কলকাতা, 2 মে : ধর্ম যার যার, উৎসব সবার ৷ এই বার্তাকে সামনে রেখেই ঈদের আগে আর্থিক অসচ্ছল পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ালেন কলকাতার মেটিয়াবুরুজের অবেদুর রহমান, অরুণ রায়, মনসুর মোল্লা, রুদ্রেন্দু পাল, মহম্মদ ওয়ারিশ, হারানচন্দ্র কর্মকার, শেখ জুম্মান হোসেন, বীরবল গিরিরা (Message of Harmony in Eid at Metiabruz) । নাদিয়াল থানার বদরতলা এলাকার মানুষের হাতে তুলে দিলেন নতুন জামা-কাপড় ৷ তাঁদের মধ্যে কেউ মুসলিম, আবার কেউ অন্য সম্প্রদায়ের ৷ ঈদের দিন যাতে সকলেই সমানভাবে আনন্দ করতে পারেন, সেই কারণেই এই উদ্যোগ বলে উদ্যোক্তাদের দাবি ৷
নতুন জামা মেটিয়াবুরুজের শিশু-বয়স্কদের জন্য বহু মানুষ আছেন যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় । তাঁদের কাছে উৎসবের দিন আর বছরের বাকি দিনগুলি একই ৷ উৎসবের দিনেও লড়াই করে দিন কাটাতে হয় তাঁদের । ফলে নতুন কাপড় পরে উৎসবে গা ভাসানো আকাশকুসুম কল্পনা তাঁদের কাছে । আবার আনন্দের জন্য অন্যের কাছে হাত পাতবেন না তাঁরা ৷ কারণ, হতদরিদ্র হলেও আত্মসম্মান তাদের কাছে ভীষণ দামি ।
নতুন জামা মেটিয়াবুরুজের শিশু-বয়স্কদের জন্য তাই তাদের সম্মানরক্ষা করেই গোপনে বদরতলা শান্তি কমিটির সদস্যরা গতকাল রাতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এক্কেবারে গোপনে দিয়ে আসেন জামাকাপড় ৷ প্রায় 150টি পরিবারের মহিলাদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দিয়েছেন তাঁরা । একই ভাবে 50 জন বৃদ্ধের কাছে তাঁরা এই বছর প্রথম পাঞ্জাবি পৌঁছে দেন । অনেকটা রূপকথার সান্তাক্লজের মতো ৷
শান্তি কমিটির সদস্যরা ব্যস্ত জামাকাপড় প্যাকেট করতে আগামিকাল ঈদ, তাই উৎসবের আগে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের মুখে হাসি ফোটালেন তাঁরা । বীরবল, হারান, অরুণ, ওয়ারিশ গত দু’রাত ঘুমোননি এই কাজের জন্য । বেশ কয়েকদিন ধরেই কেনাকাটার পর্ব চলছিল শান্তি কমিটির সদস্যদের তরফে । গত দু’রাতে সেগুলি প্যাকেট করে পৌঁছে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের হাতে । ঈদের ঠিক আগের মুহূর্তে এমন উপহার পেয়ে স্বভাবতই খুশি এলাকার মানুষজন ৷ উৎসবকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পেরে খুশি বদরতলা শান্তি কমিটির সদস্যরাও (New Cloths for poor children and old in Eid) ।
শান্তি কমিটির সদস্যরা ব্যস্ত জামাকাপড় প্যাকেট করতে 2020 সালে এই মেটিয়াবুরুজ বদরতলা-সহ আশপাশ এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল । তারপরেই সম্প্রীতি রক্ষার্থে দুই ধর্মের লোকজনকে নিয়েই এই শান্তি কমিটি গঠন হয়েছে । তারপর থেকে দুর্গাপুজো হোক বা ঈদ, দোল বা মহরম সুষ্ঠভাবে যাতে পালনে কোনও সমস্যা না হয়, উৎসবে যাতে সমস্ত ধর্মের মানুষ আনন্দ করতে পারেন, সেই কাজ করে আসছে শান্তি কমিটি।
বদরতলা শান্তি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশের বার্তা বদরতলা শান্তি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ ওয়ারিশ বলেন, "আমরা উভয় ধর্মের লোকই ঈদ থেকে দোল, দুর্গাপুজো সবটা পালন করি । বকরি ঈদে এলাকা পরিষ্কারে এগিয়ে আসে হিন্দু ভাইরা । দুর্গাপুজোয় যানজট কমাতে এগিয়ে আসেন মুসলমান ভাইরা । রোজার সময় খেজুর ও জল দেওয়া, ঈদে এক সঙ্গে আনন্দ করি ৷ পুজোতেও একসঙ্গে আনন্দ করি । এভাবেই আগামিদিনে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে চলব বলেই আশা করছি ।"
আরও পড়ুন :Eid Celebration in Presidency Jail : ঈদে সাজছে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার, থাকছে এলাহি ভোজ-অনুষ্ঠান