কলকাতা, 24 অক্টোবর : দাঁত বা মাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে বাসা বাঁধতে পারে জীবাণু । সেই জীবাণু পৌঁছে যেতে পারে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে । যার জেরে, গর্ভস্থ সন্তানের গঠনে সমস্যা দেখা দিতে পারে । কম ওজনের অথবা সময়ের আগে গর্ভস্থ সন্তানের জন্ম হতে পারে । এমনকী, মৃত্যুও হতে পারে । প্রেগনেন্সির সময় দাঁত-মাড়ির যত্ন না নিলে কেন এমন হতে পারে? এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হাসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, চিকিৎসক তীর্থঙ্কর দেবনাথ ।
প্রেগনেন্সি একটি সম্পূর্ণ বায়োলজিক, সায়েন্টিফিক সিস্টেম । সন্তান যখন গর্ভে আসে তখন থেকে ৯ মাস ধরে মায়ের পেটের মধ্যে বিভিন্ন রকম গতিপ্রকৃতি চলতে থাকে । এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে তার গঠন হয় । পরের তিন মাসে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ে । তারপরের তিন মাসের শেষে সন্তানের জন্ম হয় । প্রেগনেন্সির সময় এবং তার আগে মায়েদের যে পরিচর্যা করা হয়, সেই অ্যান্টিনেটাল কেয়ার ৷ সেখানে তার শারীরিক বিভিন্ন রকমের পরিচর্যা করা হয় । হর্মোনাল লেভেল দেখা হয় । রক্তাল্পতা, রক্তচাপ দেখা হয় । কিন্তু, দাঁতের পরিচর্যা কী সঠিকভাবে করা হয়? এ কথা জানিয়ে ডাক্তার আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের পেরিয়োডন্টোলজি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডাক্তার তীর্থঙ্কর দেবনাথ বলেন, " বিষয়টি সায়েন্টিস্টরা দেখছেন । অ্যান্টিনেটাল কেয়ারের মধ্যে এটা এখনও সে ভাবে আমাদের দেশে, আমাদের পরিবেশে আমরা করে থাকি না । কারণ আমাদের মধ্যে সেই সচেতনতা এখনও নেই । এটা সত্যি কথা, যদি তাঁর দাঁতে বা মাড়িতে কোনও রোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই কম ওজনের অথবা, সময়ের আগে সন্তানের জন্ম হতেই পারে ।"
এক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও তো অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে ?
তীর্থঙ্করবাবু বলেন, " অবশ্যই ।" তাঁর কথায়, "যে সময়ে সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা, তার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে যে সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হয়নি । যখন সম্পূর্ণ ডেভলপমেন্ট হবে না বা শিশুর শরীরের মধ্যে কোনও ইনফ্ল্যামেটরি মিডিয়েটর বা, যেগুলি দাঁতের রোগ থেকে শরীরের মধ্যে ফিটাসের মধ্যে যদি থাকে, তা হলে তার গঠনগত সমস্যা তো অবশ্যই থাকবে ।" তিনি বলেন, " প্রি-টার্ম খুব বিপজ্জনক বিষয় । কমপ্লিট টার্ম না হওয়ার আগেই যদি সন্তানের জন্ম হয়, তখন শিশুকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা নিতে হয় । SNCU, ICU সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে । এই অবস্থায় 100 শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে বাঁচানোর কথা বলা খুবই মুশকিল ।"
শুধুমাত্র দাঁতের যত্ন না নেওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়?
তীর্থঙ্করবাবু বলেন, "আমি তো বলব, প্রথম কথা সচেতনতা । আমরা নিজেরা সাধারণ অবস্থায় খাওয়ার পরে কতজন ব্রাশ করি? আমরা অনেকেই করি না । দু'বার হয়তো অনেকে করেন । তিনবার কেউ করেন কি না জানি না । কতক্ষণ ধরে ব্রাশ করতে হবে সেটা আমাদের অনেকেরই জানা নেই । একটি ব্রাশ ক'দিন ব্যবহার করব, সেটাও আমাদের জানা নেই । প্রেগনেন্সির সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলির সময় গাইনোকোলজিস্টের কাছে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন । কিন্তু এর সঙ্গে দাঁতের পরিচর্যা, মাড়ির পরিচর্যা, এ'টা কতজন করান, তা জানা নেই । কারণ এই সচেতনতা আমাদের মধ্যে আসেনি । এটা কিন্তু ধনী-গরিবের বিষয়ে নয় ৷ দাঁতের এই রোগগুলি সবার ক্ষেত্রেই সমান ।"