিদ্যালয়ে আনতে বলা হয়েছে। একটি ক্লাসের ছাত্রসংখ্যা যদি ৫০ হয়, তাদের যদি দু’টি ঘরে দুটো ছোট সাব ইউনিটে ভেঙে রুটিনটাকে নতুন করে সাজিয়ে ক্লাসের আয়োজন করতে হয়, তাহলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হবে, যার সমাধানের রাস্তা সবসময় অনুসরণ করতে গেলে কোভিড প্রটোকল ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এই নির্দেশিকাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং আগামী দিনে এই ত্রুটিগুলো দূর করে নতুনভাবে কোভিড প্রোটোকল অনুযায়ী যথাযথ নির্দেশিকা বিদ্যালয় শিক্ষাদপ্তর এবং পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশ করবে এই আশা রাখছি।"