পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

নজির ! দেশ গড়তে এবারই প্রথম ভোটের লাইনে "মানসিক রোগীরা" - pavlov

মানসিক হাসপাতালের সুস্থ হয়ে ওঠা আবাসিকদের জন্য এ বছরই প্রথম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ৬৫ জন সুস্থ আবাসিকও এ বছর ভোট দিয়েছেন।

ভোটের লাইনে পাভলভের আবাসিকরা

By

Published : May 20, 2019, 4:44 AM IST

Updated : May 20, 2019, 1:30 PM IST

কলকাতা, ২০ মে: হাসপাতালের ওয়ার্ডেই তাঁদের মতামত গুরুত্ব পায় না । তবে, দেশে সরকার গড়ার জন্য তাঁরা মতামত দিলেন । তাঁরা, কলকাতা পাভলভ মেন্টাল হাসপাতালের ৫৪ জন আবাসিক‌ । না, আবাসিক হলেও তাঁদের কাউকেই এখন সেই অর্থে আর রোগী বলা যাবে না । কারণ, তাঁরা সকলেই সুস্থ । কিন্তু খাতায়-কলমে তাঁরা এখনও "মানসিক রোগী" । রবিবার সকালে এই হাসপাতালের কাছে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের একটি বুথে তাঁরা ভোট দিলেন । বুথে গেলেন নতুন পোশাক পরে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসে চেপে ।

মানসিক হাসপাতালের এমন সুস্থ হয়ে ওঠা আবাসিকদের জন্য এ বছরই প্রথম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ৬৫ জন সুস্থ আবাসিকও এ বছর ভোট দিয়েছেন। পাভলভ-এর যে ৫৪ জন এবার ভোট দিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ এবং ২৩ জন মহিলা । তাঁরা সবাই সুস্থ, কিন্তু লোকলজ্জা, আর্থিক বা অন্যান্য কারণে তাঁদের আর বাড়ি ফিরিয়ে নেয়নি পরিজনরা । তাই সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও বাধ্য হয়ে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে । যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁদের জীবিকার সংস্থানের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে ।

গোটা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন পাভলভ-এর সুপার গণেশ প্রসাদ ? তিনি বলেন, "বৃত্ত সম্পূর্ণ নয়, শুরু হল মাত্র। ওদের অধিকারগুলি অর্জনের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হল এই ভোটাধিকারের মাধ্যমে ।"
এরপর ? সুপার বলেন, "পরবর্তীতে বিধানসভা ভোটে যাতে এই ৫৪ জনের পাশাপাশি আরও অন্তত ২০০ জন ভোটাধিকার পেতে পারেন, তার চেষ্টা করব ।"

যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি পাভলভের সুস্থ আবাসিকদের জন্য কাজ করছে, তার সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার শুক্লা দাস বড়ুয়া বলেন, "ভোট দিয়ে সবে মতামত দিতে ওরা শুরু করলেন । যেখানে এই সব মানুষের মতামতের দাম হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরেও থাকে না, তাঁরা আজ দেশে সরকার গড়ার জন্য মতামত দিলেন । এটা অনেক বড় ব্যাপার। এটা অ্যাচিভমেন্ট ।"

তবে পাভলভের আবাসিকদের কাছে গতকালের ভোটদান প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি মসৃণ ছিল না । মে মাসের গরমে তাঁদের প্রায় ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। কেন ? কারণ EVM খারাপ হয়ে গিয়েছিল । শুক্লা দাস বলেন, "EVM খারাপ হওয়ায় ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন । অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিলেন । অথচ পাভলভের ওই আবাসিকরা সেই সময়টায় একবারের জন্যও মেজাজ হারাননি বা অধৈর্য্য হয়ে ওঠেননি । তবে তাঁরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিলেন । প্রশ্ন করছিলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটটা দিতে পারবেন কি না । " আগামী দিনে কলকাতার লুম্বিনী পার্ক মেন্টাল হাসপাতাল এবং পুরুলিয়া মেন্টাল হাসপাতালের সুস্থ আবাসিকরাও যাতে ভোটাধিকার পান, তার জন্য চেষ্টা চলবে বলে শুক্লা দাস জানান।

যাঁরা অটিস্টিক ডিজ়র্ডারে আক্রান্ত তাঁরাও যাতে ভোট দেওয়ার অধিকার পান, তার জন্য নির্বাচন কমিশন এ বার উদ্যোগ নিয়েছিল । যার ফলে বেলেঘাটার একটি বেসরকারি স্কুলের ২২ জন অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়র্ডার (ASD)-এ আক্রান্ত পড়ুয়া এবার ভোটাধিকার পেয়েছেন । তবে, তাদের মধ্যে একজন ভোট দিতে পারেননি কারণ 23 মার্চ তাঁর মৃত্যু হয় । অন্যদিকে, এই সাফল্য খুব সহজে আসেনি । স্কুলের ডিরেক্টর মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "খুব সহজে এই ভোটাধিকার মেলেনি । এটা দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফল ।"

Last Updated : May 20, 2019, 1:30 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details