কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : কেন্দ্রীয় BJP-তে মুকুল রায় সহসভাপতি পদ পেয়েছেন । আর তাঁর জায়গা হয়নি কেন্দ্রীয় কমিটিতে । এই নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রাহুল সিনহা ৷ বহুদিন ধরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা রাহুল সিনহার এবার নতুন কমিটিতে জায়গাই হয়নি ৷ রাহুলের জায়গাতে নতুন কমিটিতে এসেছেন মুকুলের 'অনুগামী' অনুপম হাজরা ৷ আর এরপরই রাহুল সিনহার তীব্র প্রতিক্রিয়া, "40 বছর ধরে BJP-র একজন সৈনিক হিসাবে কাজ করে আসছি। জন্মলগ্ন থেকে BJP করার পুরস্কার এটাই । তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছেন, তাই আমাকে সরতে হবে । এর থেকে বড় দুর্ভাগ্যের কিছু হতে পারে না।"
তাঁর এই বক্তব্যের পরেই রাজ্য BJP-তে সংঘাত সামনে এসে পড়ল ৷ রাহুল শুধু এখানেই থেমে না থেকে সুর আরও চড়িয়ে বলেন, "আমি যা বলার 10-12 দিনের মধ্যে বলব । আমার ভবিষ্যৎ ঠিক করব ৷" এই বক্তব্যের পরেই তাঁর দলত্যাগের সম্ভাবনাও মাথা চাড়া দিচ্ছে বলে BJP সূত্রের খবর ৷ তবে এই বিষয়ে রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ৷ এখন প্রশ্ন, রাহুলের এই উষ্মা কাকে নিয়ে ? তাঁর টার্গেট মুকুল রায় না-কি অনুপম হাজরা ? প্রসঙ্গত মুকুল ও অনুপম উভয়েই তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন ৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, BJP-র মতো বৃহত্তম দলে মুকুল রায়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদপ্রাপ্তি বহু রাজ্য নেতার গাত্রদাহ হবে, তা স্বাভাবিক ৷ তবে ওয়াকিবহালের মতে, আনকোরা অনুপমের এই পদোন্নতি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি রাহুল ৷ কারণ রাহুলের পদেই অনুপমের পদোন্নতি ৷
লোকসভা ভোটে BJP-র প্রার্থী হয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন অনুপম ৷ লোকসভা ভোট চলাকালীন আচমকা বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চলে যান তিনি । শুধু দেখাই নয়, অনুব্রতের সঙ্গে বসে জমিয়ে মাছ-ভাতে মধ্যাহ্ন আহারও করেন যাদবপুরের BJP প্রার্থী। এর পরেও সোশাল মিডিয়ায় অনুপমের নানা বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি রাজ্য় BJP নেতৃত্ব ৷ এমনকী কিছুদিন আগে শান্তিনিকেতন প্রসঙ্গে BJP-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের বক্তব্যের বিরোধিতাও করেন অনুপম ৷ এহেন অনুপমের এই পদপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কি মুকুলেরই 'হাতযশ' কাজ করেছে, এই প্রশ্নও উঠছে ৷ রাহুল বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছেন, তাই আমাকে সরতে হবে ৷" তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বলতে কাকে বোঝালেন, অনুপম না-কি মুকুল রায় ? মুকুলের BJP-তে আসাকে রাহুল কোনও দিনই ভালোভাবে নেননি ৷ BJP সূত্রের খবর, সেজন্য একসময় BJP-র মধ্যে প্রবল দিলীপ ঘোষের বিরোধী হয়েও পরে মুকুলকে কোণঠাসা করতে রাহুল দিলীপ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শুরু করেন ৷ কিন্তু লোকসভায় রাজ্যে মোদি হাওয়ার পরেও উত্তর কলকাতা থেকে রাহুলের পরাজয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রাহুলের গুরুত্ব অনেক কমিয়ে দেয় বলে শোনা যাচ্ছিল ৷ তৎকালীন BJP সভাপতি অমিত শাহের রোড শো-ও রাহুলের ভাগ্যে জয় আনতে পারেনি ৷ BJP-র এক রাজ্য নেতা সেসময় বলেন,"রাহুলদা ভোট করতেই জানেন না৷"
বিধানসভা ভোট সামনে কড়া নাড়ছে ৷ অমিত শাহ একবার বলেছিলেন, বঙ্গ বিজয় না হলে দলের দেশ বিজয়ের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে না ৷ দলের মধ্য়ে কোনও কোন্দল বরদাস্ত করবেন না মোদি-শাহ বিগ্রেড ৷ কিন্তু নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে রাজ্য BJP-র মধ্যে যেভাবে অন্তর কলহ বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে তা কীভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সামাল দেবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ আরও একটা কথাও দলের মধ্যে উঠছে ৷ এতদিন, কোনও কমিটি তৈরিতে সংঘ পরিবারের প্রভাব থাকত ৷ BJP সূত্রের খবর, অনুপমের মতো নেতাদের নিয়ে দলভারী করতে কোনও দিনই রাজি নয় সংঘ পরিবার ৷ সংঘের প্রায় ব্যাডবুকে থাকা অনুপম কীভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জায়গা পেলেন, অথচ রাজ্যে অন্যতম সংঘ ঘনিষ্ঠ ও হাওড়ায় গত লোকসভা কেন্দ্রে BJP প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত ব্রাত্য থাকলেন । তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে । এখানেও কি মুকুলেরই 'চাণক্য নীতি' কাজ করছে । এই নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা ।